আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও ঘোষণা না দিলেও ফিলিস্তিনকে সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন মিশনের শেয়ার করা একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও ক্লিপিংসে তার ইঙ্গিত মিলেছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও ঘোষণা না দিলেও ফিলিস্তিনকে সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন মিশনের শেয়ার করা একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও ক্লিপিংসে তার ইঙ্গিত মিলেছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯ তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। ফিলিস্তিন মিশনের শেয়ার করা ভিডিও ক্লিপিংটিতে দেখা গেছে, মিশনপ্রধান রিয়াদ মনসুর সদস্যরাষ্ট্রদের জন্য নির্দিষ্ট আসনসারির একটিতে বসেছেন। তার একপাশে বসেছেন শ্রীলঙ্কান মিশনের একজন প্রতিনিধি এবং অপর পাশে সুদান মিশনের একজন প্রতিনিধি।
ভিডিও ক্লিপিংসে আরও দেখা গেছে, অধিবেশন শুরুর পর পয়েন্ট অব অর্ডার পর্বে রিয়াদ মনসুরের আসনের ব্যাপারে মিসরের মিশনের অন্যতম সদস্য ওসামা মাহমুদ আবদেলখালেক মাহমুদ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “এটি কেবল সামান্য পদ্ধতিগত ব্যাপার নয়, বরং অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং সত্যি বলতে, এটি আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।”
জাববে সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট বলেন, “আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। তার (রিয়াদ মনসুর) যেখানে বসা উচিত, সেখানেই তিনি বসেছেন। আমি জানতে পেরেছি যে (ফিলিস্তিনের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার জন্য) যেসব প্রক্রিয়ার প্রয়োজন ছিল, সেসবের বেশিরভাগই শেষের পথে।”
ইসরায়েলের জাতিসংঘ প্রতিনিধিদল অবশ্য এই ঘটানার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ফিলিস্তিনকে সদস্যরাষ্ট্রের আসনে বসতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে জাতিসংঘে প্রবেশের অনুমতি পায় ফিলিস্তিন। এই পরিচায়ভূক্ত দেশ বা ভূখণ্ডগুলো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আলোচনা-বিতর্কে যুক্ত হতে পারে, তবে কোনো প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেওয়ার এক্তিয়ার তাদের নেই।
পর্যবেক্ষক মর্যাদা প্রাপ্তির পর থেকেই স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র পদের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছিল জাতিসংঘের ফিলিস্তিন মিশন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর সেই তৎপরতার গতি আরও বৃদ্ধি পায়।
জাতিসংঘের সনদ অনুসারে, কোনো দেশ যদি এই সংস্থার সদস্য হতে চায়, সেক্ষেত্রে তাকে প্রথমে জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অঙ্গসংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ জোগাড় করতে হয়। আবেদনপত্রের সঙ্গে সেই সুপারিশ সংযুক্ত করলেই কেবল দেশটিকে সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারটি বিবেচনা করে সাধারণ পরিষদ।
গত ৮ এপ্রিল নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠক শেষে পরিষদের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এবং মাল্টার জাতিসংঘ প্রতিনিধি ভানেসা ফ্রেজিয়ের বলেন, জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র পদ ফিলিস্তিন পাবে কি না— সে বিষয়ে এপ্রিল শেষ হওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নেবে নিরাপত্তা পরিষদ।
তার এক মাস পর, মে মাসের ১০ তারিখ ফিলিস্তিন স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রের পদ পাবে কি না— এই ইস্যুতে গণভোট হয় সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে। সাধারণ পরিষদের ১৯৩টি রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৩টি’র প্রতিনিধিরা ফিলিস্তিনকে সদস্যরাষ্ট্রের পদ প্রদানের পক্ষে ভোট দেন।
মঙ্গলবার সদস্যরাষ্ট্রের আসনে ফিলিস্তিনি মিশনপ্রধানের বসাকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘেল মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় গুতেরেস বলেন, “বিশ্ব এখন সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তবে সুসংবাদ হলো— আমরা ভালো কিছু করতে পেরেছি।”
সূত্র : এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল, এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড
এসএমডব্লিউ