নারায়ণগঞ্জে গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বপরিবারে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই নির্বিঘ্নে পার হয়েছেন ইমিগ্রেশন। দেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে মহড়া দিয়ে গোলাগুলি করলেও তাদের ধরতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ নিয়ে জনসাধারণের মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নারায়ণগঞ্জে গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বপরিবারে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই নির্বিঘ্নে পার হয়েছেন ইমিগ্রেশন। দেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে মহড়া দিয়ে গোলাগুলি করলেও তাদের ধরতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ নিয়ে জনসাধারণের মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, শামীম ওসমান অবস্থান করছেন দুবাইয়ে। এর আগে শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের ভারতে দেখা গিয়েছিল। ভারতে নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন পর্যটক দেখা পেয়েছিলেন অয়ন ওসমানের শ্বশুর ফয়েজউদ্দিন আহমেদ লাভলুর। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে ঘনিষ্ঠজনদের সবাই দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এবার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের দুবাইয়ে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে ওসমান পরিবার।
শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের মাধ্যমে জানা যায়, ‘শাহ নিজাম, আহমেদ কাউসার, হাবিবুর রহমান রিয়াদসহ অপেক্ষাকৃত বিশ্বস্ত এবং ওসমান পরিবার যাদের ব্যবহার করে অনেক বেশি অপকর্ম করেছিল, তাদের দুবাইয়ে আনার যাবতীয় উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। দুবাইয়ে ব্যবসা ও চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন মর্মে তাদের নেওয়া হচ্ছে দুবাইয়ে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন দুবাই পৌঁছে গেছেন বলেও জানা যায়। বাকিদেরও সেখানে পাঠানোর জন্য চলছে তোড়জোড়। তবে দুবাইয়ে বর্তমানে ভিসা কড়াকড়ির মধ্যেও কীভাবে তার ব্যবস্থা হচ্ছে সে বিষয়টি এখনও জানা যায়নি।’
সূত্র বলছে, ‘শামীম ওসমানের অপকর্ম যেন আদালতে বা কোনো জবানবন্দিতে রেকর্ড না হয় সে জন্য সবাইকে দেশ থেকে বের করে আনার পরিকল্পনা এঁটেছেন তিনি। বিশেষ করে অস্ত্রের মহড়ায় যারা জড়িত তাদের নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে তার। যেই সোর্স ব্যবহার করে তিনি দেশ ছেড়েছেন, সেই সোর্স ব্যবহার করেই তার ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের দেশ থেকে বাইরে নিয়ে আসতে চাইছেন। যৌথ বাহিনীর অভিযানে ঘনিষ্ঠদের কেউ গ্রেপ্তার হলেই বেরিয়ে আসবে তার সব তথ্য। আর সেই ভয়েই অর্থ খরচ করে তাদের ভিসা, প্লেনের টিকেটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন তিনি।’
সূত্রটি আরও জানায়, ‘ইতোমধ্যে গ্রুপ করে দুবাই পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকজন পৌঁছে গেছেন দুবাই। বাকিদের জড়ো করে নিরাপদে ইমিগ্রেশন পার করতে কাজ করছে শামীম ওসমানের অনুসারীরা। বিনিময়ে যত অর্থ প্রয়োজন তা জোগাড় করে দিচ্ছেন শামীম ওসমান। আর এ তথ্য ইতোমধ্যে চাউর হয়েছে শহর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা অঞ্চলে। রিয়াদ এবং কাউসারের অনুসারী হিসেবে যারা পরিচিত, অর্থাৎ তুলনামূলক তরুণদের দেওয়া হচ্ছে টোপ। বিদেশে কাউসারের অধীনে ব্যবসা চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে তাদের।’
ক্ষুব্ধ নগরবাসী বলছেন, একদিকে অর্থের প্রভাবে দেশ ছেড়ে পালাতে পেরেছেন শামীম ওসমান ও তার পরিবার। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও যদি তার অনুসারীদের গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে এই শহরের নিপীড়িত মানুষ ন্যায় বিচার পাবে না। অনতিবিলম্বে এই অপরাধীদের বিদেশ গমন ঠেকাতে হবে এবং দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। যেকোনো মূল্যে তাদের ইমিগ্রেশন অতিক্রম এবং সীমান্তে অবৈধ পারাপার ঠেকাতে হবে।
এর আগে, ছাত্র আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, শামীম ওসমান ও তার কয়েকশ অনুসারী আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কে শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকার দিকে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিচ্ছেন। তার সঙ্গীদের কয়েকজন আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিও ছোড়েন তারা।
এফআরএস