ইতালি পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে হত্যা, দেশে ফিরল নিথর রিয়াজ

ইতালি পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে হত্যা, দেশে ফিরল নিথর রিয়াজ

কৃষিকাজ ও ব্যবসায় তেমন সুবিধা করতে না পেরে উন্নত জীবনের আশায় ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন বেধেছিলেন ফরিদপুরের তরুণ মো. রিয়াজ মুন্সী (২০)। এর জন্য দালালের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তিতে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার অবৈধপথ বেছে নেন তিনি। লিবিয়া থেকে তাকে ফিরতে হয়েছে লাশ হয়ে।

কৃষিকাজ ও ব্যবসায় তেমন সুবিধা করতে না পেরে উন্নত জীবনের আশায় ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন বেধেছিলেন ফরিদপুরের তরুণ মো. রিয়াজ মুন্সী (২০)। এর জন্য দালালের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তিতে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার অবৈধপথ বেছে নেন তিনি। লিবিয়া থেকে তাকে ফিরতে হয়েছে লাশ হয়ে।

সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে রিয়াজের নিহত দেহ তার পরিবারের কাছে তুলে দেয় পুলিশ।

নিহত রিয়াজ ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের চরবল্লভদী গ্রামের কৃষক মো. ইউনুস মুন্সীর ছেলে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়।

তার পরিবার সুত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে দালালরা তাকে ইতালি নেওয়ার জন্য নৌকায় করে প্রথমে লিবিয়ায় নিয়ে যান। সেখানে টানা কয়েকমাস তাকে আটকে রেখে চুক্তির ১৫ লাখ টাকা নেওয়ার পরে আরও ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। রিয়াজের পরিবারের কাছে টাকা না পেয়ে দালালরা তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালাতে থাকে।

রিয়াজের স্বজনরা জানান, চুক্তির ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার পর আরও ১৫ লাখ টাকা না দেওয়ায় লিবিয়ায় রিয়াজকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে হত্যা করেছে দালালরা। গত রোববার (০৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রিয়াজের নিথর দেহ বিমানে করে দেশে পৌঁছায়। সোমবার সকালে তার মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ময়নাতদন্ত শেষে এদিন বিকেলে সালথায় তার বাড়িতে মরদেহটি পাঠানো হয়।

রিয়াজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভাবের সংসারের হাল ধরতে রিয়াজ প্রথমে কৃষিকাজ করতেন। এতে বেশি আয় করতে না পেরে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। তাতেও তেমন লাভ করতে না পেরে ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। পাশের মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের শাহিন খার ছেলে শাকিল খার সঙ্গে (দালাল) ১৫ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার চুক্তি করেন তিনি। চুক্তি অনুযায়ী ধার-দেনা করে ১৫ লাখ টাকা শাকিলের হাতে তুলে দেয় তার পরিবার।

এরপর গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে রিয়াজকে প্রথমে নেওয়া হয় লিবিয়ায়। নগরকান্দা উপজেলার গজারিয়া গ্রামের সালাম কাজীর ছেলে কারী আল আমিন তাকে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সেখানে নিয়ে যান। পরে সেখানে গিয়ে আরও ১৫ লাখ টাকার দাবিতে রিয়াজের ওপর নির্যাতন করা হয়। একপর্যায় দালালদের নির্যাতনে রিয়াজের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় ১৫ দিন আগে রিয়াজের ভাই রাকিব মুন্সী বাদী হয়ে মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা দালাল শাকিল খাসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানায় মানবপাচার আইনে একটি মামলা করেন। নিহত রিয়াজের মরদেহ দেশে আসার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে তার পরিবার ও স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বাড়ির পরিবেশ।

মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, লিবিয়া থেকে আসার পর রিয়াজের মরদেহের ময়নাতদন্ত করে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কিছুদিন আগে থানায় একটি মানবপাচার মামলা হয়েছিল। রিয়াজের মৃত্যুতে সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে এ মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

জহির হোসেন/এফআরএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *