প্রেমিকা দেশে-প্রেমিক বিদেশে, ভিডিওকলে একসঙ্গে আত্মহত্যা

প্রেমিকা দেশে-প্রেমিক বিদেশে, ভিডিওকলে একসঙ্গে আত্মহত্যা

স্বামীর ঘরে পরকীয়া প্রেমিককে ভিডিওকলে রেখে আত্মহত্যা করেছেন খাদিজা আক্তার উর্মি (১৬) নামে এক নববধূ। একই সময় আত্মহত্যা করেছেন নববধূর পরকীয়া প্রেমিক ওমান প্রবাসী সাফায়াত হোসেন।

স্বামীর ঘরে পরকীয়া প্রেমিককে ভিডিওকলে রেখে আত্মহত্যা করেছেন খাদিজা আক্তার উর্মি (১৬) নামে এক নববধূ। একই সময় আত্মহত্যা করেছেন নববধূর পরকীয়া প্রেমিক ওমান প্রবাসী সাফায়াত হোসেন।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেতুয়ায় এ ঘটনা ঘটে। রোববার বিষয়টি জানাজানি হয়।

এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে নিহত গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ এবং মরদেহের পাশে থাকা তার লিখে রাখা চিরকুট উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহত গৃহবধূ খাদিজা আক্তার ঊর্মি (১৬) কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার মাটিয়ারা গ্রামের জামাল হোসেনের মেয়ে। তিনি চৌয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। প্রেমিক ওমান প্রবাসী সাফায়েত হোসেন একই উপজেলার পূর্ব জোড়কানন ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে।

রোববার রাতে লালমাই থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, গত ১৪ অক্টোবর লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের বেতুয়া (কৃষ্ণপুর) গ্রামের রং মিস্ত্রি আরিফুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় উর্মির। বিয়ের ১৩ দিনের মাথায় প্রবাসী প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে ঘরের সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করে সে। ওই সময় তার ওমানপ্রবাসী প্রেমিক সাফায়েত হোসেনও আত্মহত্যা করেন। তাদের দুজনের কাছ থেকেই চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। চিঠিতে একসঙ্গে দাফনের আকুতি জানিয়েছেন নববধূ।

উর্মি চিরকুটে লেখেন, চাইছিলাম দুজনে একসঙ্গে বেঁচে থাকতে। বাঁচতে দিল না। এটা সত্যি যে ও আমার প্রথম সাথী। ওরে আমি বিয়ে করছি। কিন্তু ওর জায়গা আমি অন্য কাউকে দিতে পারি না, পারবও না। তোমরা সুখে থেক। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।

উর্মি আরও লেখেন, ও বেঁচে থাকলেও তোমরা ওকে খুন করতে এবং ওর ফ্যামিলিকে জেলের ভাত খাওয়াইতে। তাই নিজেও দুনিয়া ছাড়লাম। ওরে আমার সঙ্গে নিয়ে গেলাম। আপনাদের কাছে একটা শেষ ইচ্ছা থাকবে। বাবা-মা ও ভাইবোনের কাছে একটা আবদার, দুনিয়াতে যেহেতু একসঙ্গে থাকতে দেও নাই, আমাদের দাফনটা যেন একসঙ্গে হয়। এক দিন আগে-পরে হলেও একই কবরস্থানে যেন দাফন করে। সে চাওয়াটা যেন পূরণ করেন আপনারা।

অপরদিকে প্রেমিক ওমান প্রবাসী সাফায়াতের মরদেহের পাশেও একটি চিরকুট উদ্ধার করেছে স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা। পরে সেটির ছবি তুলে সাফায়াতের পরিবারকে পাঠানো হয়।

তিনি মৃত্যুর আগে চিরকুটে লিখেছেন, শেষ ইচ্ছে পূরণ করার দায়িত্ব আপনাদের। আমার মৃত্যুর কারণ একমাত্র ওর ফ্যামিলি। আমার মোবাইলে সব রেকর্ড করা আছে। সবকিছু ভিডিও করা আছে। আমার মৃত্যুর জন্য কে কে দায়ী সবকিছু আমার মোবাইলে রেকর্ড করা আছে। আমার মোবাইল তার প্রমাণ। আমার মোবাইল চেক করলে সব পাবেন। রেকর্ড অপশনে আর গ্যালারিতে সব আছে। আমার ৮টা ভিডিও আছে। সবগুলো দেখবেন। লক খুলে রেকর্ড অপশনে ঢুকবেন, ইমোতে দুইটা আর বাকিগুলো গ্যালারিতে পাবেন। তার দেওয়া চিঠি আছে আরিফ নামের আইডিতে। আমাদের মৃত্যুর কারণ তারা। কোনোদিন ক্ষমা করব না।

উর্মির মা নুরুন্নাহার জানান, আমার মেয়ের সঙ্গে সাফায়াত নামে এক প্রবাসী ছেলের সম্পর্ক ছিল। গত ১৪ অক্টোবর সম্মতি নিয়েই মেয়েকে বিয়ে দেই। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে হাসি-খুশিতেই ছিল। শনিবার রাতে হঠাৎ শুনি ঊর্মি ও তার প্রেমিক সাফায়াত ভিডিওকলে আত্মহত্যা করেছে। মেয়ের স্বামীর বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। প্রবাসী ছেলেটাই আমার মেয়ের মাথা খারাপ করে দিয়েছে।

সাফায়াতের বাবা আবদুল খালেক বলেন, ‘এক বছর আগে ছেলেকে ওমান পাঠিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে ছেলে হঠাৎ কর্মস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। খবর নিয়ে শুনলাম ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে আমার ছেলের সঙ্গে ঊর্মি নামের এক মেয়ের পরিচয় হয়েছিল। হঠাৎ মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে অসুস্থ হয়ে গেছে। শনিবার রাতে সেই মেয়ে আমার ছেলের সঙ্গে ভিডিওকলে চিরকুট লিখে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে শুনেছি।’

বাল্যবিয়ের সঙ্গে জড়িত নিকাহ রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তির দাবি জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেসহ দুটি জীবনের আলো নিভে গেছে। তিনটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর জন্য মেয়ের বাল্যবিয়ে দায়ী।’

আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে মামলা করবেন বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের চিরকুট হাতে পেয়েছি। তা ছাড়া, মৃত্যুর আগে আমার ছেলের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মেয়ের মা।

লালমাই থানার ওসি মো. শাহ আলম বলেন, বিয়ের ১৩তম দিনে নববধূ প্রবাসী প্রেমিককে ভিডিওকলে রেখে ঘরের সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। শুনেছি, প্রবাসী প্রেমিকও একইভাবে আত্মহত্যা করেছে। শনিবার রাত ১১টার দিকে নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহের পাশে হাতে লেখা একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আত্মহত্যার আগে মেয়েটি তার মা-বাবার উদ্দেশে এটি লিখেছিল। এই ঘটনায় নববধূর ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।

আরিফ আজগর/এমজে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *