পৃথিবীর জীবন, কবর, কেয়ামত, পুলসিরাত পার হয়ে একজন মুমিন যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেখানে সে তার নিজের জন্য বিশাল রাজ্য ও রাজত্ব দেখতে পাবে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তুমি যখন সেখানে দেখবে, দেখবে ভোগ-বিলাসের উপকরণ এবং বিশাল রাজ্য।’ (সূরা দাহর, আয়াত : ২০)
পৃথিবীর জীবন, কবর, কেয়ামত, পুলসিরাত পার হয়ে একজন মুমিন যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেখানে সে তার নিজের জন্য বিশাল রাজ্য ও রাজত্ব দেখতে পাবে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তুমি যখন সেখানে দেখবে, দেখবে ভোগ-বিলাসের উপকরণ এবং বিশাল রাজ্য।’ (সূরা দাহর, আয়াত : ২০)
হাদিস থেকে জানা যায়, যাকে সর্বনিম্ন মর্যাদার বিবেচনায় জান্নাত দেওয়া হবে, সেটিও ১০ দুনিয়ার সমান হবে। (মুসলিম, হাদিস, ১৮৬)
এতো বিশাল আয়তনের জান্নাতে একজন মুমিনের ৬০ হাত দৈর্ঘের দেহ নিয়ে প্রবেশ করবেন বলে হাদিসের মাধ্যমে জানা যায়।
এক হাদিসে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে তার যথাযোগ্য গঠনে সৃষ্টি করেছেন, তার উচ্চতা ছিল ৬০ হাত। তিনি তাকে সৃষ্টি করে বলেন, তুমি যাও। উপবিষ্ট ফেরেশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগসহ শুনবে তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়। কারণ এটাই হবে তোমার ও তোমার বংশধরের সম্ভাষণ (তাহিয়্যা)।
তাই তিনি গিয়ে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম।’ তারা জবাবে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ।’ তারা বাড়িয়ে বলেন, ‘ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বাক্যটি। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা আদম আলাইহিস সালামের আকৃতিবিশিষ্ট হবে। তার পর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। (বুখারি, হাদিস, ৬২২৭)
জান্নাতে একজন মানুষের সাজ-সজ্জা কেমন হবে এ নিয়ে কোরআন হাদিসে একাধিক বর্ণনা রয়েছে। জান্নাতিরা সেখানে স্বর্ণ-কঙ্কণ ও মুক্তা ব্যবহার করবে। তাদের জন্য রেশমের পোশাক থাকবে।
জান্নাতের বাসিন্দাদেরকে স্বর্ণকঙ্কন ও মুক্তা দ্বারা অলঙ্কৃত করা হবে এবং তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ
অর্থাৎ, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেথায়। তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণ-কঙ্কণ ও মুক্তা দ্বারা এবং সেথায় তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের। (সূরা হজ, আয়াত : ২৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ وَلُؤْلُؤًا ۖ وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
অর্থাৎ, তারা প্রবেশ করবে স্থায়ী জান্নাতে, যেখানে তাদের স্বর্ণ-নির্মিত কঙ্কণ ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং যেখানে তাদের পোশাকপরিচ্ছদ হবে রেশমের। (সূরা ফাতির, আয়াত : ৩৩)।
জান্নাতিদের পোশাক নিয়ে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
أُولَٰئِكَ لَهُمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ وَيَلْبَسُونَ ثِيَابًا خُضْرًا مِّن سُندُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ
অর্থাৎ, তাদেরই জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত; যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেথায় তাদেরকে স্বর্ণ-কঙ্কণে অলঙ্কৃত করা হবে, তারা পরিধান করবে সূক্ষ্ম ও স্থূল রেশমের সবুজ বস্ত্র। (কাহফ, আয়াত : ৩১)।
অপর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,
عَالِيَهُمْ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضْرٌ وَإِسْتَبْرَقٌ ۖ وَحُلُّوا أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٍ
অর্থাৎ, তাদের দেহে হবে মিহি সবুজ এবং মোটা রেশমী কাপড়, তারা অলক্ত হবে রৌপ্য-নির্মিত কনে। (সূরা দাহর, আয়াত : ২১)
এক হাদিসে শহীদ জান্নাতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, শহীদ জান্নাতীর মাথায় মুকুট শোভা পাবে। যার একটি চুনির মূল্য দুনিয়া ও এতে সকল বস্তু অপেক্ষা বেশি। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
এছাড়াও জান্নাতে থাকবে হেলান দিয়ে বসার জন্য রেশমের আস্তরবিশিষ্ট পুরু ফরাশ, স্বর্ণখচিত আসন। মহান আল্লাহ বলেন,
مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ فُرُشٍ بَطَائِنُهَا مِنْ إِسْتَبْرَقٍ ۚ وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ
অর্থাৎ, সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে পুরু রেশমের আস্তরবিশিষ্ট বিছানায়। (সূরা রাহমান, আয়াত : ৫৪)
আরও বলা হয়েছে,
مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ رَفْرَفٍ خُضْرٍ وَعَبْقَرِيٍّ حِسَانٍ
অর্থাৎ, তারা হেলান দিয়ে বসবে সবুজ বালিশে ও সুন্দর গালিচার উপরে। (সূরা আর রাহমান, আয়াত :৭৬)