খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রির নীতিমালা জারি

খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রির নীতিমালা জারি

খাদ্যশস্যের বাজার মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা রোধ করে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে মূল্য সহায়তা দেওয়া এবং বাজার দর স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের আওতায় খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রির নীতিমালা জারি করেছে সরকার।

খাদ্যশস্যের বাজার মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা রোধ করে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে মূল্য সহায়তা দেওয়া এবং বাজার দর স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের আওতায় খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রির নীতিমালা জারি করেছে সরকার।

এতে বলা হয়েছে, এই নীতিমালা ‘খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস) নীতিমালা, ২০২৪’ নামে অভিহিত হবে এবং অবিলম্বে কার্যকর হবে।

নীতিমালা বলা হয়েছে, খোলা বাজারে চাল ও আটা (গম পেষণ করে) বিক্রির এলাকা/আওতা, পরিমাণ, শুরুর সময় ও মূল্য খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত হবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে খাদ্য অধিদপ্তর ওএমএস এর আওতায় চাল ও আটা বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করবে। সরকার প্রয়োজনবোধে ডিলার সংখ্যা এবং এ কার্যক্রমের আওতা/পরিধি হাস/বৃদ্ধি করতে পারবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ওএমএস কার্যক্রম ট্রাকসেল/দোকান সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলমান থাকবে। ডিলার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকান/ট্রাকসেল খোলা রাখবেন। তবে নির্ধারিত সময়ে আটা ও চাল বিক্রি শেষে অবশিষ্ট যে পরিমাণ আটা ও চাল থাকবে তা ট্যাগ অফিসার যাচাই করবেন। যাচাইয়ের পর রেজিস্টারে ডিলার স্বাক্ষর করবেন এবং ট্যাগ অফিসারকে মালামালের হিসাব বুঝিয়ে দেবেন।

বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক বিশেষত নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী ওএমএসের উপকারভোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

ওএমএস ডিলার পেতে থাকতে হবে যেসব যোগ্যতা–

*সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সধারী হতে হবে;*খাদ্যশস্যের লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যবসায়ী হতে হবে;*ওএমএস ডিলারের কমপক্ষে ৩ টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণের উপযোগী সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। মালামালের হিসাব সংরক্ষণের সক্ষমতা থাকতে হবে;*নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে (ট্রাকে/দোকানে) খাদ্যশস্য বিক্রয় করতে হবে;*খাদ্য অধিদপ্তরের কোনো ডিলার/মিলার/ঠিকাদার পূর্বে শাস্তিপ্রাপ্ত, কালো তালিকাভুক্ত বা যেকোনো অনিয়মের কারণে ডিলারশিপ বাতিল হলে তিনি ওএমএস ডিলারের জন্য আবেদন করতে পারবেন না;*খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো পরিবহন ঠিকাদার, শ্রম ঠিকাদার, মিলার ও খাদ্যবান্ধব ডিলার হিসেবে কর্মরত কোনো ব্যক্তি/তার ওপর নির্ভরশীল কেউ এ কার্যক্রমের ডিলার হতে পারবেন না;*প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারী/জনপ্রতিনিধি ডিলার হতে পারবেন না;*কোনো ব্যক্তি ডিলারশিপ প্রাপ্ত হলে ‘নিজ ডিলারশিপ ব্যতীত অন্য কোনো ডিলারের প্রতিনিধিত্ব করবেন না’ মর্মে অঙ্গীকারনামা দাখিল করতে হবে; এর ব্যত্যয় হলে উভয় ব্যক্তির ডিলারশিপ বাতিল হবে। এ ছাড়া ওএমএস ডিলার লাইসেন্স হস্তান্তরযোগ্য নয়;*ওএমএস ডিলার অথবা তার প্রতিনিধির স্মার্ট ফোন/তথ্য সংগ্রহের ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস থাকতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট অ্যাপস ব্যবহারে সক্ষমতা থাকতে হবে;*খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস) নীতিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যক্তিরা এ নীতিমালায় নতুনভাবে আবেদন করতে পারবেন। বিদ্যমান ডিলারদের মধ্যে কেউ বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য বিবেচিত হলে তাকে নতুন ডিলার হিসাবে তালিকাভুক্তির জন্য বিবেচনা করা যাবে।

চাল ও আটা বিক্রয় প্রক্রিয়ায় বলা হয়েছে–

*ওএমএস কার্যক্রমে শুক্রবার, শনিবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ চাল ও আটা ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে বিক্রয় করা যাবে। তবে বিক্রয় সম্পন্ন না হলে গ্রাহক লাইনে থাকাকালীন ওই কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে খাদ্যশস্য বিতরণ করা পর্যন্ত নির্ধারিত স্থানে থাকতে হবে। ওএমএস কার্যক্রমে সাপ্তাহিক বিক্রয়ের দিন, বন্ধের দিন ও দৈনিক বিক্রয়ের পরিমাণ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক্রমে মহাপরিচালক, খাদ্য অধিদপ্তর পুনর্নির্ধারণ করতে পারবেন। সরকার প্রয়োজন মনে করলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন বা অন্য ছুটির দিনেও ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে;*জনপ্রতি নির্ধারিত পরিমাণ চাল ও আটা বিক্রয়কালে নির্ধারিত ফরমেটে বাঁধাইকৃত রেজিস্টারে বিক্রীত খাদ্যশস্যের মাস্টাররোল তৈরি করতে হবে;*ডিলারের কার্যক্রম তদারকি করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক তদারকি কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার উপস্থিতিতে চাল ও আটা বিক্রয় শুরু করতে হবে। তদারকি কর্মকর্তাকে বিক্রয় স্থলে (দোকান/ট্রাকে) দিনের বিক্রয়যোগ্য খাদ্যশস্যের বস্তা ও পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বিক্রয় আদেশ দিতে হবে। তাছাড়া দিনের বিক্রয় শেষে ডিলার ও তদারকি কর্মকর্তাকে বিক্রীত খাদ্যশস্যের মাস্টাররোল ও মজুত খাদ্যশস্য যাচাই করে রেজিস্টারে স্বাক্ষর করতে হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর এ বিষয়ে প্রতিবেদন পেশ করতে হবে। কোনো অনিয়ম/ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক অবহিত করতে হবে;*দিন শেষে মোট বিক্রয় ও মজুত হিসাব মজুত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। প্রতিদিন বিক্রি শেষে বিকেল ৫টার পর অবিক্রীত খাদ্যশস্যের পরিমাণ ঘোষণা করে ডিলার লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্মকর্তা নিশ্চিত করবেন;*ওএমএস কার্যক্রম সমাপ্ত হওয়ার পরও কোনো ডিলারের নিকট উত্তোলিত কিন্তু অবিক্রীত চাল ও আটা থাকলে তা এ নীতিমালার আওতায় বিক্রির মাধ্যমে নিঃশেষ করতে হবে।

চাল ও আটা উত্তোলন প্রক্রিয়ায় বলা হয়েছে–

*চাল ও আটা উত্তোলনের জন্য ডিলারকে চাহিদাপত্র দেওয়ার সময় আগের দিনের অবিক্রীত খাদ্যশস্য (যদি থাকে) সমন্বয় করে পরবর্তী দিনের চাহিদাপত্র তৈরি করতে হবে;*প্রতিটি দোকান ডিলার সর্বোচ্চ দুই দিনের বিক্রয়যোগ্য খাদ্যশস্য একসঙ্গে উত্তোলন করতে পারবেন;*বিক্রয় দিনের খাদ্যশস্যের মূল্য (পরিচালন ব্যয় ব্যতীত) কমপক্ষে একদিন পূর্বে সরকারি কোষাগারে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিয়ে চাল/আটা উত্তোলন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চালান ভেরিফিকেশন করে নিশ্চিত হয়ে ডিও ইস্যু করতে হবে;*সরকারি গুদাম থেকে খাদ্যশস্য সরবরাহকালে চাল/আটার নমুনা গ্রহণ করতে হবে। গুদাম কর্মকর্তা ও ডিলারের যৌথ স্বাক্ষরে সিলগালাকৃত একটি করে নমুনা গুদামে ও অপরটি ডিলারের নিকট সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে;*ডিলার নিজেই খাদ্যশস্য উত্তোলন করবেন এবং ওএমএস উপকারভোগীদের নিকট বিক্রয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

সরকার প্রয়োজনে খাদ্যশস্য উত্তোলনের অন্যরূপ আদেশ দিতে পারবে।

এমএম/এসএসএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *