কুড়িগ্রামের গরমের মধ্যে তীব্র লোডশেডিংয়ে কাহিল জনজীবন

কুড়িগ্রামের গরমের মধ্যে তীব্র লোডশেডিংয়ে কাহিল জনজীবন

কুড়িগ্রামে গত কয়েকদিন ধরে গরমের মধ্যে তীব্র হয়ে উঠেছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জেলাবাসীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা।

কুড়িগ্রামে গত কয়েকদিন ধরে গরমের মধ্যে তীব্র হয়ে উঠেছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জেলাবাসীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এবং গরমের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কষ্ট পাচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। এতে করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়ছেন অনেকে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসায় লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

কয়েকদিন ধরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দাসহ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল গৃহস্থালি কাজে ব্যাঘাত ঘটায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাগামহীন লোডশেডিং চলছে পল্লী বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনেও। পল্লীবিদ্যুতের আওতাধীন এলাকাগুলোতে দিনে রাতে এক ঘণ্টা পর পর চলছে ঘণ্টা খানেকের লোডশেডিং। আবার কোথাও কোথাও লোডশেডিংয়ের মাত্রা তার চেয়েও বেশি। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকরা।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনাবৃষ্টিতে আমন ক্ষেতে সেচ দিতে হচ্ছে কৃষকদের। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সেচ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেচ প্রকল্পের বেশিরভাগ গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের আওতাভুক্ত হওয়ায় আমন চাষে লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে। বাধ্য হয়েই অনেক কৃষক ডিজেলচালিত শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন।

বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ গ্রাহকদের মধ্যে সামর্থবানরা ঝুঁকছেন আইপিএসের দিকে। তবে রুটিন মেনে চলা লোডশেডিংয়ে আইপিএসের ব্যাটারি চার্জ করা নিয়েও সংশয়ে পড়েছেন তারা। এ অবস্থায় দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের পল্লীবিদ্যুৎ গ্রাহক মোক্তার আলী জানান, বাড়িতে ছোট বাচ্চা ও বৃদ্ধ মানুষ আছে। রাতে হিসাব করে এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। গরমে কেউই থাকতে পারছি না।

কুড়িগ্রাম পৌর শহরের ব্যবসায়ী আবু মিয়া জানান, এক ঘণ্টা পর পর কারেন্ট যায়। মাঝে মধ্যে টানা দেড় থেকে দুই ঘণ্টাও লোডশেডিং চলে। ব্যবসা হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা করা যাবে না।

চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ার কারণ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদন ঘাটতির কথা বলছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সরকারি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টালসহ পাঁচ ধরনের পাওয়ার প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। তবে সব প্লান্টের জ্বালানি সরবরাহ করে পিডিবি। বর্তমানে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছে।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কুড়িগ্রাম কার্যালয় জানায়, কুড়িগ্রামের টগরাইহাট গ্রিডে জেলার পাঁচটি উপজেলার (সদর, উলিপুর, চিলমারী, রাজারহাট ও ভূরুঙ্গামারী) জন্য মোট চাহিদা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৮ থেকে ৪৫ মেগাওয়াট।

কুড়িগ্রাম শহরে নেসকোর আওতাধীন প্রায় ৩৩ হাজার গ্রাহক আছে। তাদের আওতায় বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে ১৩ মেগাওয়াট। এই চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৭ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এছাড়াও ন্যাশনাল লোড ডিসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) থেকে স্ক্যাডা অপারেশনের মাধ্যমে সরবরাহ বন্ধ করলে লোডশেডিংয়ের সময় আরও প্রলম্বিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আতিফুর রহমান বলেন, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেক বা তারও কম। ফলে লোডশেডিং চলছে। সহসাই পরিস্থিতির উন্নতি হবে কিনা তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।

কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মহিতুল ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রামে আমাদের প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহক। আমরাও চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম পাচ্ছি। ফলে আমাদের আওতাধীন সঞ্চালন লাইনে ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ লোডশেডিং চলছে। পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়ে উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন বলেও জানান তিনি।

মো. জুয়েল রানা/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *