ফুটবলারদের বেতন বাকি, চলছে ‘বিলাসী’ এজিএম ও নির্বাচন!

ফুটবলারদের বেতন বাকি, চলছে ‘বিলাসী’ এজিএম ও নির্বাচন!

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল নেপালের কাঠমান্ডুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলছে। টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ আগামীকাল সেমিফাইনালে ভুটানের বিপক্ষে লড়বে। সাবিনারা দেশের ট্রফির জন্য খেললেও তাদের গত মাসের বেতন, বিগত চার ম্যাচ ফি বকেয়া। অর্থ সংকটে থাকা বাফুফে অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে করছে নির্বাচনী সাধারণ সভা।

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল নেপালের কাঠমান্ডুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলছে। টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ আগামীকাল সেমিফাইনালে ভুটানের বিপক্ষে লড়বে। সাবিনারা দেশের ট্রফির জন্য খেললেও তাদের গত মাসের বেতন, বিগত চার ম্যাচ ফি বকেয়া। অর্থ সংকটে থাকা বাফুফে অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে করছে নির্বাচনী সাধারণ সভা।

ফুটবল ফেডারেশনের মূল কাজ ফুটবলারদের স্বার্থ রক্ষা। সাফ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট হলেও নারীদের চাহিদা-বকেয়া রেখেই কাঠমান্ডু পাঠিয়েছে ফেডারেশন। অন্য দিকে নির্বাচন উপলক্ষ্যে কাউন্সিলরদের যথাসাধ্য মনোরঞ্জের চেষ্টা ফেডারেশন ও কয়েকজন কর্মকর্তার।

২০২৪ সালের বাফুফে নির্বাচনে কাউন্সিলর সংখ্যা ১৩৩। ভোটিং কাউন্সিলর ছাড়াও আরো কয়েকটি নন-ভোটিং ডেলিগেট রয়েছে। আজ এজিএমে অংশ নেয়া প্রত্যেকে দশ হাজার টাকা টিএ বাবদ সম্মানী গ্রহণ করবেন। গতকাল রাতে তাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আবাসনের ব্যবস্থাও করেছে ফেডারেশন। কাউন্সিলর ও নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের জন্য সাড়ে আট হাজার করে ১৩০ টি কক্ষে ব্যয় হচ্ছে ১১ লাখের উপর। আবাসন, টিএ মিলিয়ে একজন কাউন্সিলরের পেছনে বাফুফে প্রায় ২০ হাজার টাকার উপর ব্যয় করছে। অথচ নারী ফুটবলারদের ভুটান, চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে ম্যাচ ফি এবং গত মাসের বেতন প্রদান করতে পারেনি।

বাফুফে নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য মহিদুর রহমান মেরাজ স্পষ্টভাবেই বলেন, ‘গত কয়েক বছর বাফুফের মুখ রক্ষা করেছে নারী ফুটবলাররা। সাফের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের আগে তাদের সকল কিছু পূরণ করা উচিত ছিল। নারীদের চাহিদা ও অধিকার অপূর্ণ রেখে বিলাসী আয়োজনের যৌক্তিকতা দেখি না। ফুটবল ফেডারেশন ফুটবলারদের স্বার্থ অগ্রাধিকারভাবে দেখবে এটাই নতুন কমিটির কাছে প্রত্যাশা। আমরা এই বিষয়ে অনেকবারই ব্যর্থ হয়েছি।’

বাফুফে নির্বাচনে জেলা, ক্লাব, বিশ্বিবিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ড, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাউন্সিলর। দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলেও বাফুফে তাদের অধীভুক্ত সংস্থাগুলোকে সেভাবে সহায়তা করতে পারে না। প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা সেভাবে করতে না পারলেও নির্বাচনের আগে কাউন্সিলরের মনোরঞ্জনের সর্বোচ্চ চেষ্টাই করছেন বাফুফে কর্তারা। ফেডারেশন তহবিল থেকে আবাসন, টিএ প্রদান ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবেও অনেক কর্মকর্তা নানা রকম উপঢৌকন প্রদান করেন কাউন্সিলরদের। 

 

কয়েক মাস আগে বাফুফে আরেকটি সাধারণ সভা করেছিল। সেই সাধারণ সভার মূল লক্ষ্য ছিল নারী লিগে চার শীর্ষ দলের কাউন্সিলরশিপ। চারটি ভোটের জন্য বাফুফে সেই এজিএমে প্রায় ৩০ লাখ টাকার উপর খরচ করেছে। অথচ ফুটবলারদের দেনা-পাওনা নিষ্পত্তিতে তেমন উদ্যোগী ছিল না।

গত বছর বিশ্বকাপ প্রাক বাছাই পর্বে মালদ্বীপকে হারালে অর্ধ কোটি টাকার বোনাস ঘোষণা করেছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। পরবর্তীতে সেই ঘোষণা জরুরি বোর্ড সভা করে প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়া হয়। প্রায় এক বছর হলেও জামাল ভুইয়ারা সেই অর্থ পাননি।

ফেডারেশনের তহবিলের সংকট রয়েছে। বাফুফে নির্বাহী কমিটি কর্মকর্তাদের প্রায় সবাই ব্যক্তিগতভাবে বেশ স্বচ্ছল। বর্তমান কমিটির অনেকেই আবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য অনেক অর্থ ব্যয়ও করেছেন। তারা আগ্রহী হলে কাঠমান্ডু যাওয়ার আগে ১০-১২ লাখ টাকায় সাবিনাদের বকেয়া মেটাতে পারতেন। অথচ সাবিনারা ফাইনালে উঠলে বা চ্যাম্পিয়ন হলে এদের অনেকেই ছবি তুলতে খেলোয়াড়-কোচকে পেছনে ফেলবেন।

২০১২ সাল পর্যন্ত বাফুফে নির্বাচন আরামবাগস্থ ভবনেই হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ২০১৬ সাল থেকে হোটেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন। মনোনয়ন পত্র বিক্রি থেকে প্রায় অর্ধেক টাকা উঠলেও বাকি অর্থ ফেডারেশনের তহবিলের উপরই পড়ে। বাফুফে ছাড়া দেশের অন্য সকল ফেডারেশনের নির্বাচন ক্রীড়া স্থাপনাতেই হয়। ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে হলেও গত দুই মেয়াদে ক্রিকেট বোর্ডেই হচ্ছে। বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের নির্বাচন বিওএ ভবনেই হয়। অন্য সব ফেডারেশনের নির্বাচনে ভোটাভুটি হলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদেই অনুষ্ঠিত হয়।

এজেড/এইচজেএস 

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *