ঢাকার সাভারে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর ভ্যানে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া ছয়জনের একজন কুমিল্লার আবুল হোসেন (৩৪)। আশুলিয়া বাইপাইল এলাকায় দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি। তাকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। এ অবস্থায় এতিম দুই শিশুকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন স্ত্রী লাকী আক্তার। শিশু দুটির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর মাথাগোঁজার ঠাঁইহীন আবাস ঘুম কেড়ে নিয়েছে আবুলের স্ত্রীর।
ঢাকার সাভারে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর ভ্যানে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া ছয়জনের একজন কুমিল্লার আবুল হোসেন (৩৪)। আশুলিয়া বাইপাইল এলাকায় দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি। তাকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। এ অবস্থায় এতিম দুই শিশুকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন স্ত্রী লাকী আক্তার। শিশু দুটির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর মাথাগোঁজার ঠাঁইহীন আবাস ঘুম কেড়ে নিয়েছে আবুলের স্ত্রীর।
নিহত আবুল হোসেন জেলার মুরাদনগর উপজেলার ফুলঘর গ্রামের মনির মিয়ার ছেলে। সাভারের আশুলিয়া এলাকায় স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন। পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন তিনি। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবুল হোসেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিকভাবে দরিদ্র পরিবারে জন্ম আবুলের। গ্রামে তার থাকার জায়গাটুকুও নেই। বাধ্য হয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় চলে যান। সেখানে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্ত্রী সন্তানের মুখে আহার দিতে দিনমজুরের কাজে নামেন আবুল হোসেন। সেখানে রাজমিস্ত্রীর সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। তার বড় ছেলেটার বয়স ১০ বছর। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলেটার বয়স দুই বছর।
গত ৫ আগস্ট দুপুরের পর মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায় আবুলের। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান মেলেনি। তার খোঁজ না পেয়ে আশুলিয়া থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করতে যান তার পরিবারের লোকজন। থানায় গেলে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। পরে ১৯ আগস্ট সেনাবাহিনী ও শিক্ষার্থীদের চাপে জিডি নিতে বাধ্য হয় আশুলিয়া থানা পুলিশ।
গত ২৯ আগস্ট ভ্যানে তুলে মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার একটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয় ফেসবুকে। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ভ্যানে মরদেহের স্তূপ করছে পুলিশ। পরে এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হলে জানা যায় মরদেহগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভাইরাল সেই ভিডিওতে গায়ে পরা ব্রাজিলের জার্সি ও লুঙ্গি দেখে আবুল হোসেনকে শনাক্ত করেন তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু মরদেহগুলো আর পাওয়া যায়নি।
নিহত আবুলের মা সালমা আক্তার বলেন, ‘আবুল আমার প্রথম সন্তান। তার মরদেহটাও বুকে জড়িয়ে ধরা আমার নসিব (ভাগ্য) হলো না। পুড়িয়ে দিল নির্দয় পুলিশ। এই কষ্ট কারে দেখামু বাবা, এই কষ্ট আমি কারে দেখামু’—বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি।
আবুলের স্ত্রী লাকী আক্তার বলেন, ‘আমার দুইটা সন্তান এতিম হয়ে গেল। বাবাহীন সন্তান দুটিকে নিয়ে আমি কোথায় যাব? তাদের কী খাওয়াব? আমাদের ভাগ্যের সঙ্গে কেন এমন হলো? মেরেছে মেরেছে, মরদেহটা কি আমাদের দেওয়া যেত না? মরদেহটা কেন পুড়িয়ে দেওয়া হলো? সরকারের কাছে আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীর একটা ঘর নেই। গ্রামে এলে শ্বশুরের ঘরেই থাকতাম আমরা। বাচ্চা দুটিকে নিয়ে আমি যে আলাদা একটা ঘরে থাকব সেই ব্যবস্থাও নেই। সরকারের কাছে আমি একটা ঘরের দাবি জানাচ্ছি।
আবুল হোসেনের বাবা মনির মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলের মতো আরও বহু মায়ের সন্তানকে হত্যা করেছে জালিমরা। আমি সকল সন্তান হত্যার বিচার চাই। আমরা দুইটা নাতি এতিম হয়ে গেল। আমার এতিম নাতি দুটির জন্য সরকার যেন কিছু করে সে দাবি জানাচ্ছি। দেশ থেকে স্বৈরাচার তাড়াতেই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল আবুল। আমার ছেলে নিজের জীবন দিয়ে এ দেশকে নতুন করে স্বাধীন করে গেছে। তার রক্তের যেন প্রাপ্য দেওয়া হয়।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবুল হোসেনের পরিবারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সহযোগিতা প্রদান করা হবে। প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে।
আরিফ আজগর/এএমকে