ডাকাত সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

ডাকাত সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

বরিশালে ডাকাত সন্দেহে রাসিব আকন (২০) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ভোর ৫টার দিকে নগরীর চৌমাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

বরিশালে ডাকাত সন্দেহে রাসিব আকন (২০) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ভোর ৫টার দিকে নগরীর চৌমাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত রাসিব আকন বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের ছোপখালী ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইউনুস আকনের ছেলে। তার মরদেহ বর্তমানে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে।

জানা গেছে, ইউনুস আকন ও তার ছেলে রাসিব আকন হবিগঞ্জে থেকে টিউবয়েল বসানো, মেরামতের কাজ করতেন। সোমবার (১২ আগস্ট) হবিগঞ্জ থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে প্রথমে ঢাকায় আসেন রাসিব। সেখান থেকে বরিশাল নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে এসে নামেন রাত ৩টার দিকে। নথুল্লাবাদে কিছু সময় থেকে ভোর পৌনে ৫টার দিকে রুপাতলী বাস টার্মিনালের উদ্দেশ্যে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে ওঠেন। ভোর ৫টার দিকে ইজিবাইকটি বরিশালের চৌমাথা অতিক্রমকালে শিক্ষার্থীরা আটকে তল্লাশি চালায়। এ সময় রাসিবের ব্যাগে জামাকাপড়, পানির বোতল ও একটি ছুরি পাওয়া যায়। 

রাসিবের স্বজনরা দাবি করেছেন, রাসিব চাপকলের মিস্ত্রিদের টিমে থাকতো ও রান্নাবান্নার কাজ করতো।

নিহত রাসিবের মা শিউলী বেগম বলেন, আমার ছেলে বিড়ি-সিগারেট কিছুই খায় না। ওর বয়স ২০ বছর। ও বাবার সাথে সিলেটে থাকতো। ও চাপকলের কাজ পারতো। ভোররাতে আমাকে কল দিয়েছে। আমি অনেক লোকের কথার মধ্যে ওর কোনো কথা শুনতে পারিনি। ভোরে খবর পাই আমার ছেলেকে থানায় নিয়েছে। শুনেছি ছাত্ররা গাড়ি থেকে নামিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আমার বাবাতো (রাসিব) আমারে কিছুই বলতে পারে নাই। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে এসে দেখি কোতয়ালি থানার মেঝেতে শুইয়ে রেখেছে। সেখানেই মারা গেছে আমার বাজান। সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, আমি বাড়িতে একা থাকি। আমার জন্য একটা টর্চ লাইট কিনে এনেছিল। সেই লাইটও নিয়ে গেছে মারধরকারীরা। লাইটটিও নেই ব্যাগে।

নিহতের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধে একটা মামলার হাজিরার তারিখ ছিল। রাসিব সেই তারিখে হাজিরা দিতে বাড়ি আসতেছিল। গতকাল রাত ৮টার দিকে বরগুনার গাড়িতেই উঠেছিল। ছাত্ররা আমাকে বলেছে বরগুনার সেই গাড়িতে যাত্রী না থাকায় নথুল্লাবাদে নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে অটো গাড়িতে করে রূপাতলী যাচ্ছিল। রূপাতলী থেকে বরগুনার গাড়ি ছাড়ে। ছাত্ররা গাড়ি থেকে নামিয়ে ব্যাগ তল্লাশি করে একটি ছুরি পায়। রাসিব ছাত্রদের বলেছে, সে রান্নাবান্নার কাজ করে। রান্নাবান্নার কাজের ছুরি। চেকপোস্টের ছাত্ররা রাসিবকে বেধড়ক মারধর করে। আমাদের একটি নম্বর থেকে ৭টা ৪৫ মিনিটে একটা কল দিয়ে একজনে বলে, আপনার ভাইকে সন্দেহমূলক আটকেছি। আপনারা আসেন। আমরা বরগুনা থেকে এসে ওই নম্বরে কল দিলে জানায় চৌমাথায় যেতে। আমরা চৌমাথায় গিয়ে না পেয়ে পুনরায় কল করলে কোতয়ালি থানায় যেতে বলে। আমরা থানায় গিয়ে দেখি ফ্লোরে ফেলে রাখা। 

রাজ্জাক বলেন, ধরে নিলাম রাসিবের কাছে ছুরি বা অস্ত্র পাওয়া গেছে। কিন্তু তাকে কেন মারা হলো। তাকে পুলিশের হাতে দিত, সেনাবাহিনীর হাতে দিতো। আইনের হাতে সোপর্দ করতো। আইন কেন ছাত্ররা হাতে নিল। 

রাসিবকে থানা ও হাসপাতালে নেওয়া সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের ডিগ্রির শিক্ষার্থী শেখ সাফায়েত বলেন, পুলিশ-ট্রাফিক না থাকায় আমরা সড়কে কিছুদিন ধরেই দায়িত্ব পালন করছিলাম। ভোররাতে তাকে (রাসিব) তল্লাশি করা হলে ব্যাগের মধ্যে একটি রামদা পাওয়া যায়। ফজরের নামাজের ২০/৩০ মিনিট পর এটা দেখে অনেক লোক জড়ো হয়ে যায়। মানুষ রামদা দেখে বলে, ডাকাত মারেন না কেন। এরপর হট্টোগোলের সৃষ্টি হয় এবং তাকে মারধর করে। পাশেই একটি বাস থেকে আমরা মাদকদ্রব্য উদ্ধার করি। এজন্য ওই ছেলেকে নিয়ে থানায় পৌঁছাতে দেরি হয়। থানায় নিয়ে তার সাথে যা পেয়েছি, ৫/৬টি লাইটার সেগুলো জমা দেই থানায়। ওসি আমাদের বলেছেন, আহতকে হাসপাতালে নিয়ে ৫/১০ মিনিটের যে চিকিৎসা দরকার তা দিতে। এরপর আমরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।

তিনি বলেন, যে মারা গেছে তার ভিডিও বক্তব্য আমরা নিয়েছি। সে স্বীকার করেছে যে সে ঝামেলা করে এসেছে। এছাড়া তার সাথে থাকা অস্ত্রে আমরা রক্ত লেগে আছে দেখেছি।

পিটিয়ে কাউকে হত্যা করা ঠিক কিনা- প্রশ্ন করা হলে এই শিক্ষার্থী বলেন, আপনারা জানেন ডাকাতের একটা প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এই কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে মানুষজন-উৎসুক জনতা এটা করেছে। 

কোতয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাঈনুল ইসলাম বলেন, বেলা ১১টার দিকে ছাত্ররা ডাকাত সন্দেহে মারধর করে একজনকে থানায় নিয়ে আসে। সিনিয়র স্যাররা আহতকে আগে চিকিৎসার জন্য পাঠান। হাসপাতালে চিকিৎসকরা ইসিজি করে জানালো সে (রাসিব) আর বেঁচে নেই। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। নিহতের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করছি। তবে নিহতের পরিবার যদি মামলা করতে চায় তারা করতে পারে। মামলা হলে আমরা তদন্ত করে দেখবো।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, ভোর ৫টার দিকে চৌমাথা এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে তাদের কোনো চেকপোস্ট ছিল না।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *