দেড় মাসেও চালু হয়নি শেরপুর জেলা কারাগার, দুই-তৃতীয়াংশ আসামি পলাতক

দেড় মাসেও চালু হয়নি শেরপুর জেলা কারাগার, দুই-তৃতীয়াংশ আসামি পলাতক

শেরপুর জেলা কারাগার চালু হয়নি দেড় মাসেও। গত ৫ আগস্ট হামলা-ভাঙচুরের পর থেকে আজও কারাগারটি খালি পড়ে আছে। হামলার কারণে শেরপুর জেলা কারাগারে থাকা ৫১৮ জন হাজতির সবাই পালিয়ে যায়। এই দেড় মাসে দুই-তৃতীয়াংশ আসামি এখনও পলাতক রয়েছে। 

শেরপুর জেলা কারাগার চালু হয়নি দেড় মাসেও। গত ৫ আগস্ট হামলা-ভাঙচুরের পর থেকে আজও কারাগারটি খালি পড়ে আছে। হামলার কারণে শেরপুর জেলা কারাগারে থাকা ৫১৮ জন হাজতির সবাই পালিয়ে যায়। এই দেড় মাসে দুই-তৃতীয়াংশ আসামি এখনও পলাতক রয়েছে। 

হামলা-ভাঙচুরের কারণে শেরপুর জেলা কারাগারটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কারাগারে সব কিছু পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার কয়েক দিন পর কারাগারের জেলার লিপি রানি সাহা বাদী হয়ে ১০-১২ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে শেরপুর সদর থানায় মামলা করেন।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরপরই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার জনতা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শেরপুর জেলা কারাগারের সামনে জড়ো হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে কারাগার ত্যাগ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব কারারক্ষী। এ অবস্থায় প্রায় ৮/১০ হাজার মানুষ লাঠিসোটা, রামদা, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তারা কারাগারের প্রধান ফটকটি ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ৫১৮ জন বন্দিকে বের করে আনে। পালিয়ে যাওয়া কারাবন্দিদের মধ্যে ১০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং ৭০/৮০ জন বিভিন্ন মেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ছিল। আর অন্যরা বিচারাধীন ও তদন্তাধীন বিভিন্ন মামলার আসামি।

হামলাকারীরা কারাগারের ৬১টি অস্ত্রের মধ্যে ৯টি অস্ত্র, চায়নিজ রাইফেলের ৮৬৪টি গুলি, শটগানের ৩৩৬টি গুলি ও কারাবন্দীদের মজুত করা খাদ্যসামগ্রী, কারাগারের বিভিন্ন মালামালসহ টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে যান। সেই সঙ্গে কারাগারের মূল্যবান রেকর্ডপত্র, গাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সহায়তায় কয়েকটি অস্ত্র রক্ষা করা সম্ভব হয়। দুর্বৃত্তরা কারাগারের প্রধান ফটক, কারারক্ষীদের ব্যারাক, কারাগারের সুপার ও জেলারের অফিস কক্ষ ও বাসভবনের সকল আসবাবপত্র, রান্নাঘর, ক্যান্টিন পুড়িয়ে দেয়। ভাঙচুর করা হয়েছে আসামিদের ওয়ার্ড, কনডেম সেল ও কারা হাসপাতালে। ফলে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় জেলা কারাগার। 

এদিকে ঘটনার কয়েকদিন পর কারাগারের জেলার লিপি রাণী সাহা বাদী হয়ে ১০/১২ হাজার অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

অন্যদিকে জেলা কারাগারের লুণ্ঠিত অস্ত্রসহ মালামাল ফেরত বা অবস্থান জানানোর জন্য স্থানীয় ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর তরফ থেকে মাইকিং করা হয়। এরপর লুণ্ঠিত ৯টি অস্ত্রসহ বেশ কিছু মালামাল ফেরত পাওয়া যায়। কারাগার সচলকরণে শুরু হয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা। এতে কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে আদালত ও পুলিশী কার্যক্রম। কারাগার সচল না থাকায় পুলিশ ও র‌্যাবের ধৃত আসামি পাঠাতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে। অনেক মামলার আসামি ভিন্ন জেলার কারাগারে যাওয়ার আশঙ্কায় আদালতে হাজির হচ্ছেন না। আবার আদালতেও জামিনঅযোগ্য ধারার মামলায় শুনানি নেওয়া হচ্ছে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারাগারের প্রধান ফটকের পাশে সিসিটিভি মনিটরিং রুমে বসে আপাতত কোনোরকমে কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে মেরামতের কোনো কাজ এখনো শুরু হয়নি।

ঘটনার বিষয়ে জেলা কারাগারের সুপার মো. হুমায়ুন কবির খান বলেন, কারাগারে হামলার পরপরই কারা অধিদপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক কারাগার দ্রুত চালুর করার বিষয়ে স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগকে জানানো হয়েছে। তারা খুব শিগগিরই মেরামত-সংস্কারের কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে লুট হওয়া কিছু গুলি পাওয়া না গেলেও ৯টি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আর পলাতক হাজতি-কয়েদিদের মধ্যে আটকসহ ১২৫ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৯৯ জন জামিন পেলেও ২৬ জনকে পাশের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার মাহবুবুর রহমান বলেন, কারাগার মেরামত ও সংস্কার কাজের টেন্ডার আহ্বান করতে নানা প্রক্রিয়ার কারণে কিছুটা সময় নিতে হয়েছে। এখন প্রক্রিয়াগুলো প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে মেরামতের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে কারাগারকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে সংস্কার কাজ শেষ করে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে জেলা কারাগার চালু করা সম্ভব হবে।

নাইমুর রহমান তালুকদার/আরকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *