নেচে-গেয়ে পিটিয়ে যুবক হত্যা : এবার স্ত্রীকেও মেরে ফেলার হুমকি

নেচে-গেয়ে পিটিয়ে যুবক হত্যা : এবার স্ত্রীকেও মেরে ফেলার হুমকি

চট্টগ্রামে নেচে গেয়ে উল্লাস করতে করতে যুবক শাহাদাত হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা নিয়ে চলছে তোলপাড়। এরমধ্যে হত্যার শিকার শাহাদাতের স্ত্রী শারমিন আক্তার দিয়েছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

চট্টগ্রামে নেচে গেয়ে উল্লাস করতে করতে যুবক শাহাদাত হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা নিয়ে চলছে তোলপাড়। এরমধ্যে হত্যার শিকার শাহাদাতের স্ত্রী শারমিন আক্তার দিয়েছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

শারমিন আক্তার বলেন, সাগর নামে শাহাদাতের পুরোনো এক বন্ধু আছে। তাকে কিছু টাকা ধার দিয়েছিলেন শাহাদাত। সেদিন সাগরের ফোন পেয়ে পাওনা টাকা নেওয়ার জন্যই দুপুরে বের হয়েছিলেন শাহাদাত। এর পর থেকে মুঠোফোন বন্ধ। পরদিন ফেসবুকে তার লাশ উদ্ধারের ভিডিও দেখে জানতে পারি শাহাদাত মারা গেছেন।

তিনি বলেন, সাগর আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। আমি বর্তমানে স্বামীর বাসায় থাকছি না। আমি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই সময় স্বামীকে হারালাম। আমার স্বামীকে যারা মারল, আমি তাদের বিচার চাই।

গত শনিবার শাহাদাতকে পিটিয়ে মারার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শাহাদাতকে উড়ালসড়কের নিচে দুটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। এ সময় গান গেয়ে তাকে মারধর করছেন একদল তরুণ। ভিডিওটিতে মারধরের শিকার ব্যক্তি যে শাহাদাত, সেটি শনিবার রাতে পুলিশকে নিশ্চিত করেছেন শারমিন আক্তার। শাহাদাত ছিলেন ফলমণ্ডি এলাকার ভ্যানচালক।

এদিকে এই ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে নগর পুলিশের একাধিক টিম।

এ বিষয়ে নগর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই আমাদের নজরে এসেছে। যদিও এ ঘটনায় আগেই হত্যা মামলা হয়েছিল। এখন আসামিদের কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। মূলত ঘটনাটি ঘটেছিল ১৩ আগস্ট। ওইসময় থানায় একেবারে পুলিশ ছিল না বললেই চলে। এটির সুযোগ নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী কয়েকজন এ হামলায় অংশ নেয়।

কারা জড়িত জানতে চাইলে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে না। কেউ হয়তো ভুল বুঝিয়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারীদের হাতে ভুক্তভোগীকে তুলে দিয়েছে। যাহোক এটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। নগর পুলিশ খুনিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নেমেছে। আশা করি শিগগিরই সুসংবাদ মিলবে।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, খুঁটির সঙ্গে বেঁধে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর শাহাদাতের স্ত্রী সেটি দেখে নিশ্চিত করেন যে, মারধরের শিকার ব্যক্তিটিই তার স্বামী। যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একদল যুবক মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা গানটির সঙ্গে নেচে নেচে উল্লাস করছেন। একই সঙ্গে দুই হাত খুঁটিতে বেধে এক যুবককে পেটাচ্ছেন। মার খেয়ে ভুক্তভোগী যুবকের মাথা ঢলে পড়ে এবং একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুক্তভোগী যুবকের নাম শাহাদাত হোসেন (২৪)। তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া  ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভুঁইয়া বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। তবে পরিবার নিয়ে শাহাদাত নগরের কোতোয়ালি থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে থাকতেন।

গত ১৪ আগস্ট নগরের প্রবর্তক মোড়ের পাশের একটি বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনে থেকে পুলিশ শাহাদাতের মরদেহটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট ভুক্তভোগী শাহাদাতের চাচা মোহাম্মদ হারুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহার উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ আগস্ট দুপুর দুইটার দিকে কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সারাদিন পর তার স্ত্রী শারমিন সন্ধ্যার দিকে ফোন করলে তিনি জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় যাবেন। রাত বেশি হওয়ার পরেও শাহাদাত বাসায় না ফেরায় তাকে ফোন করেন শারমিন। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এর পরদিন শাহাদাতের চাচা সকাল ৯টার দিকে ফেসবুকে দেখেন, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে তার ভাতিজার মরদেহ পড়ে আছে।

এর আগে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম (এফ এইচ) হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেন একদল শিক্ষার্থী। একই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে কয়েক দফা মারধর করে হত্যা করা হয়। এ দুটি ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আরএমএন/এমএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *