তথ্যে প্রবেশাধিকার ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে এমজেএফের সভা

তথ্যে প্রবেশাধিকার ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে এমজেএফের সভা

‘গঠনমূলক নাগরিক সম্পৃক্ততা সমুন্নয়ন: তথ্যে প্রবেশাধিকার ও সামাজিক জবাবদিহি চর্চা’ শীর্ষক এক সভা আয়োজন করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।

‘গঠনমূলক নাগরিক সম্পৃক্ততা সমুন্নয়ন: তথ্যে প্রবেশাধিকার ও সামাজিক জবাবদিহি চর্চা’ শীর্ষক এক সভা আয়োজন করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এমজেএফ টাওয়ারের আলোক ট্রেনিং সেন্টারে এশিয়া ডেমোক্রেসি রিসার্চ নেটওয়ার্কের (এডিআরএন) অর্থায়নে এ সভা আয়োজিত হয়। 

সভায় অতিথির বক্তব্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংবিধানিক সংস্কার দুটোই খুব জরুরি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যখন রাষ্ট্র ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তখনই সেগুলো অকার্যকর হয়ে যায়। শাসন ব্যবস্থায় নাগরিক সম্পৃক্ততার জন্য শক্তিশালী বিরোধী দল থাকাও অনেক জরুরি। কোনো একক দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কখনোই কোনো সংবিধানের নৈতিক রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতে পারে না।

সাংবাদিকদের মধ্যে তথ্য চাওয়ার প্রবণতা বেশ কম উল্লেখ করে গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের (বাংলা) সম্পাদক শেখ সাবিহা আলম জানান, তথ্য অধিকার আইনের অধীনে তথ্যের জন্য আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের কিছুটা নির্দোষ তথ্য দিতেই বেশি আগ্রহী থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের কথা বলে তথ্য দিতে চায় না। 

তথ্যে জনগণের প্রবেশাধিকার ও সামাজিক জবাবদিহি চর্চার ওপর আলোকপাত করে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এমজেএফের সিনিয়র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মো জিয়াউল করিম। তিনি কার্যকরী নাগরিক সম্পৃক্ততার জন্য সামাজিক জবাবদিহিতার বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন সামাজিক নিরীক্ষা, সিটিজেন চার্টার, সিটিজেন রিপোর্ট কার্ড, ওয়ার্ড সভা ও গণ শুনানির ওপর জোর দেয়ার আহ্বান জানান। 

জাতীয় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের (এনআইএলজি) সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন নাহার বলেন, স্থানীয় সরকারের সকল স্তরে তথ্য অধিকার ও জেন্ডার বিষয়ে প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নাগরিক সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্থানীয় সরকার আইনের আলোকে কীভাবে আরও জোরদার করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা আছে।

যে কোনো সামাজিক অস্থিরতার সময় ইন্টারনেট বন্ধ রাখলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে বলে মনে করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্রতীর উপ-পরিচালক জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে যে জাতিগত অস্থিরতা দেখা দিয়েছে এবং সে সময় যে গুজব ছড়িয়েছে তার পেছনেও ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দায়ী।

রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের উপ-পরিচালক রুহি নাজ বলেন, রাষ্ট্রীয় বড় বড় সিদ্ধান্তে নাগরিকদের অন্তর্ভুক্তি না থাকায় মেগা প্রকল্পগুলোতে স্বেচ্ছাচারিতা লক্ষ্য করা যায়। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কেনো এবং কীভাবে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে তা কোনো শাসনামলেই নাগরিক হিসেবে প্রশ্ন করা যায়নি। এগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য তথ্য অধিকার আইন খুবই উপযোগী একটি মাধ্যম।

আর্টিকেল ১৯-এর আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই আলম মনে করেন তথ্য অধিকার বাস্তবায়নে তরুণদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, তরুণরা সামাজিক চাহিদা নিরূপণ করে তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন করতে পারে। এই আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়। সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য অনলাইন প্রকিওরমেন্ট ব্যবস্থা চালু করলেও ৬০ শতাংশেরও বেশি কাজ একক দরপত্রের মাধ্যমে হচ্ছে। আরেকটি অপ্রত্যাশিত বিষয় হলো, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য অধিকার চর্চায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক পিছিয়ে।

অনুষ্ঠানে সভাপ্রধানের বক্তব্যে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, যে কোনো শাসন ব্যবস্থায় তরুণদের নাগরিক সম্পৃক্ততা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন। নাগরিক সম্পৃক্ততার মাধ্যে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।

কেএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *