নোবলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দায়িত্বের দুই মাস পূর্ণ করতে চলেছে। এই সময়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে অন্তর্বর্তী সরকারের বড় অর্জন হিসেবে মনে করা হয়, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ড. ইউনূসের বিরল বৈঠককে। কেননা, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের টানাপোড়ন ছাপিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস মিলেছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে।
নোবলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দায়িত্বের দুই মাস পূর্ণ করতে চলেছে। এই সময়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে অন্তর্বর্তী সরকারের বড় অর্জন হিসেবে মনে করা হয়, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ড. ইউনূসের বিরল বৈঠককে। কেননা, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের টানাপোড়ন ছাপিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস মিলেছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে।
তবে এই সময়ে নিকট প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে যে টানাপোড়ন তৈরি হয়েছে সেটি কমিয়ে সুসম্পর্কে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সুসম্পর্ক দৃশ্যমান হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে প্রথম বিদেশ সফর শুরু করেন ড. ইউনূস। গত তিন দশকে জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের কোনো শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বৈঠক হয়নি। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনায় দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের তেমন নজির নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমন বিরল ঘটনা ঘটেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ড. ইউনূসকে কাছে পেয়ে বুকে টেনে নেন। হাতে হাত রেখে বলেন, বাংলাদেশের সংস্কারের যে লক্ষ্য নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ঠিক করেছেন, তাকে বাস্তবে রূপ দিতে সব ধরনের সহযোগিতা করবে হোয়াইট হাউস।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে মাত্র চারদিনের সফরে বাংলাদেশের সরকার প্রধান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সাইডলাইনে ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নেন।
ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের একপ্রকার সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক সফরে সেই সংকট অনেকটাই কেটেছে। বিশেষ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সংকট ছিল, সেটা কাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বৈঠকের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়নি সফরসূচিতে মিল না থাকায়। তবে নিউইয়র্কে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৈঠকে তারা সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান দিল্লির সঙ্গে সম্পর্কে ঢাকার যে টানাপোড়ন চলছে সেটি দৃশ্যমান। উভয়পক্ষের স্বার্থে এই টানাপোড়ন কমিয়ে আনতে হবে। সেজন্য দুই দেশের মধ্যে যত বেশি আলাপ-আলোচনার সুযোগ থাকবে টানাপোড়ন ততোই প্রশমিত হতে থাকবে।
আনোয়ার ইব্রাহিমের ঢাকা সফর
অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের আমন্ত্রণে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) প্রায় পাঁচ ঘণ্টার জন্য ঢাকা সফর করে গেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। আনোয়ার ইব্রাহিমকে ঢাকার বিমানবন্দরে স্বাগত জানান ড. ইউনূস। শুধু তাই নয়, বিমানবন্দর থেকে একই গাড়িতে করে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এসে ইউনূস-আনোয়ার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পাবেন বলে আশ্বাস দেন আনোয়ার।
প্রসঙ্গত, চার মাস আগে ভিসা পাওয়া এবং সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও মালয়েশিয়ার বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে (৩১ মে ২০২৪) দেশটিতে যেতে পারেননি বাংলাদেশের ১৭ হাজারের বেশি কর্মী।
সংক্ষিপ্ত সফরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ড. ইউনূস আনোয়ার ইব্রাহিমকে বিমানবন্দরে গিয়ে বিদায় জানান।
প্রায় ১১ বছর পর মালয়েশিয়ার কোনো প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করলেন এবং এটি ছিল অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাকায় কোনো দেশের শীর্ষ নেতার প্রথম সফর। সর্বশেষ ২০১৩ সালের নভেম্বরে সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছিলেন মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক।
গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশি নাগরিকদের গুমের ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল। তবে সেটি সেই অর্থে আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত ২৯ আগস্ট গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। ঢাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. ইউনূস এই সনদে স্বাক্ষর করেন।
আইসিপিপিইডি জাতিসংঘের আওতাধীন একমাত্র আন্তর্জাতিক কনভেনশন যা এনফোর্স ডিসএপিয়ান্সকে কেন্দ্র করে গৃহীত হয়েছে, যার লক্ষ্য হলো জোরপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম প্রতিরোধ করা, ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। এছাড়া, গুরুতর এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। ৩০ আগস্ট জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক গুম দিবস পালনের আগের দিন আইসিপিপিইডিতে বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করে।
নতুন পররাষ্ট্র সচিব নিয়োগ ও যুক্তরাষ্ট্র সফর
সরকারের পালাবদলের পর প্রশাসনে রদবদলের অংশ হিসেবে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। সেপ্টেম্বরের শুরুতে মাসুদ বিন মোমেনের উত্তরসূরি করা হয় চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনকে।
পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম অ্যাসাইমেন্টে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন জসীম উদ্দিন। সপ্তাহখানেকের সফরে তিনি নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন যাবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্র সচিব নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবেন। পরে তিনি তিন দিনের সফরে (১০-১২ অক্টোবর) নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন যাবেন। ওয়াশিংটন সফরের সময় পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত আন্ডার সেক্রেটারি জন বাস, বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক লিন্ডসে ফোর্ড, সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চের বৈঠকের কথা রয়েছে।
এছাড়া বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে জসীম উদ্দিনের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়াশিংটনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা, রোহিঙ্গা, প্রতিরক্ষা, সন্ত্রাসবাদ দমন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার দেশের সংস্কারের কথা বলছেন। আর বাংলাদেশের সংস্কারে সহযোগিতা করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। বৈঠকে সংস্কার ইস্যু বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, নিউইয়র্ক সফরকালে পররাষ্ট্র সচিব জাতিসংঘে বিভিন্ন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা এবং একাধিক কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
বিদেশে দূত নিয়োগে সরকারের চ্যালেঞ্জ
সরকারের পালাবদলের পর প্রশাসনে রদবদলের অংশ হিসেবে গত ১৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, জার্মানি, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের চুক্তি বাতিল করেছে সরকার। এছাড়া মালদ্বীপে প্রেষণে নিযুক্ত হাইকমিশনারকে দেশে ফিরতে বলা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, জার্মানি, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার এরইমধ্যে তাদের নিজ নিজ স্টেশন ছেড়ে গেছেন।
পরবর্তীতে ২৯ সেপ্টেম্বর এক দাপ্তরিক আদেশে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমকে অবিলম্বে ঢাকায় ফিরে আসতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
লন্ডনের পর গত ১ অক্টোবর ভারত, নিউইয়র্কে স্থায়ী মিশন, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালে দায়িত্ব পালনরত ওই পাঁচ রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনারকে বর্তমান দায়িত্ব ছেড়ে ‘অনতিবিলম্বে’ ঢাকায় ফেরার নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পেশাদার ওই পাঁচ কূটনীতিকের আগামী ডিসেম্বরে অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত নেই, সেসব দেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে কিছু দেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে, পেশাদার কূটনীতিক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর গত ২৫ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। নিয়োগের ১০ দিন পর রোববার (৬ অক্টোবর) সেই নিয়োগ বাতিল করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় কোনো কূটনীতিককে নিয়োগ দিয়ে তা বাতিল করল। ওই বছর পেশাদার কূটনীতিক সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকারকে ব্রাজিলে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া, রোববার (৬ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্সের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম পদত্যাগ করেছেন। খুরশেদ আলমের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল।
লেবাননে থাকা বাংলাদেশিদের প্রত্যাবর্তন চ্যালেঞ্জ
লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলা দিনকে দিন বাড়ছে। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে দেশটি অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। লেবানন থেকে বাংলাদেশিদের ফেরাতে বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবানন থেকে বাংলাদেশিদের দেশে ফেরানো নিয়ে কাজ করছে সরকার। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে সরকার।
বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, হাজার খানেকের বেশি বাংলাদেশি দেশে ফেরত আসতে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। দূতাবাসের হটলাইন, হেল্পলাইন ছাড়াও লেবাননে থাকা বাংলাদেশি কমিউনিটির মাধ্যমে এসব বাংলাদেশির দেশে ফেরার বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। লেবাননের পরিস্থিতি যত খারাপ হতে থাকবে দেশে আসতে চাওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা তত বাড়তে থাকবে বলে ধারণা করছে দূতাবাস সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, লেবানন থেকে বাংলাদেশিদের দেশে ফেরানো নিয়ে আমরা আইওএমের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। এখনও আইওএম বসেনি আমাদের সঙ্গে। আমরা আইওএমের সঙ্গে বৈঠক করেছি, চিঠি দিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশিদের ফেরানোর বিষয়ে তাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা ছিল ওটা। এখন পরিস্থিতি কিন্তু খারাপের দিকে যাচ্ছে। আইওএম কাজ শুরু করেনি। আইওএমের সঙ্গে বসে আমরা সবকিছু চূড়ান্ত করব। যদি জাহাজে করে আমরা আনতে চাই সেক্ষেত্রে তারা আমাদের কীভাবে সহযোগিতা করতে পারবে সেটা জানতে হবে। অর্থনৈতিক বিষয় আছে। আইওএমের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত ঠিক করবে সরকার।
এই কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে থাকা রাষ্ট্রদূতসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে পররাষ্ট্র সচিব পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকতে বলেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে বৈরুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে স্টাডি করতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশিদের আনতে গেলে কোন রুটে আনা যেতে পারে। রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে স্টাডি করে সদর দপ্তরে জানাবে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবাননের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেক বাংলাদেশি কর্মী লেবানন ছেড়ে গেছে। দেশটির অর্থনৈতিক সংকটের আগে সেখানে দেড় লাখ বাংলাদেশির বসবাস ছিল। বর্তমানে ৭০-৮০ হাজার বাংলাদেশি লেবাননে বসবাস করছেস। এদের বেশিরভাগই আবার অবৈধ কর্মী।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে লেবাননে কর্মী ভিসায় যান ২ হাজার ৫৯৪ জন। চলতি বছর প্রথম সাত মাসে গেছেন ৪ হাজার ২২৫ জন।
রোহিঙ্গা অনুপ্রেবেশ ভাবাচ্ছে সরকারকে
গত সাত বছর থেকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে ঝামেলায় আছে বাংলাদেশ। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে না পারার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার সীমান্তে চলমান অস্থিরতা এবং নতুন রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বাংলাদেশের। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর মিয়ানমার থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে মাস দেড়েক আগে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন করে ৮ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা বলা হয়েছে। তবে পরবর্তীতেও বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের তথ্য এসেছে দেশের গণমাধ্যমে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ছাড়াও মিয়ানমারের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সেপ্টেম্বরে নেইম্যান-লুদের ঢাকা সফর
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়া পর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে ঢাকা সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে দেশটির একটি প্রতিনিধি দল। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফর করে মার্কিন প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধি দলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ছিলেন। প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
এনআই/পিএইচ