স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আমলে সরকারের ছত্রছায়ায় এস আলম, বেক্সিমকোসহ দেশের বেশ কয়েকটি বৃহৎ শিল্প গ্রুপকে ব্যাংক থেকে অর্থ লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এসব গ্রুপের মালিকেরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। ফলে দীর্ঘ সময়জুড়ে দেশে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। এর সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ রীতিমতো পিষ্ট। দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে শুধু ব্যাংক খাত নয়, পুরো অর্থনীতিতে শুরু হয় রক্তক্ষরণ।
স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আমলে সরকারের ছত্রছায়ায় এস আলম, বেক্সিমকোসহ দেশের বেশ কয়েকটি বৃহৎ শিল্প গ্রুপকে ব্যাংক থেকে অর্থ লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এসব গ্রুপের মালিকেরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। ফলে দীর্ঘ সময়জুড়ে দেশে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। এর সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ রীতিমতো পিষ্ট। দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে শুধু ব্যাংক খাত নয়, পুরো অর্থনীতিতে শুরু হয় রক্তক্ষরণ।
ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন নোবেল জয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নিয়ে রীতিমত চ্যালেঞ্জে পড়ে তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তারপরও ১৬ বছরে ক্ষত-বিক্ষত হওয়া অর্থনীতি তথা আর্থিক খাত পুনরুদ্ধারে শুরু হয়েছে নানা সংস্কারমূলক পদক্ষেপ।
১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার যেসব উদ্যোগ নিতে পারেনি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ৬০ দিনের মধ্যেই সেসব উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। আর্থিক খাতের উচ্চ পর্যায়ে আনা হচ্ছে নানা পরিবর্তন।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দৃশ্যমান বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যেখানে হাত দেওয়ার সাহস পায়নি কেউ, সেই বড় বড় রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে। সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন নীতির ক্ষেত্রেও।
তবে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতি’ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এখনো পুরোনো সিন্ডিকেটের কবলে নিত্যপণ্যের বাজার। এছাড়া শিল্প খাতে বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে চলছে অস্থিরতা।
অর্থনীতির পরিস্থিতি
শেখ হাসিনা সরকার দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত প্রায় পঙ্গু করে দিয়েছে। ব্যাংক, বিমা, শেয়ারবাজার থেকে ইচ্ছামতো অর্থ আত্মসাৎ করেছে সরকারের লোকেরা। এস আলম, বেক্সিমকোসহ কয়েকটি বৃহৎ শিল্প গ্রুপকে ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণের বোঝা রেখে গেছে হাসিনা সরকার। রেকর্ড ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে খেলাপি ঋণ। এর মধ্যে শুধু আওয়ামী লীগের আমলে (১৫ বছর ৮ মাসে) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। ফলে লাগামহীন খেলাপি ঋণ, কিছু ব্যাংকে অর্থ সংকট, ডলার ও রিজার্ভ সংকটে ব্যাংক খাতের অবস্থা তথৈবচ।
সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই তলানিতে। মানুষ এখনো মূল্যস্ফীতির চাপে হিমশিম খাচ্ছে। সেপ্টেম্বরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে।
অর্থ পাচার ঠেকাতে না পারা ও বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের বিষয়ে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে ডলার সংকট। ফলে যে ডলারের দাম ৮৬ টাকা ছিল এখন তা ১২০ টাকায় উঠেছে। রাজস্ব আহরণ তলানিতে নেমেছে। আস্থাহীন হয়ে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার।
আর্থিক খাতে নেতৃত্বের পরিবর্তন
নতুন এ সরকার সবার আগে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু করে। প্রথমে নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আনে। অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। দুজনেই বিগত সরকারের আমলে অর্থনীতির লুটপাট নিয়ে আগে নানা সমালোচনা করেছেন। তাই তাদের জানা আছে কোন কোন খাতে পরিবর্তন দরকার।
ব্যাংক খাতের লুটপাটের সবচেয়ে বড় সহযোগী সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করেন আর দুই ডেপুটি গভর্নরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরকে।
পরিবর্তন এসেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানসহ প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলামকে সরিয়ে দিয়ে সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শিবলী রুবাইয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একেবারে শেষ মুহূর্তেও তিনি বিশেষ সুবিধা দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান পদ থেকে আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আব্দুর রহমান খানকে এনবিআরের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আবু আহমেদকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের আগের চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে নতুন চেয়ারম্যান বসিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) অপসারণ করা হয়েছে। যারা সবাই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পেয়েছিলেন।
এস আলম মুক্ত ব্যাংক খাত
বিধ্বস্ত ব্যাংক ও আর্থিক খাত ঢেলে সাজাতে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব কাজে হাত দেওয়া তো দূরের বিষয় কথা বলারও সাহস পায়নি কেউ। গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সেই কাজটি প্রথমে শুরু করেন ড. আহসান এইচ মনসুর। নেন প্রভাবশালীদের হাত থেকে ব্যাংক দখলমুক্ত করার উদ্যোগ।
প্রথমে এস আলমের দখলে থাকা ৮টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে দখলমুক্ত করেছে। এগুলো হলো, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এছাড়া, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকেরও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল প্রভাবশালী এ গ্রুপটি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংক ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় আটটি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল এস আলম গ্রুপ।
এছাড়া আরও তিনটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়। তিন ব্যাংক হলো— আইএফআইসি, ইউসিবি ও এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দখলে ছিল আইএফআইসি ব্যাংক, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। এক্সিম ব্যাংকের দখলে ছিলেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। এছাড়া মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি ‘নগদ’ এর পর্ষদ ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। সব মিলিয়ে ১১টি ব্যাংকসহ মোট ১২ প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ ভেঙে নতুন করে পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকিং খাত সংস্কারে টাস্কফোর্স
ব্যাংকিং খাত সংস্কারে ৬ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই টাস্কফোর্স টাস্কফোর্স আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন সংস্কার, ব্যাংক খাতের সম্পদ, ঋণ, ঝুঁকি ও প্রকৃত আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করবে। পাশাপাশি এ খাতের সংস্কার ও যুগোপযোগী করার প্রস্তাব এবং ব্যাংকিং খাতের শ্বেতপত্র প্রকাশের পদক্ষেপ নেবে। টাস্কফোর্সের সার্বিক সমন্বয় করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়-সংক্রান্ত বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুহাম্মদ এ. (রুমি) আলী, ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহরিয়ার এম হাসান, বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সাইন্স এর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এম জুবায়দুর রহমান এবং হুদা ভাসি চৌধুরী এন্ড কোং পার্টনার সাব্বির আহমেদ।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এ টাস্কফোর্স প্রধানত আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে ব্যাংকিং খাতের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি, মন্দ সম্পদ এবং প্রধান প্রধান ঝুঁকিসমূহ নিরূপণ, দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচক পর্যালোচনা, ঋণের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ, প্রভিশন ঘাটতি নিরূপণ, তারল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা, নীট মূলধন নির্ণয়, সম্পদের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মন্দ সম্পদকে পৃথক করা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এছাড়াও, টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সংকটকালীন প্রতিঘাত সক্ষমতা অর্জনে ব্যাংকের সুশাসন এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ প্রক্রিয়ার আওতায় রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক উন্নয়ন, ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনৈতিক এবং কর্পোরেট প্রভাব সীমিতকরণ, ব্যাংকের মালিকানা সংস্কার ইত্যাদি সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রদান, প্রবলেম ব্যাংকের জন্য রিকভারি এবং রেজুলেশন ফ্রেমওয়ার্ক ও সংশ্লিষ্ট গাইডলাইন প্রস্তুতকরণ, দুর্বল ব্যাংকসমূহের জন্য বিভিন্ন নীতিগত ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এদিকে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে গত ২৮ অগাস্ট দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। শ্বেতপত্রে সরকারি পরিসংখ্যানের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা; সামষ্টিক অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ; জিডিপি প্রবৃদ্ধির পর্যালোচনা; মূল্যস্ফীতির ধারা এবং তার অভিঘাত; দারিদ্র্য, অসমতা ও বিপন্নতা; অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ; সরকারি ব্যয় বরাদ্দে অগ্রাধিকার মূল্যায়ন; বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য বিষয়ে আলোচনা করবে। ইতিমধ্যে শ্বেতপত্র প্রণয়নে কমিটি কাজ শুরু করেছে।
এছাড়া বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তসংস্থা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। প্রথমবারের মতো এ টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে।
এদিকে ৭ অক্টোবর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ চেইন তদারক ও পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে এই বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদের মূল্যায়ন
যে কঠিন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে দুই মাসে যেসব সংস্কার কাজের যেমন প্রশংসা করেছেন অর্থনীতিবিদরা, তেমনে কিছু ব্যর্থর সমালোচনাও করেছেন। বর্তমান সরকারের প্রথম দুই মাসে আর্থিক খাতে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মূল্যায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়ে আর্থিক খাতে বেশ কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। অনেক বড় বড় রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। যেখানে হাত দেওয়ার সাহস পায়নি কেউ, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রভাবশালীদের কাছ থেকে ব্যাংক দখলমুক্ত করেছে-এই দৃষ্টান্ত প্রশংসনীয়।
প্রশংসার সঙ্গে সরকারের সমালোচনাও করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এটি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সবার প্রত্যাশা ছিল নতুন সরকার নিত্যপণ্যের বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে দেবে। কিন্তু তা পারেনি। এখনো পুরানো সিন্ডিকেট নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া শিল্প খাতে বিশেষ করে তৈরি পোশক খাতে এখনো অস্থিরতা চলছে। কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছি কিন্তু স্থিতিশীল হয়নি।
এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পুরোপুরি সক্রিয় না হওয়াকে দায়ী করেন-অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ।
বাড়ছে রেমিট্যান্স
গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রেক্ষাপটে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাবে না বলে হুমকি দেন প্রবাসীরা। আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিরে কথা বলে প্রতিবাদ হিসাবে দেশে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন অনেক প্রবাসী। যার প্রভাব পড়েছিল প্রবাসী আয়ে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ছিল গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এরপর নতুন সরকার গঠনের পর আবার দেশ গঠনে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন শুরু করেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর ফলে আবারও প্রবাসী আয় বাড়তে শুরু করে। আগস্ট মাসে দেশে প্রবাসী আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২২২ কোটি মার্কিন ডলারে (২ দশমিক ২২ বিলিয়ন)।
গত সেপ্টেম্বর মাসের দেশে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৮ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা ( প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)। কোনো একক মাসে এত প্রবাসী আয় গত চার বছরে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৫৪ কোটি ডলার এবং তারও আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯১ কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৩ কোটি ডলার।
এসআই/এসকেডি