এস আলমের বাড়ির কাজের মেয়ের সম্পদের পাহাড় যেভাবে

এস আলমের বাড়ির কাজের মেয়ের সম্পদের পাহাড় যেভাবে

দেশের শীর্ষস্থানীয় বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম ওরফে এস আলমের বাসার কাজের মেয়ে মর্জিনা আক্তার। বিপুল সম্পদের সন্ধান মিলেছে তার। বিষয়টি জেনে বিস্মিত হয়েছেন তার গ্রাম ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার রাউতির বাসিন্দারা। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

দেশের শীর্ষস্থানীয় বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম ওরফে এস আলমের বাসার কাজের মেয়ে মর্জিনা আক্তার। বিপুল সম্পদের সন্ধান মিলেছে তার। বিষয়টি জেনে বিস্মিত হয়েছেন তার গ্রাম ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার রাউতির বাসিন্দারা। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

স্থানীয়রা জানান, মর্জিনা আক্তার দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। বিগত ছয় বছর আগে আর্থিক অনটনের কারণে মেয়েকে গৃহকর্মী হিসেবে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন মর্জিনার বাবা। সেখানে গিয়ে কাজ করার সুযোগ পান ব্যবসায়ী এস আলমের বাসায়। এতেই ভাগ্য খুলে যায় মর্জিনার। সুন্দর চেহারা, স্মার্ট ও চঞ্চল প্রকৃতির মর্জিনা সব সময় এস আলমের সঙ্গেই থাকতেন। তার সঙ্গে বিভিন্ন সময় দেশের বাইরেও গিয়েছেন তিনি।

এরই মধ্যে একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী বাঘবেড় গ্রামের আব্দুস সামাদের সঙ্গে বিয়ে হয় মর্জিনার। কিন্তু স্বামীর সংসারে থেকেই সামাদের ছোটভাই সাদ্দামের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এরপর ঘটনাটি জানাজানি হলে স্বামী সামাদকে ডিভোর্স দিয়ে দেবর সাদ্দামকে বিয়ে করে মর্জিনা।

গ্রামবাসি আরও জানান, সাদ্দামের সঙ্গে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী দু’জন মিলেই এস আলমের বিভিন্ন সম্পদ নিজেদের নামে করতে থাকেন। এ কারণে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে সাদ্দাম-মর্জিনা দম্পতি বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ক্রয় করেন দামি দামি জমি। এর মধ্যে স্থানীয় ডাকবাংলোর সামনে কিনেছেন প্রায় ১৫ কাটা, একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে শিবানন্দখিলা গ্রামে ২০ দশমিক ৩২ একর জমি, প্রভাব খাটিয়ে সরকারি দেড় একর জমি কেনার পাশাপাশি ও রাস্তা দখল করে গড়েছেন মাছের খামার।

অপর একটি সূত্র জানায়, লেখাপড়া জানার কারণে সাদ্দাম এবং মর্জিনা বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রাম শাখায় চাকরি করেন। এ সুবাদে মর্জিনার তার আপন ভাইদেরও ইসলামি ব্যাংকে চাকরি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে এলাকার বেশ কিছু লোককে টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন মর্জিনা। এভাবেই বিত্তবান বনে গিয়ে গ্রামে নির্মাণ করেছেন পাকা বাড়ি। রাউতি গ্রামে কিনেছেন অন্তত দশ একর জমি। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে একটি মার্কেট নির্মাণের কাজও চলছে তাদের নামে। বর্তমানে ধোবাউড়া অন্তত ১০ কোটি টাকার সম্পদ আছে সাদ্দাম ও মর্জিনা দম্পতির।

স্থানীয় আব্দুল হালিম নামে এক ব্যক্তি জানান, হঠাৎ করে বড়লোক হয়ে যাওয়া মর্জিনার গ্রামের বাড়িতে আসতেন দামি প্রাইভেটকারে চড়ে। এলাকায় তারা এখন বড়লোক হিসেবে পরিচিত। তবে অল্প সময়ে তারা কীভাবে এত সম্পদ গড়েছেন, তা আমার জানা নেই। শুনেছি মর্জিনা এক বড়লোকের বাসায় কাজ করতেন। সেখানে থেকে তিনি নাকি এখন চাকরি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, হঠাৎ বড়লোক হয়ে মর্জিনার স্বামী সাদ্দাম বিমানে ও ভিআইপি গাড়িতে চলাচল করেন। তবে বর্তমানে তারা এলাকায় আসেন না। শুনেছি তারা পলাতক আছেন।

উপজেলার পুড়াকান্দলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, পত্রপত্রিকায় ওদের অনেক সম্পদ থাকার বিষয়ে জেনেছি। তবে বর্তমানে তারা এলাকায় আসেন না।

তবে ৫ আগস্টের পর সরকারি জমি দখল করে করা মাছের খামার থেকে দেড় একর প্রশাসন উদ্ধার করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন। তিনি ঢাকাপোষ্টকে বলেন, তাদের মাছের খামার থেকে সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিধি বহির্ভূতভাবে তাদের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে করা নামজারিটিও ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া নামে-বেনামে তাদের বিরুদ্ধে অনেক সম্পদ রয়েছে বলে আমরা শুনেছি। কিন্তু এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় প্রশাসনের অপর একটি সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্টের পর মর্জিনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। এছাড়া তার নামে কয়েকটি ব্যাংকে ২২টি এফডিআরে ১ কোটি টাকা জমা রাখার সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে দাবি ওই সূত্রের।

ওই অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রবর্তক মোড় শাখায় মর্জিনা আক্তারের নামে গত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ১ কোটি ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নগদ ও চেকের মাধ্যমে এসব অর্থ জমা হলেও কিছুদিনের মধ্যে সেই অর্থ উত্তোলন করা হয়। তবে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হলেও সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মর্জিনা আক্তারের ব্যাংক হিসাবে জমা আছে মাত্র ৬০৫ টাকা।

এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মর্জিনা ও সাদ্দামের কোনো বক্তব্য জানা যায়নি। বর্তমানে তারা পলাতক আছেন বলে দাবি করছেন গ্রামবাসীরা।

তবে মর্জিনার ভাই খাইরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সুমন নামে এক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করেন। তিনি নিজেকে খাইরুল ইসলামের ব্যবসার ম্যানেজার পরিচয় দেন। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। খাইরুল ভাই এলে ফোন দিতে বলব। কিন্তু পরে সেই নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মো. আমান উল্লাহ আকন্দ/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *