পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বৈষম্য অবসানে ১২ দফা দাবি

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বৈষম্য অবসানে ১২ দফা দাবি

বাংলাদেশ দলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্যমান সব ধরনের বৈষম্য অবসানে ১২ দফা দাবি জানিয়েছে দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) ও নাগরিক উদ্যোগ এবং আরও অন্যান্য নাগরিক সংগঠন। দীর্ঘদিন ধরে তারা বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে।

বাংলাদেশ দলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্যমান সব ধরনের বৈষম্য অবসানে ১২ দফা দাবি জানিয়েছে দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) ও নাগরিক উদ্যোগ এবং আরও অন্যান্য নাগরিক সংগঠন। দীর্ঘদিন ধরে তারা বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা মিনিটে ১৫ ঢাকার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিডিইআরএম’র সভাপতি উত্তম কুমার ভক্ত।

বিডিইআরএম সাধারণ সম্পাদক শিপন কুমার রবিদাসের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লুনা নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন কণা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী ও বিডিইআরএম’র প্রধান উপদেষ্টা মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা দীপায়ন খীসা, দলিত নারী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনি রানী দাস, বিডিইআরএম ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি গগণ লাল, বিডিইআরএম কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক তামান্না সিং বাড়াইক, বাংলাদেশ দলিত হিউম্যান রাইটস (বিডিএইচআর) এর সভাপতি বি. দয়ানন্দ, মিরনজিল্লা হরিজন কলোনীর উচ্ছেদের শিকার ভূক্তভোগী পূজা রানী দাস প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, জন্ম ও পেশাগত কারণে বাংলাদেশে প্রায় ৭৫ লাখ দলিত জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার। শিক্ষা, সামাজিক মর্যাদা, লিঙ্গ সমতা এবং সমঅধিকার ভোগের দিক দিয়ে এই জনগোষ্ঠী একেবারেই অনগ্রসর। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করা হলেও জাত-পাতভেদে বৈষম্যমূলক আচরণ বিদ্যমান আছে দেশের বিভিন্ন পেশাভিত্তিক ও ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর ওপর। সুনির্দিষ্ট কোনও বিধি-বিধান না থাকায় ভূক্তভোগী ব্যক্তির পক্ষে আদালতের আশ্রয় নেওয়া কঠিন। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও দলিতদের প্রতি নানাবিধ বৈষম্য বিরাজমান।

এরই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) ও নাগরিক উদ্যোগ এবং আরও অন্যান্য নাগরিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে। ‘বৈষম্য বিলোপ আইন-২০১৪’ শিরোনামে আইনটির খসড়া প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বিডিইআরএম ও নাগরিক উদ্যোগ শুরু থেকেই মানবাধিকার কমিশন এবং আইন কমিশনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছে। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বিগত এক দশকের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৫ এপ্রিল ২০২২-এ জাতীয় সংসদে ‘বৈষম্য বিরোধী বিল-২০২২’ উত্থাপন করা হয়। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে তৎকালীন সরকার সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিলেও অজ্ঞাত কারণবশতঃ বাংলাদেশে বৈষম্যের শিকার একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষিত এই আইনটি আলোর মুখ দেখেনি। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’ দ্রুত প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরি।

সমাবেশে উত্থাপিত দাবিগুলো হলো

১. ‘বৈষম্যবিরোধী বিল-২০২২’ সংশোধন করে অবিলম্বে পাস করতে হবে।

২. পুনর্বাসন ছাড়া দলিত কলোনি/ পল্লী উচ্ছেদ করা চলবে না।

৩. জনপরিসরে দলিতদের প্রবেশাধিকারে বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. দলিত জনগোষ্ঠীর সঠিক সংখ্যা নির্ধারণের জন্য জরুরিভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

৫. সব পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের চাকরি স্থায়িত্ব করাসহ সুনির্দিষ্ট পে-স্কেল দিতে হবে।

৬. ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’র আওতায় দলিতদের জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

৭. দলিতদের প্রতি বৈষম্য নিরসনে বিভিন্ন পর্যায়ে ‘সংরক্ষণ নীতি’ প্রবর্তন করতে হবে।

৮. পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পেশাগত স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসনে সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৯. ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনও নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না’- সংবিধানের এই ধারার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।

১০. ভূমিহীন দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাসজমির বন্দোবস্ত করতে হবে।

১১. সব পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য মহানগর ও পৌরসভায় আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১২. স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

এমএসএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *