টুর্কের ঢাকা সফরে অগ্রাধিকার পাবে নির্বাচন-মানবাধিকার-নিরাপত্তা

টুর্কের ঢাকা সফরে অগ্রাধিকার পাবে নির্বাচন-মানবাধিকার-নিরাপত্তা

দুই দিনের সফরে আজ (সোমবার) রাতে ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। তার সফরে নির্বাচন, মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা ইস্যু অগ্রাধিকার পাবে।

দুই দিনের সফরে আজ (সোমবার) রাতে ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। তার সফরে নির্বাচন, মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা ইস্যু অগ্রাধিকার পাবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জা‌নিয়েছেন, সফরে ফলকার টুর্ক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৬/৭ জন উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, সেনাবাহিনী প্রধান, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের প্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে মানবাধিকার, নিরাপত্তা এবং নির্বাচন প্রাধান্য পাবে।

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের পট পরিবর্তনের পর জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের এই সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরে মানবাধিকার, নিরাপত্তা এবং নির্বাচন ইস্যু গুরুত্ব পাবে। মানবাধিকার ইস্যুর মধ্যে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত রয়েছে। নিরাপত্তা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কারে জাতিসংঘের কাছে সহযোগিতা চায় অন্তর্বর্তী সরকার। জাতিসংঘও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু কোন ফরমেটে, কীভাবে সহযোগিতা হতে পারে, তা টুর্কের ঢাকা সফরের আলোচনার টেবিলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এগুলো গুরুত্ব সহকারে উভয়পক্ষের অবস্থান উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। 

ঢাকা জাতিসংঘের কাছে নগদ সহায়তা চায়। সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা চায় যে, এই নগদ সহায়তা কোন কোন খাতে এবং কীভাবে খরচ করা হবে, সে বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা। শুধু তাই নয়, সেই সুপারিশমালা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের ঐকমত্য থাকতে হবে।

ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, টুর্কের এই সফরে অনেক বিষয়ে আলাপ হবে, তবে সফর শেষে আলো‌চিত বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খোলা নিয়েও ফলকার টুর্কের সফরে আলোচনা হতে পারে।

‌এদিকে সোমবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় অবস্থিত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক দুই দিনের (২৯-৩০ অক্টোবর) জন্য বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এই সফরে তিনি অন্যদের মধ্যে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করবেন।

সফরকালে হাইকমিশনার বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, সেনাপ্রধান এবং বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।

এছাড়া টুর্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভাষণ দেবেন, যেখানে তিনি সাম্প্রতিক প্রতিবাদ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং বাংলাদেশে কূটনৈতিক মিশনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরও বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান টুর্কের মধ্যে গত ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ পুনর্গঠন নিয়ে প্রথম আলোচনা হয়। গত জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা (মূলত ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সময়কাল পর্যন্ত সব মানবাধিকার লঙ্ঘন) ঘটেছে, সেসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। 

প্রধান উপদেষ্টা গত ১৪ আগস্ট টুর্কের সঙ্গে আলোচনায় গত জুলাই-আগস্টে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে সহযোগিতা চান। তখনই জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত তদন্ত প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করার বার্তা দেন। এর পরপরই জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান রোরি মুনগোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রাথমিক দল গত ২২ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা সফর করেন। ওই দলটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে মূলত মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে অগ্রাধিকারমূলক কাজ কী হবে তা ঠিক করেন।

এরপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মূল তথ্যানুসন্ধান দল ঢাকায় আসেন। ওই সময়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গত ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সময়কালের মধ্যে বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্য দেওয়ার জন্য সব ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানান।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন মূলত গত জুলাই ও আগস্টে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ ১৫ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের (এর মধ্যে রয়েছে–মানবতাবিরোধী অপরাধ, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যা, রাজনৈতিক ও বেসরকারি পক্ষগুলোর মাধ্যমে হত্যা ও নির্যাতন, জনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার নামে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, নিবর্তনমূলক আটক ও গ্রেপ্তার, গুম, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা, সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি) ঘটনা তদন্ত করছে। ঢাকা সফরে এসে টুর্ক জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের কর্মকাণ্ড সরেজমিন পরিদর্শন করবেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করবেন। 

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয়ের তথ‌্য বলছে, আগামী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সাবেক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট ২০২২ সালে বাংলাদেশ সফর করে‌ছিলেন।

এনআই/এমএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *