ইউনূস-বাইডেন বৈঠক : কী কী আদায় করতে পারে বাংলাদেশ?

ইউনূস-বাইডেন বৈঠক : কী কী আদায় করতে পারে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশটিতে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার বাংলাদেশ। ভিয়েতনাম মাত্র ৭ শতাংশ শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি করলেও বাংলাদেশকে সেখানে দিতে হয় ১৮ শতাংশ।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশটিতে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার বাংলাদেশ। ভিয়েতনাম মাত্র ৭ শতাংশ শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি করলেও বাংলাদেশকে সেখানে দিতে হয় ১৮ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনার মার্কিন বিরোধী পররাষ্ট্রনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই বৈষম্যের বিষয়টি এতদিন তুলে ধরা যায়নি। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আজ (মঙ্গলবার)। সেখানেই শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ বা ভিয়েতনামের সমান করার দাবি জানাবেন প্রধান উপদেষ্টা।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের সাইড লাইনে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতন ও পলায়নের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৮ সেপ্টেম্বর সরকার গঠনের পর ড. ইউনূসের এটাই প্রথম বিদেশ সফর। প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ অধিবেশনকে ঘিরে নজর থাকবে বিশ্বনেতাদের। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকটি সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।

জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনের কূটনীতিকরা বলছেন, জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন বৈঠক বিরল ঘটনা! আর বাংলাদেশের জন্য এটা ছিল অনেকটা স্বপ্নের মতো। সেটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য।

জানা যায়, ৩০ বছর পর হওয়া এই বৈঠকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা ফেরত, শুল্ক ১৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করবেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদি উন্নত করাসহ যে প্রেক্ষাপটে তিনি বাংলাদেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তার বর্ণনা দিতে পারেন ইউনূস। ভারতে অবস্থান করা শেখ হাসিনার বিষয়টিও দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকে উঠে আসতে পারে।

বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। তার বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখি ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্ব-দরবারে তুলে ধরবেন। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তার বক্তব্যে স্থান পাবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পরিচিতি এবং সুনাম বিশ্বব্যাপী, এ কথা বলার অবকাশ রাখে না। এ কারণে অনেকগুলো বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা তার সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও সভায় অংশগ্রহণের জন্যও অনুরোধ এসেছে। যেহেতু তিনি মাত্র তিনদিন নিউ ইয়র্কে অবস্থান করবেন, সেহেতু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে সবার অনুরোধ রক্ষা করা বেশ কঠিন।

তিনদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে প্রফেসর ড. ইউনূস বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ব্যক্তি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক।

এ ছাড়া, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গেও দেখা করার কথা রয়েছে তার।

ইউনূসের সঙ্গে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি, বাহরাইনের ক্রাউন প্রিন্স হামাদ বিন ইসা আল খালিফা, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শফ, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক সামান্থা পাওয়ার, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ. হংবোসহ জাতিসংঘের আরও অনেক সংস্থার প্রধান ড. ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

সফরের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, জাতিসংঘে নিঃসন্দেহে বিশ্বনেতাদের নজর কাড়বেন ড. ইউনূস। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থারা যেভাবে এগিয়ে আসছেন তা বিস্ময়কর। তারা বাংলাদেশের সংস্কার ও রাষ্ট্র মেরামতে সাহায্যের আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

এনএম/এমজে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *