কেন্দ্রীয় ব্যাংক-হাইকোর্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি, নিয়োগ পায়নি একজনও

কেন্দ্রীয় ব্যাংক-হাইকোর্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি, নিয়োগ পায়নি একজনও

মহামারি করোনার সময় নানা অজুহাতে গণহারে ছাঁটাই করে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যাংকারদের চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চাকরি ফেরত দিতে ব্যাংকার‌দের প‌ক্ষে হাইকোর্টও রুল জা‌রি ক‌রে‌ছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার প্রায় ৩ বছর হলেও একজন ব্যাংকারকেও চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়নি। এর মাধ্যমে হাইকোর্টের রুল ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যাংক কর্মীরা। বৈষম্যবিরোধী আচরণ দূর করে দ্রুত চাকরিতে পুনর্বহাল চেয়েছেন ব্যাংকাররা।  

আজ (সোমবার) চাকরি ফিরে পেতে বাংলা‌দেশ ব্যাং‌কের সামনে মানববন্ধন করেন ব্যাংকাররা। এ সময় নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরকে চিঠিও দিয়েছেন ব্যাংকাররা।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলা‌দেশ ব্যাং‌কের সামনে অবস্থান নিয়ে চাকরিচ্যুত ও পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যাংক কর্মীরা বলেন, আমাদের অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। প্রায় তিন বছর আমরা বেকার মানবেতর জীবনযাপন করছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলার দিয়ে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছে। মাহামান্য হাইকোর্ট এ বিষয়ে আমাদের পক্ষে রুল জারি করেছেন। কিন্তু তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্দেশনা অমান্য করে যাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ পর্যন্ত একজন ব্যাংকারকেও চাকরিতে পুনর্বহাল করেনি। এর আগে দুই গভর্নরকে এ বিষয়ে জানিয়েছি, কাজ হয়নি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কার চলছে। নতুন গভর্নরের কাছে আমরা ন্যায় বিচার চাই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার বাস্তবায়ন চাই। চাকরিতে পুনর্বহাল চাই।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া চাকরিচ্যুত ব্যাংকাররা জানান, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই করোনাকালে কয়েক হাজার ব্যাংকারকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এমনকি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়ও কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকে জোরপূর্বক পদত্যাগের বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেও কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মহামারি করোনার সময় ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত বেসরকারি ছয় ব্যাংকের তিন হাজার ৩১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি ছেড়েছেন। এর মধ্যে ‘স্বেচ্ছায়’ পদত্যাগ করেছেন তিন হাজার ৭০ জন। ১২ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই, ২০১ কর্মকর্তাকে অপসারণ এবং ৩০ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে চাকরিচ্যুত ব্যাংকারদের চাকরিতে পুনর্বহালের আদেশ জারি করে। ওই নির্দেশনার পর চাকরিচ্যুত অনেক ব্যাংকার চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন করেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো চাকরিচ্যুত কর্মীদের পুনর্বহালে কার্যকর তেমন কোনো পদক্ষেপই নেয়নি বলে দাবি ব্যাংকারদের।

পরে উপায় না পেয়ে আদাল‌তের দ্বারস্থ হন চাকরিচ্যুতরা। বিষয়‌টি আম‌লে নি‌য়ে ব্যাংকারদের পক্ষে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই স‌ঙ্গে বাংলা‌দেশ ব্যাংকে চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন কর‌তে ব‌লা হয়। এরপর আবারও চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য বাংলা‌দেশ ব্যাংকে আবেদন ক‌রে‌ন চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যাংক কর্মীরা। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার প্রায় ৩ বছর হলেও এখন পর্যন্ত একজন ব্যাংকারকেও চাকরিতে পুনর্বহাল করেনি।

লিখিত বক্তব্যে ব্যাংকাররা জানান, করোনাকালীন সময়ে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের মানব সম্পদ বিভাগ তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দেশে বিভিন্ন অমানবিক প্রক্রিয়ায় তাদের অনেক কর্মীকে পদত্যাগে বাধ্য করেন এবং পদত্যাগ না করলে টার্মিনেট করেন। মূলত কয়েকটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের ব্যাংক খাত বিধ্বংসী, হঠকারী, পূর্ব হতে চাকরিরত কর্মকর্তাদের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত মনোভাব, পছন্দের কর্মকর্তাদের পদায়ন করে ইচ্ছামতো ব্যাংক পরিচালনা, নতুন নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে অমানবিকভাবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক পদত্যাগ ও টার্মিনেশনের মাধ্যমে নিরীহ কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়।

করোনার নজিরবিহীন ব্যাপকতায় প্রায় সকল বেসরকারি ব্যাংকে নিয়োগ বন্ধ থাকায় বর্তমানে আমরা চাকরিহীন/বেকার হয়ে সামাজিকভাবে সম্মানজনক অবস্থায় চরম আর্থিক সংকটে মানবেতর জীবন যাপন করছি। দীর্ঘদিন যাবত উপার্জনহীন অবস্থায় পরিবারের ভরণপোষণ ও সন্তানের শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করা আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই তাদের সন্তানদের লেখাপড়া বিঘ্ন সৃষ্টি সত্ত্বেও তাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে বাঁচার তাগিদে তাদের শেষ সম্বল বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। 

এমনি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জারি করা বিআরপিডি সার্কুলার নং ২১ এর নির্দেশনা অনুযায়ী চাকরিতে পুনর্বহাল চান ব্যাংকাররা।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মো. মাহবুব আলম এ জেড এম রিয়াদ খান, ইস্টার্ন ব্যাংকের ইমন কুমার চৌধুরী, যমুনা ব্যাংকের মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।  

এসআই/এনএফ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *