নেই স্থায়ী বাঁধ, ২ মাসে দেড়শ পরিবারের বাড়িঘর যমুনা নদীতে বিলীন

নেই স্থায়ী বাঁধ, ২ মাসে দেড়শ পরিবারের বাড়িঘর যমুনা নদীতে বিলীন

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় যমুনা নদীর বাম তীরে ভাঙনের ফলে গত দুই মাসে প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া, নদীতে বিলীন হয়েছে এই এলাকার কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে এই এলাকার দেড়শ পরিবার। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেললেও এসব এলাকার নদী ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না। একদিকে জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও অন্যদিকে আবার ভাঙন শুরু হচ্ছে। তাই স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধে সরকারের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় যমুনা নদীর বাম তীরে ভাঙনের ফলে গত দুই মাসে প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া, নদীতে বিলীন হয়েছে এই এলাকার কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে এই এলাকার দেড়শ পরিবার। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেললেও এসব এলাকার নদী ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না। একদিকে জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও অন্যদিকে আবার ভাঙন শুরু হচ্ছে। তাই স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধে সরকারের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।

তারা জানান, গত কয়েক মাস আগে মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের যমুনা নদীর তীরবর্তী পাকরুল এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এতে করে এই এলাকার তিন কিলোমিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পাকরুল এলাকায় তীব্র ভাঙনের কারণে নিঃস্ব হয়েছে নদী পড়ের দেড়শ পরিবারের এক হাজারের বেশি মানুষ। নদীগর্ভে চলে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি, কাঠের বাগান, রাস্তা, মসজিদ, মাদরাসা, দোকানসহ অনেক ঘরবাড়ি। এসব এলাকার মানুষ ভিটেমাটি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তার পাশে, ফসলি জমিতে, খোলা মাঠে ও অন্যের বসতবাড়িতে। আবার অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে।

২৮ বার ভাঙনের শিকার হয়ে স্থানীয় আশ্রয়ন প্রকল্পে পরিবার নিয়ে উঠেছেন পাকরুল এলাকার ৬৫ বয়সী ফকির আলী। তিনি বলেন, এইবার নিয়ে আমার জীবনে মোট ২৮ বার ভাঙনের শিকার হয়েছি। আমার জমি, ঘরবাড়ি আর সহায় সম্পদ সব এই নদী নিছে। আমার ৩০ বিঘা জমি নদীতে বিলীন। নদী ভাঙতে ভাঙতে এইবার সরকারি ঘরে (আশ্রয়ন কেন্দ্র) উঠেছি। এখানেও অনেক মানুষের গাদাগাদি। ঘরগুলো অনেক পুরোনো। বৃষ্টি এলে পানি পড়ে, জীবনের নিরাপত্তা নেই। পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। বয়স বাড়ার কারণে এখন আর আগের মতো পরিশ্রম করতে পারি না। নতুন করে জমি কিনে বাড়ি করার সাধ্যও নেই। যমুনা নদী ভাঙন যাতে বন্ধ হয়, এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

সম্প্রতি নদী ভাঙনের গতি বেড়েছে, স্থানীয় ভাষায় যাকে ‘কারেন্ট চাপা’ বলে। ‘কারেন্ট চাপা’র কারণে প্রতিদিন ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর তীর থেকে মাত্র দুইশ মিটার দুরে পাকরুল কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্থানীয় আশ্রয়ন কেন্দ্র। এগুলোও এখন ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এসবও নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

পাকরুল এলাকার কলেজ পড়ুয়া আবু সাইম বলেন, রাস্তাঘাট সব নদীর মধ্যে চলে গেছে, এখন চলাফেরা করতে অনেক কষ্ট হয়, ভাঙনের কারণে ঠিকমতো রাতে ঘুমাতে পারি না। ভাঙনের চিন্তায় বারবার ঘুম ভেঙে যায়। আমাদের আর সাহায্যের দরকার নেই, আমরা স্থায়ী বাঁধ চাই।

নদী ভাঙনের শিকার নজরুল ইসলাম বলেন, আমাার জন্মের পর থেকে নদী ভাঙন দেখছি। গত দুই মাসে আমাদের দেড়শ পরিবারের বাড়িঘর নদীতে গেছে। আমাদের ও অনেক মানুষের জমাজমি ও ঘরবাড়ি যা ছিল, সব নদীতে চলে গেছে। বর্তমানে অন্যের বাড়িতে আছি। জমি কেনার মতো পথ খোলা নেই, খাওয়ার মতো বা রোজগার করার মতোও কোনো উপায় নেই। সরকার নদীতে জিও ব্যাগ দিচ্ছে, এগুলো দিয়ে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। সরকারের কাছে দাবি জানাই, স্থায়ীভাবে যাতে বাঁধ নির্মাণ করে আমাদের নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করে।

জামালপর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মাদারগঞ্জের পাকরুল এলাকায় যমুনা নদীর বাম তীরে ভাঙন শুরু হয়েছে। সেখানে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি সেখানে ১৫০০ মিটার অংশে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে, যা পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার পর বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকার নদী ভাঙন অনেকটাই লাঘব হবে। 

মুত্তাছিম বিল্লাহ/কেএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *