প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিলেন খাদ্য কর্মকর্তারা

প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিলেন খাদ্য কর্মকর্তারা

দেশের সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অবদান সত্ত্বেও বিসিএস খাদ্য (কারিগরি) ক্যাডার কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ নানা ধরনের বৈষম্য ও বিমাতাসুলভ আচরণের সম্মুখীন হচ্ছেন। এসব বৈষম্য দূর করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন খাদ্য কর্মকর্তারা।

দেশের সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অবদান সত্ত্বেও বিসিএস খাদ্য (কারিগরি) ক্যাডার কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ নানা ধরনের বৈষম্য ও বিমাতাসুলভ আচরণের সম্মুখীন হচ্ছেন। এসব বৈষম্য দূর করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন খাদ্য কর্মকর্তারা।

বুধবার (১৪ আগস্ট) খাদ্য কারিগরি গ্রুপের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপিটি খাদ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়।

ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিসিএস খাদ্য (কারিগরি) ক্যাডাররা খাদ্যের (সাধারণ) ক্যাডারদের দ্বারা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত। যে কারণে পদোন্নতি-পদায়নের ক্ষেত্রে বৈষম্য হয়েছে। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কারিগরি ক্যাডারদের কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এমনকি স্বীকৃতি ও সম্মানের ক্ষেত্রেও তারা বঞ্চিত। বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী ও প্রশাসনিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হওয়া কারণে সাধারণ গ্রুপের অনুজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মানটুকুও তারা পাচ্ছেন না।

এ স্মারকলিপিতে বেশ কিছু দাবি জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এতে বলা হয়েছে, জ্যেষ্ঠতা, ফিডার পদে কর্মকাল পূর্ণ হওয়া ও যোগ্যতা সাপেক্ষে মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং পরিচালক পদসমূহে কারিগরি ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া প্রশাসন বিভাগ, সংগ্রহ বিভাগ, চলাচল, সংরক্ষণ ও সাইলো বিভাগসহ কারিগরি স্থাপনাসমূহের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিভাগের বিভিন্ন স্তরে খাদ্য কর্মকর্তাগণের পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আধুনিক সাইলোসহ অন্যান্য কারিগরি স্থাপনাসমূহের নির্মাণকাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা সাপেক্ষে তদসংশ্লিষ্ট পদ সৃজনের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া রাইস সাইলোতে গম রাখার সিদ্ধান্ত বাতিলসহ খাদ্য সংগ্রহ, খাদ্য সংরক্ষণ এবং সাইলো সংক্রান্ত সকল নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাগণের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে।

কারিগরি গ্রুপের ক্যাডাররা বলছেন, নানা বৈষম্যের কারণে এখন পর্যন্ত খাদ্য সরবরাহ ও সংরক্ষণে যথাযথ উন্নয়ন হয়নি। নতুন নির্মিত কারিগরি স্থাপনাসমূহের পদ সৃজনে বিলম্ব হচ্ছে। পোস্তগোলা সরকারি আধুনিক ময়দা মিলটি ২০১৫ সালে উদ্বোধন করা হলেও সেটির এখনো পদ সৃজন সম্ভব হয়নি। এছাড়া আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত আধুনিক সাইলোর পদ সৃজনেও দেরি হচ্ছে।

এতে আরোও বলা হয়েছে, সাইলো ও সাইলোর কর্মচারীদের বিষয়ে সাধারণ ক্যাডার কর্মকর্তাদের অনীহা থাকার কারণে বর্তমানে সাইলোসমূহের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ পদ শূন্য হয়ে রয়েছে।

এছাড়া খাদ্যের প্রশাসন বিভাগে সাইলোর কোন কর্মকর্তা (প্রকৌশলী) না থাকার কারণে সাইলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি,পদোন্নতি ও পদায়ন এবং অন্যান্য প্রশাসনিক প্রস্তাব সাধারণ ক্যাডাররা তাদের ইচ্ছামতো নিয়ে থাকেন। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ছে।

খাদ্যের চলাচল, সংরক্ষণ ও সাইলো বিভাগে দীর্ঘ সময় ধরে যথাযথ সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এছাড়া বিদেশ হতে আমদানিকৃত গমের প্রায় শতভাগ কারিগরি গ্রুপের কর্মকর্তাগণ গ্রহণ ও প্রেরণ করলেও সংগ্রহ বিভাগেও কারিগরি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের নজির পাওয়া দুষ্কর। যে কারণে সাইলোর কার্যক্রমের সাথে প্রধান কার্যালয়ের সমন্বয় সাধনে অনেকাংশেই সমস্যা হচ্ছে।

এছাড়া সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ সমন্বয়ের অভাবে অনেকক্ষেত্রে আমদানি করা গমের জাহাজ জট লেগে যায়। আবার অনেকসময় চলাচলসূচি জারি অথবা চলাচল সূচির মেয়াদ বৃদ্ধি যথাসময়ে না করার কারণে কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, যা বড় ক্ষতি। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত গম ক্রয়ের সাথে কারিগরি গ্রুপের কোনোরূপ সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও প্রায়শই গমের গুণগতমান সম্পর্কে প্রাপক কেন্দ্র বা গ্রহণকারীর নিকট জবাবদিহি করতে হচ্ছে।

পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন পুরস্কার, প্রশিক্ষণ, বিদেশ প্রশিক্ষণ ইত্যাদিতে কারিগরি গ্রুপের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে কম। সমতা নেই গাড়িসহ অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও। রংপুর ও ময়মনসিংহ আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের (৫ম গ্রেডের পদ) কার্যালয়ে গাড়ি বরাদ্দ করা হলেও ৪র্থ গ্রেডের পদ প্রধান মিলার, পোস্তগোলা সরকারি আধুনিক ময়দা মিল, ময়মনসিংহ ও মধুপুর রাইস সাইলোতে অদ্যাবধি কোন গাড়ি বরাদ্দ নেই। এছাড়া, বিসিএস খাদ্য (সাধারণ) গ্রুপের ৬ষ্ঠ গ্রেডের পদ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের গাড়ির সংস্থান রাখা হলেও একই পদমর্যাদার রক্ষণ প্রকৌশলীদের জনা কোনও গাড়ির সংস্থান রাখা হয়নি।

এসআই/পিএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *