খলিলুল্লাহ হজরত ইবরাহিম আ.-এর বড় সন্তান ছিলেন হজরত ইসমাঈল আ.। তিনি মা হাজেরার গর্ভজাত ছিলেন। তার জন্মের সময়ে ইবরাহীম আ.-এর বয়স ছিল ৮৬ বছর। ইসমাঈলের পরে বাধ্যর্কে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ছেলে ইসহাকের জন্মেও সুসংবাদ দান করেন।
খলিলুল্লাহ হজরত ইবরাহিম আ.-এর বড় সন্তান ছিলেন হজরত ইসমাঈল আ.। তিনি মা হাজেরার গর্ভজাত ছিলেন। তার জন্মের সময়ে ইবরাহীম আ.-এর বয়স ছিল ৮৬ বছর। ইসমাঈলের পরে বাধ্যর্কে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ছেলে ইসহাকের জন্মেও সুসংবাদ দান করেন।
বাধ্যর্কে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে এই দুই সন্তানের সুসংবাদ দান করেন। এর প্রেক্ষিতে তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলেন,
اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ الَّذِیۡ وَهَبَ لِیۡ عَلَی الۡكِبَرِ اِسۡمٰعِیۡلَ وَ اِسۡحٰقَ ؕ اِنَّ رَبِّیۡ لَسَمِیۡعُ الدُّعَآءِ
‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বৃদ্ধ বয়সে আমাকে ঈসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার রব দোয়া শ্রবণকারী’। (সূরা ইবরাহিম, আয়াত : ৩৯)
ইসমাঈল আ.-এর জন্মের পর আল্লাহ তায়ালা পিতা-পুত্রের মাধ্যমে বড় দুইটি পরীক্ষা গ্রহণ করেন। প্রথম ছিল ইসমাঈল যখন দুধের শিশু ছিল সেই সময়ের। দুধের শিশু ইসমাঈলকে নির্জন মরুপ্রান্তরে রেখে আসার নির্দেশ দেন আল্লাহ তায়ালা।
বাধ্যর্কে সন্তান লাভের পর কোনো বাবার পক্ষে এমন আদেশ পালন করা সম্ভব নয়। তবে নবী ইবরাহিম আ. বিনা বাক্য ব্যয়ে আল্লাহর আদেশ পালন করেন। এইপরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর আল্লাহ তায়ালা কিশোর বয়সে ইসমাঈলকে কোরবানীর আদেশের মাধ্যমে আরেকটি পরীক্ষা নেন।
বাবার কাছে আল্লাহর আদেশের কথা শুনে কিশোর ইসমাঈলও কোনো দ্বিধা-সংশয় ছাড়া তার আদেশ পালনে বাবাকে সহায়তা করেন। পরবর্তীতে আল্লাহ তায়ালা তাঁকেও নবী বানান। তাঁর বংশেই আগমন করেন রহমাতুল্লিল আলামীন হজরত মুহাম্মদ সা.।
নবী ইসমাঈল আ.-এর মাঝে অঙ্গীকার পূরণ, পরিবারকে নামাজ আদায় ও জাকাত প্রদানের বিশেষ কিছু গুণ ছিল। আল্লাহ তায়ালা তাঁর এই গুণের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন কোরআনে। বর্ণিত হয়েছে—
اذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِسْمَاعِيلَ إِنَّهُ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُولاً نَّبِياًّ- وَكَانَ يَأْمُرُ أَهْلَهُ بِالصَّلاَةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِندَ رَبِّهِ مَرْضِيًّا
‘এই কিতাবে আপনি ইসমাঈলের কথা বর্ণনা করুন। তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং তিনি ছিলেন রাসূল ও নবী’। ‘তিনি তাঁর পরিবারবর্গকে সালাত ও জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিতেন এবং তিনি স্বীয় পালনকর্তার নিকট পসন্দনীয় ছিলেন’ (সূরা মারিয়াম, আয়াত : ৫৪-৫৫)।
অঙ্গীকার পূরণে ইসমাঈল আলাইহিস সালামের স্বাতন্ত্র্যের কথা বিশেষভাবে আলোচনার কারণ হলো, তিনি আল্লাহর সাথে কিংবা কোন বান্দার সাথে যে বিষয়ের ওয়াদা করেছেন, অবিচল নিষ্ঠা ও যত্ন সহকারে তা পালন করেছেন।
তিনি আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিলেন যে, নিজেকে জবাই এর জন্যে পেশ করে দেবেন। এবং এই অঙ্গীকারে সবর করবেন। তিনি এ অঙ্গীকারে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
একবার তিনি জনৈক ব্যক্তির সাথে একস্থানে সাক্ষাতের অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু লোকটি সময়মত আগমন না করায় সেখানে অনেক দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকেন।
ইসমাঈল আলাইহিস সালামের আরও একটি বিশেষ গুণ এই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি নিজ পরিবার পরিজনকে সালাত ও জাকাতের নির্দেশ দিতেন।
কোরআনে সাধারণ মুসলিমদেরকে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবারবর্গকে অগ্নি থেকে রক্ষা কর।’ (সূরা আত-তাহরীম, আয়াত : ৬)
এ ব্যাপারে ইসমাঈল ‘আলাইহিস সালাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন পরিবারে। তিনি চাননি তার পরিবারের লোকেরা জাহান্নামে প্রবেশ করুক। এ ব্যাপারে তিনি কোন ছাড় দেন নি। (ইবন কাসীর)