কেন হত্যা করা হলো ত্বকীকে?

কেন হত্যা করা হলো ত্বকীকে?

নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন ২০১৩ সালের ৬ মার্চ খুনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে নিহত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। এর মধ্যে ত্বকী হত্যার আগ পর্যন্ত ৩টি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। এই আন্দোলনগুলোর প্রধান দায়িত্বে ছিলেন রফিউর রাব্বি। 

নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন ২০১৩ সালের ৬ মার্চ খুনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে নিহত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। এর মধ্যে ত্বকী হত্যার আগ পর্যন্ত ৩টি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। এই আন্দোলনগুলোর প্রধান দায়িত্বে ছিলেন রফিউর রাব্বি। 

এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে রফিউর রাব্বি বলেন ত্বকী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তিনি বলেন, ত্বকী হত্যাকাণ্ডে র‌্যাব তদন্তে ৩টি কারণ উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো- ২০১১ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমান সেলিনা হায়াৎ আইভির কাছে ১ লাখ ৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। সেই নির্বাচনে শামীম ওসমান ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আর আইভি ছিল নাগরিক পরিষদের প্রার্থী। সেই নাগরিক পরিষদের মেম্বার সেক্রেটারি ছিলাম আমি। যার ফলে সেই সময় বিভিন্ন মিডিয়া আমাকে ফেস করতে হতো। এজন্য শামীম ওসমান আইভির সঙ্গে তার পরাজয়ের একটা কারণ মনে করে আমাকে। 

তিনি দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলেন, সেই বছরেই জুন মাসে বাস ভাড়া নিয়ে একটা আন্দোলন হয়েছিল নারায়ণগঞ্জে। হুট করে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস ভাড়া ২২ টাকা থেকে ৩২ টাকা করা হয়। ওই সময় পরিবহন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতো ওসমান পরিবার। বন্ধন পরিবহনের মালিকরা র‌্যাব-১১ কে একটা চিঠি দিয়েছিল সেখানে তারা উল্লেখ করেছিল, প্রতি মাসে নাসিম ওসমানকে ও শামীম ওসমানকে কত টাকা চাঁদা দেয়। তো আমি তখন বলেছিলাম এই চাঁদাটা যদি বন্ধ করা যায় তাহলে ভাড়া বাড়ানোর তো প্রশ্নই ওঠে না বরং এই ভাড়াটা কমানো যায়। সুতরাং এই চাঁদা বন্ধ করতে হবে। পরে এটা হরতাল পর্যন্ত যায়, ডিসির সঙ্গে মিটিং হয়, বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, যেটা পরে সারাদেশের মানুষ দেখেছে। এটা নিয়ে কবরীর (নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য) সঙ্গে শামীম ওসমানের হাতাহাতির পর্যায়ে যায়। তিনি জুতা নিয়ে শামীম ওসমানকে মারতেও যায়। ওই ঘটনার পর ৩ দফা বাসের ভাড়া কমিয়ে ৩২ টাকা থেকে ২৭ টাকায় নামিয়ে আনে তারা। এই বাস ভাড়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে সে সময় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সম্বিলিতভাবে জাতীয় অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম করে। সেই ফোরামের আহ্বায়ক করা হয় আমাকে (রফিউর রাব্বি) এবং সেই মুভমেন্টে নেতৃত্বে ছিলাম আমি। তারা মনে করছে যে তাদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও লাঞ্ছিত হওয়ার পেছনে আমি দায়ী। 

তৃতীয় কারণ হিসেবে রফিউর রাব্বি বলেন, ২০১২ সালে রেলওয়ের জায়গা দখল করে মার্কেট করছিল নাসিম ওসমান এবং আমরা তখন রেলের ভূমি দস্যুতার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে ঠিক একইভাবে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ভূমি রক্ষা নাগরিক পরিষদ গঠন করি। সেটারও কনভেইনর করা হয় আমাকে। সেই আন্দোলনও অনেক বড়সড় হয়েছিল। যখন জোর করে তারা মার্কেটটা করার জন্য উদ্যোগ নেয় তখন নারায়ণগঞ্জের প্রায় প্রচুর লোক এটার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। সে সময় পুলিশের সঙ্গে টিয়ারশেল ও গোলাগুলি পর্যন্ত হয়। সেই রক্তারক্তির অবস্থানের কারণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মার্কেট নির্মাণটা বন্ধ ঘোষণা করে। এটা তাদের পরিবারের একটা বড় অর্থনৈতিক ক্ষতি বলে তারা মনে করে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খান সড়কের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন ত্বকী। দুই দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের এক বছরে মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব-১১ ত্বকী হত্যা মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটন ও খুনীদের শনাক্ত করার বিষয়টি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বিকে শায়েস্তা করতেই আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছেন। শিগগির আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ১১ বছরেও সেই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়নি। ঝুলে আছে ত্বকী হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া।

আরকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *