ছাত্র-জনতার বিপ্লবে পুলিশ কর্তৃক গুলি করে গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলা গ্রহণ ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা আদালত সহজে গ্রহণ করবে না। পাশাপাশি কোনো পুলিশকে আসামি করে দায়ের করা মামলা চলবে না এবং প্রাথমিক তদন্তে সব পুলিশকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে পুলিশ কর্তৃক গুলি করে গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলা গ্রহণ ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা আদালত সহজে গ্রহণ করবে না। পাশাপাশি কোনো পুলিশকে আসামি করে দায়ের করা মামলা চলবে না এবং প্রাথমিক তদন্তে সব পুলিশকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া পুলিশ/সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা যাবে না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, একতাবদ্ধ ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের গুলিতে খুন হয়েছেন সহস্রাধিক মুক্তিকামী মানুষ। সেই মিছিলে কোন পুলিশ গুলি করেছিল তা বাদীর পক্ষে জানা কঠিন। তবে, গুলি করার স্পটে যত পুলিশ ছিল কিংবা যেই থানা এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, সেই থানার ওসি ও তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (এসপি, অতিরিক্ত এসপি ও এএসপি) এবং অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে দণ্ডবিধি ১০৯ ও ৩৪ ধারার অধীনে ৩০২ ধারায় আসামি করা যাবে। সুতরাং তৎকালীন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করার আইনগত কোনো বাধা নেই।
তবে, উল্টোটা দেখা যাচ্ছে বাস্তবে। থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে এবং অজ্ঞাত বিভিন্ন মানুষের নাম দেওয়া হচ্ছে জিআর মামলাগুলোতে। ফলে সেই হত্যা মামলার গুরুত্ব ও আইনগত অবস্থান হারাচ্ছে।
অপরদিকে, আদালতে মামলা করতে গেলে মামলাটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণের আদেশ না দিয়ে তদন্তে পাঠানো হচ্ছে। পুলিশ নিজে তদন্ত করছে তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের। সুতরাং তদন্তের নিরপেক্ষতা ও সঠিকতা থাকবে বলে মনে হয় না।
হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে ওই এলাকার দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম যদি আসামির তালিকায় না আনা যায়, তাহলে এ দানব পুলিশকে মানবিক পুলিশে রূপান্তর করা সম্ভব হবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, মামলা হলে একটি প্রাথমিক তদন্ত করে তারপর সেখানে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলে তাদেরকে মামলা হতে বাদ দিতে হবে। আইনের কোথাও জিআর মামলায় এমন প্রাথমিক তদন্তের কোনো বিধান নেই। তাহলে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে করতে হবে প্রাথমিক তদন্ত।
একটি মামলা হলে তারপর তদন্ত হবে। তদন্ত করে যদি সেখানে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তবে তার নামে চার্জশিট হবে। আর সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলে তার নামে ফাইনাল রিপোর্ট করে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
এমতাবস্থায় প্রশ্ন থেকেই যায়, যে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা কিংবা অভিযোগ সেই পুলিশই করবে তার তদন্ত। সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও সঠিক তদন্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কমই থাকে। কারণ, ইতোপূর্বে রংপুরের আবু সাঈদ এবং সাভারের ইয়ামিন হত্যা মামলায় পুলিশের করা এজাহার দেখেছি। সেখানে পুলিশ বলেছে, জনগণের ইটপাটকেলে তাদের মৃত্যু হয়েছে। অথচ ওই দুজনকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। ঘটনার স্পষ্ট ভিডিও বিশ্বব্যাপী দেখেছে। তাহলে সরাসরি গুলিতে যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত ভিডিও আমাদের বা বাদীর কাছে সংরক্ষিত না থাকে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কেমন রিপোর্ট দেবে তা সহজেই অনুমেয়।
আশা করি, রাষ্ট্র বিষয়টি খোলাসা করবে এবং কাউকে দায়মুক্তি না দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র তৈরিতে এগিয়ে যাবে।
সাকিল আহমাদঅ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট