পাহাড়ে কঠিন চীবরদান উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত

পাহাড়ে কঠিন চীবরদান উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত

নিরাপত্তাজনিত কারণে তিন পার্বত্য জেলায় কঠিন চীবরদান উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘসহ ১৫টি ভিক্ষু সংগঠন। এতে একাত্মতা প্রকাশ করেছে রাঙামাটি রাজবন বিহারও। 

নিরাপত্তাজনিত কারণে তিন পার্বত্য জেলায় কঠিন চীবরদান উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘসহ ১৫টি ভিক্ষু সংগঠন। এতে একাত্মতা প্রকাশ করেছে রাঙামাটি রাজবন বিহারও। 

রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে রাঙামাটি বনরূপা মৈত্রী বিহারে সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের। তিনি বলেন, সম্প্রতি খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বিহারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটসহ শতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় চারজন আদিবাসী ব্যক্তি নিহত হন। আহত হয়েছে অসংখ্য মানুষ। 

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর এভাবে বিনা বাধায় সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পবিত্র বিহারে আক্রমণ ও বুদ্ধমূর্তি ভেঙে ফেলার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এ ধরনের ঘটনা বারবার সংঘটিত হলেও প্রশাসনের আচরণ রহস্যজনক ও পক্ষপাতদুষ্ট। এই পর্যন্ত যতগুলো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে কোনোটার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি। পাহাড়ে চলমান সহিংসতা এবং তা থামানোর লক্ষ্যে প্রশাসনের তরফ থেকে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না দেখা এবং আইনশৃঙ্খলার চরম অব্যবস্থাপনা ও অবনতি দেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষুসংঘ বর্তমানে খুবই উদ্বিঘ্ন ও শঙ্কিত। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতা এবং প্রশাসনের ওপর আস্থাহীনতা বোধ করছি। এ পরিবেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষুসংঘ আসন্ন পবিত্র ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দানানুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে কোনো উৎসাহ বোধ না করায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শ্রদ্ধাবান দায়িক-দায়িকা ও পূজনীয় ভিক্ষুসংঘের মধ্যে আলোচনাক্রমে চলতি বছরের কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান না করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলার ১৫ টি বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এতে উপস্থিত ছিলেন বনভান্তে শিষ্য সংঘ বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ভদন্ত সৌরজগৎ মহাথের, পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদ বান্দরবানের ভদন্ত তেজপ্রিয় মহাথের, রাজ নিকার মার্গ চিৎমরম কাপ্তাইয়ের সহসভাপতি জ্ঞানবংশ মহাথের, ত্রিরত্ন ভিক্ষু অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের ভদন্ত আপ্রাশ্রী মহাথের, খাগড়াছড়ি শাসনা রক্ষিতা ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত সুমনা মহাথের সহ অন্যান্য ভিক্ষু সংঘের ভিক্ষু প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাঙামাটি রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসা বলেন, পূজনীয় ভিক্ষুরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার সঙ্গে আমরা একমত ও একাত্মতা ঘোষণা করছি। এই বছর রাজবন বিহারের অধীনে কোনো শাখা বিহারে কঠিন চীবর দানানুষ্ঠান হবে না।

প্রসঙ্গত, আশ্বিনী পূর্ণিমাকে প্রবারণা পূর্ণিমা বলা হয়। প্রবারণা পূর্ণিমার পর থেকে এক মাসের জন্য কঠিন চীবরদাননুষ্ঠান উদযাপন করা হয়। এক মাস ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় দুইশ বিহারে ধারাবাহিকভাবে কঠিন চীবরদাননুষ্ঠান উদযাপন করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা, সুতা থেকে চীবর (ভিক্ষুদের পরিধেয় কাপড়) তৈরি করা হয়। এই অনুষ্ঠান ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক মাস ধরে উৎসব পালিত হয়। আশ্বিনী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলে।

মিশু মল্লিক/আরকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *