কলেজ শাখা ছাত্রদল নেতাদের হাতে ঢাকা কলেজের অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার মাহমুদ লাঞ্ছিতের ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
কলেজ শাখা ছাত্রদল নেতাদের হাতে ঢাকা কলেজের অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার মাহমুদ লাঞ্ছিতের ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) কলেজের মূল ফটকের সামনে স্টুডেন্ট রাইটস ওয়াচ ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কলেজের স্নাতক-স্নাতকোত্তর শ্রেণীর বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশেষ রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে সম্মানিত শিক্ষকদের হেনস্তাকারীদের স্থান ক্যাম্পাসে হবে না। সম্প্রতি কলেজ অডিটোরিয়ামে ছাত্রাবাসের সিট বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের নেতারা শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছেন। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন এমন ধৃষ্টতা না দেখাতে পারে সেজন্য এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
মামুন শেখ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, যাদের ছাত্রত্ব নেই তারা ক্যাম্পাসে এসে নিজেদের ছাত্রদল নেতা পরিচয় দেন। তারা ছাত্রাবাসে সিট পাওয়ার জন্য শিক্ষকের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। এমনকি শিক্ষককে মারতে উদ্যত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বেশ কিছু দাবিও তুলে ধরা হয় মানববন্ধন থেকে। সেগুলো হচ্ছে—
১. অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
২. অছাত্র অথবা বহিরাগতদের দ্বারা লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা।
৩. রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব বিস্তার বন্ধ করা।
৪. সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ সকল ধরনের অপরাজনীতি রোধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া।
৫. এবং অনতিবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
এর আগে, রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ছাত্রাবাসে চাহিদা অনুযায়ী তালিকার ভিত্তিতে সিট না দেওয়ায় ডেকে এনে ঢাকা কলেজ অধ্যাপক ও ছাত্রাবাস তত্ত্বাবধায়কর হেনস্থার অভিযোগ উঠে কলেজ ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে। হেনস্তার শিকার ওই শিক্ষকের নাম অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদ। তিনি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক এবং দক্ষিণ ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কলেজের শহীদ আ. ন. ম. নজীব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে কলেজ শাখা ছাত্রদলের কিছু পদধারী নেতারা শিক্ষকের উপর চড়াও হচ্ছেন। তারা বারবার শিক্ষকের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন এবং হাত ধরে টানাটানি করছেন। একপর্যায়ে ওই শিক্ষক ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে চাইলে কয়েকজনকে তেড়ে যেতেও দেখা গেছে। আর এসব ঘটনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সিরাজ উদ্দিন বাবু ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাজ্জাদ হোসেন জেমিন।
ভিডিও ফুটেজে আরও দেখা যায়, ঘটনাস্থলে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক এবং ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের বর্তমান সহ-সাধারণ সম্পাদক মেসকাত হোসেন তনয়, সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সংসদের বর্তমান সহ-সাধারণ সম্পাদক সজীব বিশ্বাসও মারমুখি আচরণ করছেন।
পরে ওইদিন রাতেই অভিযুক্তদের ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার ও পদ স্থগিত করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক মেসকাত হোসেন তনয় এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক সজীব বিশ্বাসের সব সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হয়।
আর ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের অনুমোদনে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে, ঢাকা কলেজ শাখার সহ-সভাপতি সিরাজ উদ্দিন বাবু ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন জেমিনকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আরএইচটি/এমজে