আশ্রয়কেন্দ্রে ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ, সুপেয় পানির তীব্র সংকট 

আশ্রয়কেন্দ্রে ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ, সুপেয় পানির তীব্র সংকট 

বৃষ্টি ও উজানের ঢল কমে আসায় নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামছে। তবে বন্যাকবলিত এলাকায় ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ। চর্মরোগ, ডায়রিয়া, কলেরাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পানিবন্দি মানুষ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বয়স্করা। এদিকে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ না পৌঁছানোয় বাড়ছে ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

বৃষ্টি ও উজানের ঢল কমে আসায় নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামছে। তবে বন্যাকবলিত এলাকায় ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ। চর্মরোগ, ডায়রিয়া, কলেরাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পানিবন্দি মানুষ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বয়স্করা। এদিকে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ না পৌঁছানোয় বাড়ছে ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

জানা গেছে, জেলার ৮ উপজেলায় পানিবন্দি আছেন ১৯ লাখ ১৭ হাজার মানুষ। ১২১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন ২ লাখ ২১ হাজার ৫৮৬ জন মানুষ। জেলায় বন্যায় মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। সরকারিভাবে ১২৪ ও বেসরকারিভাবে ১৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৫ লাখ টাকা, ১৭১৮ মেট্রিক টন, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৫ লাখ টাকার গো খাদ্য বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন।

সরেজমিনে বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, জেলার আটটি উপজেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি উপজেলায় বন্যায় প্লাবিত হয়েছে বেশি। এসব উপজেলায় বন্যার্তরা এখনো রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। পানি কিছুটা কমলেও তা ঘরে বসবাস করার মতো নয় বলে জানা গেছে। এদিকে, পানি কমার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে নানা সংকট ও দুর্ভোগ। বেড়ে যাচ্ছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা। একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে সাপের উপদ্রব। এছাড়া কৃষি, মৎস ও প্রাণিসম্পদ খাতে বিপুল পরিমাণ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যাকবলিত এলাকায় এখন চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে নোয়াখালীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। এখন পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়বে। ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি প্রশাসনকে পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।

বেগমগঞ্জের আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা বিবি ফাতেমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বন্যার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছি। এখন সে অসুস্থ হয়ে গেছে। চারদিকে এত পানি যে কোথাও নিমু সেই ব্যবস্থা নাই। আবার আমাদের হাতে টাকাও নাই। স্বামী দিনমজুর কাজ করতে পারে না, তাই টাকা নাই। মানুষ যা দেয় তা খাই।

জেলা শহরের বাসিন্দা রোকেয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যায় ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। বাচ্চার ঠান্ডা লেগে গেছে। তাই বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতাল যাচ্ছি। নিজেদের অবস্থাও খারাপ। হাসপাতালে হাসপাতালে দৌড়ানো ছাড়া উপায় নাই।

কলেজ শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিমু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়া লেখা বর্তমানে স্থগিত আছে। মানুষ ঠিকমতো খাবার পাচ্ছে না, সুপেয় পানি পাচ্ছে না। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

আরেক শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যে বিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করছি সেই বিদ্যালয়েই আশ্রয় নেব তা কখনো ভাবিনি। এখানে মানুষ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। চারদিকে থৈ থৈ পানি। নৌকা ছাড়া চলাচল করা যায় না। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। 

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চর্ম রোগীর সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ডায়রিয়ার প্রকোপ যাতে মহামারি আকারে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য আমরা বন্যাকবলিত এলাকায় ২ লাখ ৬০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন সরবরাহ করছি। চর্মরোগের চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া আমরা কোভিডের সময় যেভাবে স্পেশাল হাসপাতালের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের এবারও পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় এমন হাসপাতাল করার পরিকল্পনা রয়েছে। আপাতত আক্রান্তদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে সেবা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

হাসিব আল আমিন/আরকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *