আমরা জানি যে, অতি বৃষ্টি হলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিধিবদ্ধ সংজ্ঞা হচ্ছে, কোনো অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টায় ন্যূনতম ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা স্থানীয় আর ৩০০ মিলিমিটার হলে ১০ দিনব্যাপী বা মধ্যমেয়াদি বন্যার সৃষ্টি হয়। এর সঙ্গে মানবসৃষ্ট কারণও যুক্ত হয়? উত্তর হচ্ছে, হয়। ভয়ঙ্করভাবে। যা বর্তমানে বাংলাদেশ মোকাবিলা করছে।
এখন পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও দেশি-বিদেশি সংস্থার আবহাওয়ার পূর্বাভাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশের পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতি আরও কমপক্ষে তিনদিন স্থায়ী হতে পারে। ইতিমধ্যে বৃষ্টিপাত কমে এসেছে। নতুন করে আর ভারি বৃষ্টি না হলে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, শ্রীমঙ্গল ও চাঁদপুরে বন্যা পরিস্থিতি নতুন করে অবনতি ঘটবে না।
যদিও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আরও কয়েকদিন ভারি বৃষ্টিপাত হবে। তবে সাঙ্গু ও কর্ণফুলীর মতো অন্যান্য খরস্রোতা নদীর বিদ্যমান নাব্যতা ওই তিন জেলায় পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ ধারণে প্রতিবন্ধক হতে পারে। অর্থাৎ, পরিস্থিতি ফেনী-কুমিল্লার মতো অতটা অবনতি নাও ঘটতে পারে। কিন্তু ওই অঞ্চলে পাহাড় ধস ও এতে মৃত্যুর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সবমিলিয়ে ২৬ আগস্ট থেকে পরিস্থিতি উন্নতির আশা করা যেতে পারে। এর মানেই এই নয় যে, বন্যা সেদিনই শেষ হয়ে যাবে।
এবারের এই বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণের কারণ অনেকটাই মানবসৃষ্ট। এর একটি আন্তর্জাতিক, বাকিগুলো অভ্যন্তরীণ। বর্ষায় ভারি বৃষ্টি এবং এর থেকে বন্যা সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। অতীতে এর চেয়েও বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
আমরা তথ্য প্রমাণসহ তা নিচে উল্লেখ করব। পাশাপাশি আগে কয়েকগুণ বেশি বৃষ্টি সত্ত্বেও কেমন বন্যা হয়েছে, সেই তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি বা পাবলিক লাইব্রেরিতে গেলে পুরোনো পত্রিকা ঘেঁটে হয়তো আগ্রহীরা তথ্য মিলিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু এবারে অল্প বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও যে ভয়ঙ্কর বন্যা হয়েছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে।
বলা হচ্ছে, পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই ভারত আকস্মিক বাঁধের গেট খুলে দেওয়ায় অনেকটা চোখের পলকে ডুবে গেছে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বন্যার এটা আন্তর্জাতিক কারণ। আর অভ্যন্তরীণ কারণের মধ্যে আছে—নদীর নাব্যতা হ্রাস, পুকুর-দীঘি, খাল-বিলের মতো স্থানীয় রিজার্ভারের বিলুপ্তি, সাগর মোহনা ভরাট হয়ে যাওয়া, অপরিণামশদর্শী উন্নয়ন প্রকল্প এবং সর্বোপরি মৌসুমী বায়ুর দাপট ও নদী-সাগরে ভরাকটাল বা জোয়ারের প্রভাব। এটা অভ্যন্তরীণ কারণ। অর্থাৎ উভয় কারণই মানবসৃষ্ট।
একটু বিস্তারিত যদি বলি। মেঘনায় অসংখ্য ডুবোচর নদীর নাব্যতা খেয়ে ফেলেছে। একই অবস্থা গোমতী, সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদীর। নদী নিজে যেমন বাড়তি পানি ধারণ করতে পারেনি। তেমনি সাগরে পাঠিয়ে দিয়ে নিষ্কাশনেও সহায়তা করতে পেরেছে খুবই কম।
আবার একসময়ে উল্লিখিত অঞ্চলে অনেক খাল-বিল-দীঘি ও বড় পুকুর ছিল। যার অনেকটা দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। গোটা বাংলাদেশই ভাটির অঞ্চল। কেবল বর্তমানে বন্যা কবলিত এলাকাই নয়, বরিশাল বিভাগের বা উপকূলীয় জেলাগুলোয় অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্টও এই বন্যায় অবদান রাখতে পারে।
আবার বিল-ঝিল দখল করে তৈরি হয়েছে নানান ইন্ডাস্ট্রি। তাই পানি সংরক্ষিত না হয়ে তা লোকালয়ে ঢুকে গেছে। সাগর মোহনায় চর পড়ে তৈরি হয়েছে আরেক বাংলাদেশ। এ কারণেও পানি প্রবাহে ও নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা ছিল, আছে। ভরাকটালের কারণে সাগরে এবং উপকূলীয় নদ-নদীতে বাড়তি পানি ছিল। ফলে উজান থেকে স্বাভাবিকভাবে পানি নামতে পেরেছে কম।
নানান উন্নয়ন প্রকল্প হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিবর্তিত পরিস্থিতি না ভেবেই। কেননা, আমরা জানি যে, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রভাব হচ্ছে, আবহাওয়া ব্যবস্থায় নজিরবিহীন পরিবর্তন। যখন গরম পড়ে তখন তা অতীত রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। অনাবৃষ্টি হলে তাও রেকর্ড ভাঙে। যখন বৃষ্টি হয়, তখন অল্প সময়ে এত হয় যে, তাকে কেবল অতিবৃষ্টিই নয় রেকর্ড-ব্রেকিং ইভেন্ট বলা যায়। এখন যেকোনো উন্নয়ন কাজ যেমন কালভার্ট, ব্রিজ, সড়ক-টানেল নির্মাণ কতটা প্রভাব ফেলেছে সেটা স্টাডি করা খুবই জরুরি।
আলাপকালে বৃহস্পতিবার রাতে একজন আবহাওয়া বিজ্ঞানী আমাকে জানালেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল এই প্রবাহে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, সেটা স্টাডি করে দেখা যেতে পারে। তেমনি হাওরের সেই আলোচিত সড়ক কিংবা অন্যান্য স্থানের কালভার্ট-ব্রিজ সম্পর্কে স্থানীয়দের অভিজ্ঞতাভিত্তিক বক্তব্য নিয়ে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা চালানো যেতে পারে।
এখন আসি এবারের বন্যার কিছু রেকর্ড সম্পর্কে। ফেনীতে একদিনে ৪২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০০৫ সালে ৪২০ মিলিমিটার। ১৯৮২ সালের ৭ জুলাই ২৮০ মিলিমিটার, ১৯৭৫ সালের ১০ অক্টোবর ৩৩৯ মিলিমিটার আর ২০১৭ সালের ২ আগস্ট ২৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।
অন্যদিকে এবারে ১৯ আগস্ট ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। কুমিল্লায় ৬৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় ১৯৫৮ সালের ৩ আগস্ট ৪৪২ মিলিমিটার। এর দু’বছর আগে ১৯৫৬ সালে ৩ জুন ৩১৬ এবং ১৯৯৯ সালে ৩৩৩ মিলিমিটার হয়। আর এবারে ওই জেলায় ২১ আগস্ট ১৮৮ এবং ১৯ আগস্ট ১৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
অন্যান্য জেলা সম্পর্কেও কিছু দিই। নোয়াখালীতে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ১৯৮১ সালের ১৮ জুলাই। সেদিন ৫২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। একই জেলায় ১৯৮৩ সালের ৩ আগস্ট ৩১৭ মিলিমিটার, ২০০৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ৩৭৬ মিলিমিটার ও ২০১০ সালর ১০ আগস্ট ২৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে ১৯ আগস্ট ১৭৪ আর ২১ আগস্ট ১৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। শ্রীমঙ্গলে এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ১৯৭৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ৫১৪ মিলিমিটার। এছাড়া ২০০৫ সালের ১৮ মে ৩১৯, ১৯৮৪ সালে ৩১৩, ১৯৫২ সালের ১৯ আগস্ট ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। চাঁদপুরে এর আগের রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয় ১৯৮৪ সালে ৩২৪ মিলিমিটার। একই স্থানে ১৯৬৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ৩১৯ মিলিমিটার, ১৯৮২ সালের ৩ আগস্ট ৩শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। বিপরীতদিকে ২১ আগস্ট সেখানে বৃষ্টিপাত হয় একদিনে ১৪০ মিলিমিটার।
এবার চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকা প্রসঙ্গে আসি। রাঙামাটিতে এর আগে ১৯৬০ সালের ২১ জুলাই সর্বোচ্চ ৩৫২ এবং ২০০৪ সালের ১১ জুলাই ৩৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড পাওয়া যায়। মাঝখানে ১৯৮৩ সালে ৩৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় ওই স্থানে। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত ১৬ আগস্ট ১৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
চট্টগ্রামে এর আগে ১৯৮৩ সালের ৪ আগস্ট ৫১১ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড আছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে। এর একমাস আগে ৫ জুলাই একই স্থানে ৪০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ২০২১ সালের ২৭ জুন ৪৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় সেখানে। কিন্তু ২০ আগস্ট সেখানে বৃষ্টিপাত হয় ১১৩ মিলিমিটার।
কক্সবাজারের তথ্য উপাত্ত দিয়ে শেষ করব। সেখানে এর আগে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৪৬৭ মিলিমিটার, যা হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৫ জুন। ৩৩৪ মিলিমিটার সেখানে রেকর্ড করা হয় ১৯৬৯ সালের ২ আগস্ট। অন্যদিকে ১৭ ও ১৮ আগস্ট একই স্থানে বৃষ্টির রেকর্ড যথাক্রমে ১৪০ ও ১৪১ মিলিমিটার।
এসব তথ্য-উপাত্ত বলছে, অতীতের তুলনায় এবারের রেকর্ড বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক কম। এটা ঠিক যে, ১৯ আগস্টের আগে-পরে মাঝারি থেকে ভারি ধরনের বৃষ্টিপাত ছিল। কিন্তু তা এমন প্রলয়ংকরী বন্যা হওয়ার মতো ছিল না। বাংলাদেশে যেসব সংস্থা আবহাওয়া এবং বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সেগুলোর মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) অন্যতম।
এই দুই সংস্থা আগাম পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। তাদের বুলেটিনগুলোয়ও এমন চিত্র মিলেছে। ১৫ আগস্ট থেকে এফএফডব্লিউসির বুলেটিনগুলো দেখলাম। কোনোটিতেই ‘মোটামুটি বন্যা’ হওয়ার সতর্কতা পর্যন্ত নেই। সিলেট ও ফেনী-কুমিল্লা অঞ্চলের ব্যাপারে কখনো ‘সময় বিশেষে’ আবার কখনো ‘স্বল্পসময়ের জন্য’ বন্যার কথা বলা আছে।
এমনকি ২০ আগস্টে এফএফডব্লিউসির বুলেটিনে বলা আছে, পরিস্থিতি ‘স্থিতিশীল’ থাকতে পারে। অর্থাৎ, স্বল্পসময়ের বা সময় বিশেষের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে। আবার ওইদিন দেশের মাত্র তিনটি নদী মুহুরী, খোয়াই আর ধলাই বিপৎসীমার উপরে ছিল। আগেরদিন কোনো নদীই বিপদসীমার উপরে ছিল না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এফএফডব্লিউসির এই বুলেটিনের তথ্য যদি সঠিক হয়, তাহলে হঠাৎ এত বানের পানি এলো কোথা থেকে? উজানে ভারতের রাজ্যগুলোয় বৃষ্টি হলে তা ভাটির দেশ বাংলাদেশে নেমে আসবে স্বাভাবিক। আবার এটাও ঠিক যে, মধ্য আগস্টের পরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ পূর্বাঞ্চলের ৭ রাজ্যে বৃষ্টিপাত হয়েছে। ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ভারত বাঁধ খুলে দেয়নি। এক্ষেত্রে হয় তারা ভুল পূর্বাভাসের ওপর ছিল এবং নিজেদের প্রয়োজনে বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে চেয়েছিল। পরে পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় নিজের জনগণকে বাঁচাতে পানি ছেড়ে দিয়েছে। ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে’ গেট খুলে গেছে—এমন যুক্তি কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তাছাড়া আন্তর্জাতিক নদীতে তারা এভাবে বাঁধ দিতে পারে না। এবং ভাটির দেশকে সতর্ক না করে পানি এভাবে ছাড়তেও পারে না। পানি যদি ছাড়তেই হয় তাহলে আগাম কথা বলে এবং যাতে ক্ষতি না হয় সেইভাবে গেট খুলে দিতে হয়।
আরেকটি দিকে আপনাদের নজর নিয়ে যেতে চাই। আমি একযুগের বেশি পরিবেশ, জলবায়ু, বন্যা ও আবহাওয়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি বা সাংবাদিকতা করেছি। মাঝারি ধরনের বন্যারও দুই সপ্তাহ আগে থেকে আমরা সতর্কতামূলক প্রতিবেদন তৈরি করেছি। এ ক্ষেত্রে এবার কোনো পত্রিকা আগাম রিপোর্ট করেছে বলে আমার নজরে পড়েনি।
হতে পারে প্রবাসে থাকায় নিউজ চোখ এড়িয়ে গেছে। কিন্তু সব সংস্থার আপডেট আমি নিয়মিত পেয়ে থাকি। হতে পারে পরিস্থিতি তেমন ছিল না বলেই পত্রপত্রিকা বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়নি। আবার এমন একটি প্রাকৃতিক বন্যা আসবে আর বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বসে থাকবে—এমনটি কী হতে পারে? যদি হয় সেটা তদন্তের বিষয় অবশ্যই। কেননা, এখনো ফ্যাসিস্টদের মিত্ররা বিভিন্ন জায়গায় পদায়িত আছে। কিন্তু আমি যতজনের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের বক্তব্য হচ্ছে, যতটুকু হওয়ার কথা ছিল, ততটুকুই বুলেটিনে বলা হয়েছে। এখন ধ্বংসযজ্ঞের দায় ভারতের বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার।
নামপ্রকাশ না করে বিএমডির একজন বিজ্ঞানী বলেন, তারা সর্বদা নজর রেখেছেন পরিস্থিতির দিকে। ২ আগস্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে কী আছে সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। যদি বন্যার কথা থেকে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কেন উপদেষ্টার নজরে নেননি সেই জবাবদিহিতা চাওয়া যেতে পারে।
আর এফএফডব্লিউসির এক প্রকৌশলী জানান, যে নজিরবিহীন বন্যা দেখছি, কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত তা ঘটাতে পারে না। যদি আগে থেকেই ভারত বাঁধ খুলে রাখত, তাহলে হঠাৎ এত পানি আসতো না। আর বাংলাদেশ ভেসেও যেত না।
পরিবেশ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন এমন একজন আইনজীবী যিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন আর অধিকার সম্পর্কেও যিনি বিশেষজ্ঞ-সচেতন। আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কেবল বিশেষজ্ঞই নন, উচ্চতর ডিগ্রিও নিয়েছেন পশ্চিম থেকে। তাই সরকার ভারতের এমন পানি-আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবশ্যই সোচ্চার ও প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। অভিন্ন ৫৪ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে।
সরকারের মনে রাখা উচিত যে, জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছা এবং গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই তারা ক্ষমতায় গেছে। তারা জনবিচ্ছিন্ন বা ৫-শতাংশ মানুষের ভোটে ক্ষমতা দখলকারী নয়। স্বাধীন বাংলাদেশের যেকোনো সরকারের চেয়ে তাদের প্রতি এ দেশের জনগণের সমর্থন বেশি। তাদের সফলতা দেখার জন্য ১৭ কোটি জনতা তাকিয়ে আছে। আর বিপ্লবী ছাত্রজনতা তো এখনো রাজপথেই আছে তাদের সহায়তার জন্য।
আমরা আশা করবো, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আর এভাবে মানবসৃষ্ট বন্যার মুখোমুখি হবে না। সে ব্যাপারে একটা স্থায়ী বন্দোবস্ত করতে সক্ষম হবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।
মুসতাক আহমদ, উইসকনসিন, যুক্তরাষ্ট্র