ফেডারেশনের সভাপতি মনোনয়নে নেই নীতিমালা, ছিল দলীয় প্রাধান্য

ফেডারেশনের সভাপতি মনোনয়নে নেই নীতিমালা, ছিল দলীয় প্রাধান্য

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচনী ব্যবস্থা শুরু হয় ১৯৯৮ সাল থেকে। ফেডারেশনগুলোতে অন্য সকল পদে নির্বাচন হলেও সভাপতি পদে সরকার মনোনয়ন দিয়ে আসছে এখন পর্যন্ত। সরকার মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গই ওই পদে আসীন হন। এদিকে, আজ (মঙ্গলবার) এক প্রজ্ঞাপনে ৪২ ফেডারেশন/এসোসিয়েশনের সভাপতিকে অব্যাহতি প্রদান করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। একসঙ্গে এত সংখ্যক অব্যাহতি ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ এক ঘটনা।

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচনী ব্যবস্থা শুরু হয় ১৯৯৮ সাল থেকে। ফেডারেশনগুলোতে অন্য সকল পদে নির্বাচন হলেও সভাপতি পদে সরকার মনোনয়ন দিয়ে আসছে এখন পর্যন্ত। সরকার মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গই ওই পদে আসীন হন। এদিকে, আজ (মঙ্গলবার) এক প্রজ্ঞাপনে ৪২ ফেডারেশন/এসোসিয়েশনের সভাপতিকে অব্যাহতি প্রদান করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। একসঙ্গে এত সংখ্যক অব্যাহতি ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ এক ঘটনা।

বিগত ১৫ বছরে বিভিন্ন ফেডারেশনে সভাপতি মনোনীত হওয়া কম-বেশি অনেকেই দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ক্যারম ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন আরেক সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সভানেত্রী ছিলেন সংসদের সাবেক হুইপ মাহবুবা আরা বেগম গিনি, স্কোয়াশ ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন ফারুক খান, উশু ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ, টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন সাবেক নৌ পরিবহণ মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এভাবে অনেক ফেডারেশন-এসোসিয়েশনেই ছিলেন দলীয় কোটার লোকজন।

প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রী অনেকেই ফেডারেশনের সভাপতি হলেও ফেডারেশনের আর্থিক ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানে তেমন সচেষ্ট ছিলেন না। সাধারণ সম্পাদক ফেডারেশনের প্রয়োজনীয় কাজে সভাপতির দেখাও পেতেন না অনেক সময়। ফলে ফেডারেশনের কার্যক্রম ও আনুষ্ঠানিকতায় বেগ পেতে হয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।

সরাসরি দলীয় এমপি এবং মন্ত্রী ছাড়াও ডাকসাইটে আমলারাও ছিলেন সভাপতি। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন ছিলেন অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সভাপতি। তিনি সভাপতি হওয়ার পর অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন ৭ কোটি টাকার পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল। সারা দেশে স্কুল ও মাদ্রাসার অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় অবশ্য বয়স জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত ছিল। সাইক্লিং ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার। প্রভাবশালী এই আমলা সাইক্লিং ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে সাইক্লিংয়ের জন্য তেমন কিছুই করতে পারেননি। দাবা ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন সাবেক পুলিশের আইজিপি বেনজির আহমেদ। তিনিও দাবার জন্য বিশেষ কিছু করেননি। টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন। 

সভাপতিদের মধ্যে একটু ব্যতিক্রম ছিলেন জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশির আহমেদ। আশির দশক থেকে তিনি ঢাকা আবাহনীর সঙ্গে জড়িত। এক যুগেরও বেশি সময় ছিলেন জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের সভাপতি পদে। অন্য ফেডারেশনের সভাপতিরা যেখানে সময় দিতেন না, সেখানে তিনি ফেডারেশনের প্রায় প্রতিটি কাজ করতেন প্রত্যক্ষভাবে। বিদেশি কোচের বেতন, দলকে বিদেশে পাঠানো, অনুশীলন করা এসব ক্ষেত্রে সভাপতি হিসেবে অনেক সহায়তা করতেন এই ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া সংগঠক। 

৫ আগস্ট পরবর্তী ঘটনা প্রবাহে অনেক ফেডারেশনের সভাপতি আত্মগোপনে। অনেকে আবার নানা মামলায় পড়েছেন। ফলে ক্রীড়াঙ্গন পড়ে বেশ বড় সংকটে। সভাপতি মনোনয়নে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন মনে করেন কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ কামরুন নাহার ডানা, ‘অন্য পদের মতো সভাপতি পদটাও নির্বাচিত হওয়া এখন সময়ের দাবি। আর যদি মনোনয়ন দিতেই হয় তাহলে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন কাউকে দেওয়া উচিৎ। সরকার যেহেতু সভাপতি মনোনয়ন দেয়, ফলে একটা তদারকি থাকা উচিৎ সরকারের।’

সভাপতি মনোনয়নের ক্ষেত্রে তেমন কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না। ফেডারেশনগুলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনস্থ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব সাধারণত যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার। এখানে যোগদানের পর অতিরিক্ত সচিবে পদোন্নতি পান। অথচ সভাপতি পদে মনোনয়ন পাওয়া অনেকেই পূর্ণ সচিব। ফলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিবের ফেডারেশন সভাপতির তদারকির সেই অর্থে সুযোগ থাকে না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান হন মন্ত্রী। অনেক ফেডারেশনের সভাপতি পূর্ণ মন্ত্রী, আবার অনেকে প্রভাবশালী এমপি। ফলে ক্রীড়া মন্ত্রীরও বড় একটা সময় অনেক ফেডারেশনের সভাপতিকে সেভাবে তদারকি করা সম্ভব হয় না। 

এজেড/এএইচএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *