বাড়ির আঙিনা, বিভিন্ন বাণিজ্যিক খামারসহ ফল বাগানের পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত জায়গায় প্রথমবারের মতো আদা চাষ শুরু করছেন শরীয়তপুরের কৃষকরা। পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত এসব জায়গায় প্রতি বস্তায় ৫০ গ্রামের একটি আদার বীজ রোপণ করে ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে।
বাড়ির আঙিনা, বিভিন্ন বাণিজ্যিক খামারসহ ফল বাগানের পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত জায়গায় প্রথমবারের মতো আদা চাষ শুরু করছেন শরীয়তপুরের কৃষকরা। পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত এসব জায়গায় প্রতি বস্তায় ৫০ গ্রামের একটি আদার বীজ রোপণ করে ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, কৃষি বিভাগের পরামর্শে আদা চাষ করে কৃষকরা প্রথম বছরেই তাদের পরিবারের চাহিদা পূরণের পরেও কিছু বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করতে পারবেন।
সম্প্রতি শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গাসহ বাণিজ্যিক খামার ও বাগানে বস্তায় আদা চাষ করতে দেখা গেছে।
আদা চাষি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আদা চাষের জন্য আলোছায়া ঘেরা উঁচু জমির প্রয়োজন হয়। এছাড়া ফলন পেতে ৯ থেকে ১০ মাস সময় লাগায় আগে জেলার কৃষকদের মধ্যে আদা চাষের প্রচলন ছিল না। সাধারণত বাড়ির আঙিনার পরিত্যক্ত জায়গা বা বাণিজ্যিক খামারে চাষ করা আম, পেঁপে, ড্রাগনসহ অন্যান্য ফল লাগালে এসব গাছের নিচের জমি আলো-ছায়ায় ঘেরা থাকে। কৃষি বিভাগ উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সেসব আলো-ছায়ায় ঘেরা পরিত্যক্ত জমিতে বস্তায় আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে। জেলার কৃষকরা এ বছরই প্রথমবারের মতো বাড়ির আঙিনার পরিত্যক্ত জায়গাসহ বাণিজ্যিক খামারের আলো-ছায়ায় ঘেরা জমিতে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন।
প্রথম বছরেই জেলায় ৪২ হাজার ১৭৫ টি বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ২৭ হাজার ৫০০ বস্তা ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে ১৪ হাজার ৬৭৫ বস্তা আদা চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে নড়িয়া উপজেলায় ১১ হাজার ৬৮০ বস্তা, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ১০ হাজার ৩০০, জাজিরায় ৮ হাজার ২০০, সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৩১৫ ও গোসাইরহাটে ৫ হাজার ৬৮০ বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। এসব বস্তা থেকে এ বছর প্রায় ৩৬ টন আদার ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের মহিষকান্দি গ্রামের সমন্বিত কৃষি খামারি গোলাম হোসেন বাবুল বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আমি সমন্বিত কৃষি খামার শুরু করেছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এ বছরই প্রথমবার নিজ উদ্যোগে আম বাগান, পেয়ারা বাগান ও মালটা বাগানে বস্তায় আদা চাষ করেছি। এখানে আগে অন্য কোনো ফসল করতাম না। পরীক্ষামূলকভাবে ১৫০ বস্তা আদার চাষ করেছি। আদার অবস্থা বেশ ভালো। ফলন লাভজনক হলে আগামীতে পুরো বাগানে আদা চাষ করব।
সদর উপজেলার তুলাসার ইউনিয়নের লতাবাগ গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় আগে আদা চাষের প্রচলন ছিল না। কৃষি অফিসের প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর প্রদর্শনীর মাধ্যমে ৩০০ বস্তা ও নিজ উদ্যোগে ২৫০ বস্তায় আদা চাষ করেছি। আমার বাড়ির আঙ্গিনার ফল বাগান ও একটু ছায়াযুক্ত জায়গায় আদা চাষ করেছি। যে-সব জমিতে আগে কোনো ফসল হতো না, সেসব জমিতেই আদা চাষ করেছি। বস্তা প্রতি আমার খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আশা করছি প্রতি বস্তায় ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত ফলন পাব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শরীয়তপুরের উপ-পরিচালক মো. মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, শরীয়তপুরে আদা আবাদের প্রচলন ছিল না। এ বছরই মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আমরা আদা আবাদ শুরু করেছি। কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার, ও বস্তা দিয়েছি। এই পদ্ধতিতে আদা চাষ সম্প্রসারণে আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি। কৃষকরাও বেশ আগ্রহী। বস্তায় আদা চাষ করলে একটি বস্তায় ৫০ গ্রামের একটি আদা রোপণ করে ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে। এতে যেমন কৃষকের পারিবারিক চাহিদা পূরণ হবে, তেমনি বাড়তি আয়ও হবে। আশা করছি আগামীতে শরীয়তপুর জেলায় বস্তায় আদা চাষ অনেক বৃদ্ধি পাবে।
সাইফ রুদাদ/এফআরএস