গ্রিসের গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশিদের আধিপত্য

গ্রিসের গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশিদের আধিপত্য

ইউরোপের দেশ গ্রিসে বাড়ছে বাংলাদেশি মালিকানাধীন তৈরি পোশাক কারখানা। ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করে ক্রমান্বয়ে সাফল্য পেয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ কর্মী থেকে হয়েছেন একাধিক গার্মেন্টস কারখানার মালিক। গ্রিসে এ শিল্পে একচেটিয়া বাজার ধরে রেখেছেন বাংলাদেশিরা। গার্মেন্টস খাতে ব্যাপক সুনামও রয়েছে বাংলাদেশিদের। অনেক উদ্যোক্তাই এখন ঝুঁকছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়। তবে বর্তমানে কর্মী সংকটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

ইউরোপের দেশ গ্রিসে বাড়ছে বাংলাদেশি মালিকানাধীন তৈরি পোশাক কারখানা। ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করে ক্রমান্বয়ে সাফল্য পেয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ কর্মী থেকে হয়েছেন একাধিক গার্মেন্টস কারখানার মালিক। গ্রিসে এ শিল্পে একচেটিয়া বাজার ধরে রেখেছেন বাংলাদেশিরা। গার্মেন্টস খাতে ব্যাপক সুনামও রয়েছে বাংলাদেশিদের। অনেক উদ্যোক্তাই এখন ঝুঁকছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়। তবে বর্তমানে কর্মী সংকটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

তৈরি পোশাক শিল্পে নিয়োজিতরা জানান, একসময় স্থানীয় ও আরবদের দখলে ছিল তৈরি পোশাক খাত। বাংলাদেশিসহ এশিয়ানরা কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন তাদের কারখানায়। নানা হয়রানির শিকারও হতেন। এরপর দিন বদলাতে শুরু করে। বাংলাদেশিরা ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন পোশাক তৈরির কারখানা। সফলতা পাওয়ায় দিন দিন বাড়তে থাকে এর সংখ্যা। বর্তমানে এথেন্সে রয়েছে বাংলাদেশিদের ৪ শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করছেন ১০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি।

গ্রিসের বাংলাদেশি মালিকানাধীন গার্মেন্টস খাতে এক পরিচিত নাম শেখ আল আমিন। তিনি গার্মেন্টস কর্মী থেকে বর্তমানে চারটি গার্মেন্টস কারখানার মালিক। গার্মেন্টস ছাড়াও রয়েছে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রবাস থেকে বৈধপথে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকারের এনআরবি সিআইপি সম্মাননাও পেয়েছেন এই গার্মেন্টস ব্যবসায়ী।

শেখ আল আমিন জানান, তিনি প্রথমে গ্রিসে গিয়ে ছয় বছর গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তখন অনেক মালিক কর্মচারীদের বেতন দিতেন না ঠিকমতো। বাংলাদেশিদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হতো। তখন তিনি গার্মেন্টস মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। প্রতিনিয়ত স্বপ্ন তাড়া করে বেড়াত কীভাবে একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হতে পারেন। একপর্যায়ে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়। ২০০৫ সালে সালে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

বর্তমানে তার চারটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে দুই শতাধিক বাংলাদেশির।

শেখ আল আমিন বলেন, গার্মেন্টস কমিউনিটি ইন গ্রিস প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রিক, আরব ও অন্য দেশিদের সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশি শ্রমিক ভাইদের সব সমস্যা সমাধান করে আসছি। বর্তমানে বাংলাদেশি মালিকদের কাছে কাজ করে শ্রমিকরা ভালোই আছে। বাংলায় একজন অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারে। মালিককে বাংলায় যেকোনো বিষয়ে বলতে পারে। এই ভাইদের কারণেই আমরা ব্যবসায়ীরা আজ এই পর্যায়ে।

গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ী।

গ্রিসে অনেক উদ্যোক্তাই এখন ঝুঁকছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়। তবে বর্তমানে কর্মী সংকটে রয়েছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা। দেশটির বাংলাদেশি মালিকানাধীন কারখানাগুলো ঘুরে দেখা গেছে স্বদেশি মালিকদের অধীনে কাজ করে খুশি কর্মীরাও।

আব্দুল আলী নামের একজন বলেন, এখানে আমরা সরাসরি মালিকদের সঙ্গে বাংলায় কথা বলতে পারি। সুখে, দুঃখে আমরা মালিককে পাশে পাই। আমরা আমাদের সমস্যার কথা বলতে পারি। অন্য দেশি মালিকের অধীনে কাজ করলে এ সুবিধা মেলে না।

মোহম্মদ রহমান নামের আরেকজন বলেন, আগে অন্য দেশি মালিকের কাছে কাজ করতাম, মাস শেষ হলেও বেতন ঠিকমতো দিত না, এখন আমরা মাস শেষ হওয়ার আগেই চাইলে বেতন পেয়ে যাই। এ ছাড়া কোনো বিপদে পড়লেও বেতনের টাকা অগ্রিম আনা যায়।

তিনি জানান, বর্তমানে দৈনিক ১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করে তার মাসিক আয় দেড় লাখ টাকার মতো। পুরোনো যারা কাজ শিখেছেন তাদের বেতন আরও অনেক বেশি।

গার্মেন্টস ব্যবসায়ী নুরুল জানান, বাংলাদেশিদের বিশাল একটি অংশ একসময় কৃষি খাতে নিয়োজিত ছিলেন। এখন রাজধানীতে স্বদেশিদের কারখানা গড়ে ওঠায় অনেকেই গার্মেন্টসের কাজে আসছেন। বর্তমানে গ্রিসের বাংলাদেশি পোশাক কারখানাগুলোতে ১০ থেকে ১২ হাজার কর্মীর ঘাটতি রয়েছে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।

এদিকে, বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস খাতে কর্মী আনার সুযোগ মিললে গ্রিসে ব্যবসার পরিধি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতারা।

বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ইন গ্রিসের সাধারণ সম্পাদক সফল গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এইচ এম জাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের বাংলাদেশি মালিকদের চার শতাধিক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ১০ হাজারের মতো বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। আমাদের ফ্যাক্টরিতে শুধু বাংলাদেশিই নয়, গ্রিক, আলবেনিয়া, পাকিস্তানিসহ বিভিন্ন দেশের লোকজনও কাজ করেন। গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশিদের ৯০ শতাংশ ব্যবসায়ীই এখন ভালো অবস্থানে রয়েছেন।

এইচ এম জাহিদ ইসলাম আরও বলেন, এখন কর্মীরাও মালিকদের কাছ থেকে ভালো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন, কর্মীরা মালিকদের পাশে পাচ্ছেন সবসময়। আমি আমার ফ্যাক্টরির কর্মীদের ১৫ দিন পর পর বেতন দিয়ে থাকি। অন্য মালিকরাও ঠিক মতো বেতন পরিশোধ করেন। ফলে শ্রমিকরাও সন্তুষ্ট।

এসএসএইচ

ঢাকা পোস্ট প্রবাস বিভাগে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *