ক্যানসারের খবর জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন আবুল হায়াত ও তার স্ত্রী

ক্যানসারের খবর জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন আবুল হায়াত ও তার স্ত্রী

প্রকাশ পেয়েছে দেশের বর্ষীয়ান অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা আবুল হায়াতের আত্মজীবনী ‘রবি পথ’। শনিবার (২ নভেম্বর) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বইটির মোড়ক উন্মোচিত হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন এই অভিনেতা, তার স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয় ও সহকর্মীরা।

প্রকাশ পেয়েছে দেশের বর্ষীয়ান অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা আবুল হায়াতের আত্মজীবনী ‘রবি পথ’। শনিবার (২ নভেম্বর) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বইটির মোড়ক উন্মোচিত হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন এই অভিনেতা, তার স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয় ও সহকর্মীরা।

নিজের বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ারের গল্প বলবে এই বই। যে বইটি লিখেছেন আবুল হায়াত নিজেই। শুধু ক্যারিয়ারই নয়, ব্যক্তিগত জীবনের অনেক অজানা গল্প উঠে এসেছে অভিনেতার ‘রবি পথ’-এ।

বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে পরিবারকে নিয়ে হাজির হয়ে ক্যানসারের খবরও জানিয়েছেন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আবুল হায়াতের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা যায় তার স্ত্রী শিরিন হায়াতকেও। 

প্রথমেই বই সম্পর্কে অভিনেতা বলেন, ‘জন্ম থেকে এ পর্যন্ত যেসব কথা মনে হয়েছে বলা দরকার, সেসবই বলেছি এই বইয়ে। সব মিলিয়ে নিজেকে প্রকাশের চেষ্টা করেছি। আশা করছি, সবকিছু মিলিয়ে আমার পুরো যাত্রাপথ জানা যাবে।’

আবুল হায়াত বলেন, ‘হঠাৎ মনে হয়েছিল, জীবনে তো অনেক ঘটনা আছে। ছোটবেলা থেকে অনেক কিছু দেখেছি। সেগুলো গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছি বইতে। এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা জানেও না, এ রকম পুরানো অনেক ঘটনা আছে। আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব সবাই উৎসাহ দিয়েছে। পরে ভাবলাম, লিখেই ফেলি।’

‘রবি পথ-কর্মময় ৮০’ লেখার গল্প বলতে বলতে একসময় মঞ্চের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। আবুল হায়াত কাছে টেনে নিলেন স্ত্রী শিরিন হায়াতকে। এসময় তার ক্যানসারের গল্প বলতে শুরু করেন। 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবুল হায়াত বললেন, ‘আজ থেকে তিন বছর আগে চিকিৎসক বললেন, আমার ক্যানসার হয়েছে। আমি জানতে পারলাম, আমি ক্যানসার রোগী। হাসপাতাল থেকে বাসা পর্যন্ত আর কথা বলতে পারিনি।’

এসময় স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে অভিনেতা বলেন, ‘এই মহিলা (শিরিন হায়াত) সারাক্ষণ আমাকে বলতে লাগল, আরে কী হয়েছে। এটা কি কোনো ব্যাপার নাকি। আমরা আছি। চিকিৎসা করব। যেখানে যা যা লাগে, আমরা করব। তুমি ভালো হয়ে যাবে। আমার মেয়েরা খবর পেয়েছে। তারাও বিভিন্নভাবে আমাকে বুঝিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এই খবর শুনে, আমার তো মন মানে না। রাতে খাবার খেয়েছি কি খাইনি, জানি না। বিছানায় শুয়ে পড়েছি। অন্ধকারে একা কাঁদছি। হঠাৎ টের পেলাম, উনি পাশে এসে শুয়েছেন। আমি তখনও নিঃশব্দে কাঁদছি। হঠাৎ ওনার একটা হাত আমার গায়ে এসে পড়ল। আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। তখন আমার স্ত্রী বলল- ‘আল্লাহতায়ালা এই রোগটা তোমাকে কেন দিল, আমাকে দেখতে পেল না?’ বলেই হাউমাউ করে কেঁদে আমাকে জড়িয়ে ধরল।’’

আবুল হায়াত নামে পরিচিত হলেও অভিনেতার ডাক নাম রবি। সেই নামেই নিজের আত্মজীবনীর নাম রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

১৯৪৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন আবুল হায়াত। ১৯৪৭ সালে পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন চট্টগ্রামে। মাত্র ১০ বছর বয়সে মঞ্চে ওঠেন অভিনয়ের জন্য। যে অভিনয়ের সঙ্গে এখনও নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন অভিনেতা।  এরপর ১৯৬৯ সাল থেকে টিভি নাটকে অভিনয় করছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে নাটকের পাশাপাশি ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘জয়যাত্রা’, ‘গহীনে শব্দ’সহ আরো কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘দারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০০৭ সালে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

এনএইচ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *