নারী শিশু-কিশোর কেউ শেখ হাসিনার গণহত্যা থেকে রেহাই পায়নি

নারী শিশু-কিশোর কেউ শেখ হাসিনার গণহত্যা থেকে রেহাই পায়নি

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, শেখ হাসিনার স্পষ্ট নির্দেশ ছিল যেকোনো কিছুর বিনিময়ে তার ক্ষমতা ধরে রাখা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর কেউ শেখ হাসিনার নির্দেশিত গণহত্যা থেকে রেহাই পায়নি। এমনকি গর্ভবতী মায়েদেরও পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, শেখ হাসিনার স্পষ্ট নির্দেশ ছিল যেকোনো কিছুর বিনিময়ে তার ক্ষমতা ধরে রাখা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর কেউ শেখ হাসিনার নির্দেশিত গণহত্যা থেকে রেহাই পায়নি। এমনকি গর্ভবতী মায়েদেরও পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শনিরআখড়ায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গোলাম পরওয়ার বলেন, শেখ হাসিনা নির্দেশনা ছিল, লাখ-লাখ মানুষকে গুলি করে হত্যা করতে হলে করো, তবুও তাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। কিন্তু শেখ হাসিনা জানে না, দেশের মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে দেশ পরিচালনা করা যায় না। তাই ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ৩৬ দিনের মধ্যে শেখ হাসিনা শুধু ক্ষমতাই ছাড়তে বাধ্য হয়নি, দেশ ছেড়েও পালিয়ে গেছে।

জামায়াত-শিবিরের কোনো নেতাকর্মী কেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি– এমন প্রশ্ন তুলে নিজেই উত্তর দেন জামায়াতের সেক্রেটারি। বলেন, কারণ জামায়াত নেতাকর্মীরা এক আল্লাহকে ভয় করে। কোনো অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপস করেনি। জনগণের সম্পদ লুট করেনি। বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেনি। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জনগণের সম্পদকে আমানত হিসেবে বিশ্বাস করে। সেজন্য জামায়াতের নেতারা দুর্নীতি করে না, চুরি করে না। জনগণের খেদমতে জীবন উৎসর্গ করে দেয়, দিয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও দেবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা ছাত্র-জনতার বিপ্লব নস্যাৎ করতে কখনো জুডিশিয়াল ক্যু, কখনো আনসার ক্যু, কখনো প্রশাসনিক ক্যু চালাতে চেয়েছে। আবার হিন্দু সম্প্রদায়কে মাঠে নামিয়ে দিতে চেয়েছে তাদের মন্দির ভাঙচুর হবে, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ হবে বলে মিথ্যা ভয় লাগিয়ে। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের জানমালের নিরাপত্তায় আমিরে জামায়াতের নির্দেশের সারা দেশে জামায়াতের কর্মীরা নিয়োজিত ছিল। আগামীতেও জামায়াতের কর্মীরা তাদের পাশে থাকবে।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের তালিকা নিয়ে নয়ছয় হলে দায় নিতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে।

তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, শহীদ ও আহত পরিবারের তালিকা নির্ভুলভাবে দ্রুত প্রকাশ করুন। ভুক্তভোগী পরিবারকে সার্বিক সহায়তা করুন।

পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের এ নেতা বলেন, অনেক ভুক্তভোগী পরিবার জানাচ্ছে পুলিশ মামলা নিতে চাইছে না। আর পরাজিত শক্তির পক্ষে কাজ করবেন না। জনগণের জন্য কাজ করুন।

সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর মতো ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যাদের রক্তের ওপর ক্ষমতায় বসে আছেন সবার আগে তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ান।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার নির্দেশের পুলিশের গুলিতে সৈকত চন্দ্র দে মারা যান। তার স্ত্রী স্বপ্না রানী দে বলেন, আমরা হিন্দু সম্প্রদায় মনে করতাম জামায়াতে ইসলামী কেবল মুসলমানদের সংগঠন। আমাদের বোঝানো হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের বিতাড়িত করে দেবে। হিন্দুদের সম্পদ লুটপাট করে নেবে। কিন্তু আমার স্বামী শ্রী সৈকত চন্দ্র দে পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার পর থেকে জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতারা আমার পরিবারের সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়েছে। আজ আমাকে দুই লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা করতে এখানে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনা হয়েছে।

এসময় তিনি খুনি হাসিনাকে ধরে এনে গণহত্যার হুকুমের আসামি হিসেবে বিচারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কাছে দাবি জানান।

শহীদ সাবিক আল হাসানের বাবা মুর্তজা আলম বলেন, ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী পকেট গেটে তার ছেলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়। এরপর থেকে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতিটি দিন তাদের কাছে হাজার বছরের মতো মনে হয়েছে। বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ও পুলিশ তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। একপর্যায়ে তার অপর ছেলে বারবার বাবাকে অনুরোধ করে বাসা ছেড়ে পালিয়ে যেতে।

জেইউ/এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *