জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কত বয়স পর্যন্ত টিকা নেওয়া সম্ভব?

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কত বয়স পর্যন্ত টিকা নেওয়া সম্ভব?

জরায়ুমুখ ক্যানসার হয় এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে, যার নাম প্যাপিলোমা ভাইরাস। পরিসংখ্যান বলছে, সার্ভাইক্যাল ক্যানসারে বা জরায়ুমুখের ক্যানসারের মৃত্যুহার অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় মোটেই কম নয়। যদিও এই ক্যানসারের একটা প্রতিষেধক রয়েছে। সময়ে টিকা নিলেই প্রতিরোধ সম্ভব। আসলে গলদ আমাদের জানার পরিধিতেই। টিকা নেওয়ার ব্যাপারে এখনও তৎপর নয় বর্তমান প্রজন্ম। কখন নেবেন? বিয়ের আগে না পরে, তিরিশ পেরলে কি টিকা কার্যকর?

জরায়ুমুখ ক্যানসার হয় এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে, যার নাম প্যাপিলোমা ভাইরাস। পরিসংখ্যান বলছে, সার্ভাইক্যাল ক্যানসারে বা জরায়ুমুখের ক্যানসারের মৃত্যুহার অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় মোটেই কম নয়। যদিও এই ক্যানসারের একটা প্রতিষেধক রয়েছে। সময়ে টিকা নিলেই প্রতিরোধ সম্ভব। আসলে গলদ আমাদের জানার পরিধিতেই। টিকা নেওয়ার ব্যাপারে এখনও তৎপর নয় বর্তমান প্রজন্ম। কখন নেবেন? বিয়ের আগে না পরে, তিরিশ পেরলে কি টিকা কার্যকর?

নারীদের যে যে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি তার মধ্যে একটি অন্যতম সার্ভাইক্যাল ক্যানসার। যদিও এই ক্যানসার প্রতিহত করতে টিকা আছে। অর্থাৎ সময়ে টিকা নিয়ে নিলে ক্যানসার প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ প্রতিহত করা সম্ভব। তবুও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। কারণ, এ ব্যাপারে সঠিকভাবে জানেন, এই লোকসংখ্যাটা হাতেগোনা। 

২০২২-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আক্রান্ত ১ লাখ ২৫ হাজারের মধ্যে ৭৭ হাজার জন নারীর মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ ৫০ শতাংশের বেশি রোগী মারা গেছেন এই ক্যানসারে। টিকা থাকা সত্ত্বেও কেন এই পরিণতি? আসলে টিকা নেওয়ার সঠিক সময়, বয়স সবকিছুর ব্যাপারেই এখনও অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। কেউ মনে করেন বিয়ের পর টিকা নিলে কাজ হবে, কেউ মনে করেন, হবে না। কারও ধারণা প্রথম সহবাসের আগে নিতে হবে, কারও প্রশ্ন সহবাসের সময় যদি প্রতিরোধক ব্যবহার করা হয়, তাহলেও কি ভ্যাকসিন কার্যকর নয়? সঠিকভাবে জানা থাকলে তবেই কিন্তু ভ্যাকসিন দিয়েই ক্যানসার প্রতিহত সম্ভব।

ভাইরাস থেকে ক্যানসারআসলে, হিউম্যান প‌্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)-এর হানাতেই মেয়েদের শরীরে সার্ভাইক্যাল ক্যানসার বাসা বাঁধে। মূল কারণ অসুরক্ষিত যৌনসঙ্গম। এই ভাইরাস পুরুষাঙ্গ দিয়ে মহিলাদের শরীরে প্রবেশ করে। যা প্রভাবে বয়সকালে এই ক্যানসার প্রভাব ফেলে। তাই ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সিদের মধ্যেই আক্রান্তের হার বেশি। সঠিক সময়ে অর্থাৎ ৯ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত বয়সের মধ্যে ভ্যাকসিন নিলে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের সম্ভাবনা কমে। তবে ৯ থেকে ২৬ বছরের মধ্যেও এই ভ্যাকসিন নেওয়া যায়। মূলত বিয়ের আগে অথবা যৌনজীবন শুরুর আগে এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। নইলে কার্যক্ষমতা হারায়।

সময় পার হলে সুরক্ষা কোন পথে?বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ কিংবা বিবাহের পূর্বে যৌন সঙ্গমের সময় প্রতিনিয়ত কন্ডম ব্যবহার করেন, তাহলে তারা কিছুটা হলেও সুরক্ষিত। এ ক্ষেত্রে যদি কেউ সময় থাকতে থাকতে অর্থাৎ ২৬ বছরের মধ্যে এই ভ্যাকসিন নিয়ে নেন, তাহলে কার্যকর হলেও হতে পারে। যেহেতু, পুরুষদের মাধ্যমেই মহিলাদের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করে, তাই সেই পথে প্রতিরোধক থাকলে বয়স বাড়লেও ভ্যাকসিন কার্যকর হবে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। বয়স যত বাড়ে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ততই কমতে থাকে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, আমাদের দেশে আইনত ২৬ বছর বয়স পর্যন্তই মহিলাদের সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

প্যাপস টেস্টে সুরক্ষাকোনোরকম প্রতিরোধক ছাড়া যৌন মিলনে অভ্যস্ত থাকলে কিংবা কোনো সন্তানের মা হয়ে গেলে তাদের ভ্যাকসিন কাজ করে না। তবে, চিন্তার কোনো কারণ নেই। এই রোগের হাত থেকে বাঁচতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্ক্রিনিং অর্থাৎ ‘প্যাপস স্মেয়ার টেস্ট’ করিয়ে নিন প্রতি তিন বছরে একবার কিংবা পাঁচ বছরে একবার। যদি রিপোর্ট স্বাভাবিক আসে ‘একেবারে নো টেনশন’। ২৯ বছর বয়স থেকে ৬৫ বছর বয়সের মধ্যে এই টেস্ট জরুরি। তবে কেউ বাড়তি সচেতনতার মধ্যে থাকতে চাইলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর-অন্তর চিকিৎসকের পরামর্শে স্ক্রিনিং করাতেই পারেন।

মনে রাখবেন, এই রোগের ভ্যাকসিন ৮০ শতাংশ পর্যন্ত নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু বাকি ২০ শতাংশ ঝুঁকির দিক থেকেই যায়। তাই যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকবেন না। তারাও স্ক্রিনিং অর্থাৎ ‘প্যাপস স্মেয়ার টেস্ট’-র মধ্যে থাকুন। আসলে, ভ্যাকসিন সব সময় প্রাইমারি প্রিভেনশন অর্থাৎ ‘হওয়ার আগেই অসুখটা আটকে দেওয়া’-র মধ্যে পড়ে। কিন্তু স্ক্রিনিং সেকেন্ডারি প্রিভেনশন অর্থাৎ ‘অসুখের শুরুতে বুঝতে পেরে সারিয়ে ফেলা’ এই ধারণার পড়ে।

কারা নেবেন, কত ডোজে?এ ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন দুই ধরনের রয়েছে। আমাদের দেশে হিউমান প্যাপিলোমা ভাইরাসের ১৬, ১৮ এই দুটি স্ট্রেন সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের জন্য দায়ী। তাই উল্লেখিত দুটি ভ্যাকসিনের মধ্যে যে কোনো একটি নিলেই কার্যকর।

গার্ডাশিল, এটি মূলত কোয়াড্রিভালেন্ট। অর্থাৎ এইচপিভি ভাইরাসের মোট চারটি ধরনের (১৬,১৮,৬,১১) ওপর কার্যকর। প্রথমবার ভ্যাকসিন নেওয়ার ৮ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ, তৃতীয় ডোজ ১২ সপ্তাহ পর নিতে হয়।

সারভেরিক্স বা বি-ভালেন্ট ভ্যাকসিনটি ভাইরাসের মোট দুটি ধরনের (১৬,১৮) ওপর কাজ করে। মোট তিনটি ডোজে এটি দেওয়া হয়। প্রথম ডোজ নেওয়ার একমাস পর দ্বিতীয় ডোজটি, ছমাস পর তৃতীয় ডোজটি দেওয়া হয়।

কারা নিতে পারবেন না?গর্ভাবস্থাকালীন এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় না। যারা ‘ল্যাকটেটিং মাদার’ থাকেন তারাও এই ভ্যাকসিন থেকে দূরে থাকুন। আদৌ তাদের জন্য এই ভ্যাকসিন কতটা ভালো, সেই সব কিছুই এখন রয়েছে গবেষণার স্তরে। এ ছাড়াও, যাদের অ্যালার্জির সমস্যা, ভারী অসুখ কিংবা বন্ধ্যত্বের সমস্যা রয়েছে তারা নেওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। জ্বর, সর্দি অন্য কোনোরকম শরীর খারাপের সময় এই ভ্যাকসিন নেবেন না।

তবুও সাবধানের মার নেইএকাধিক পুরুষের সঙ্গে যৌনমিলন নয়, যৌন মিলনের সময় কনডোমের ব্যবহার, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, মদ্যপান, ধূমপান বর্জন করুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন

ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণসাদাস্রাব, মাসিক বন্ধের পর রক্তপাত, যৌন মিলনের সময় রক্তপাত, প্রবল কোমরে ব্যথা

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *