আমিও দুই মেয়ের বাবা, ভয় করছে

আমিও দুই মেয়ের বাবা, ভয় করছে

পশ্চিমবঙ্গের আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করার এই ঘটনার রেশ পুরো ভারতে ছড়িয়ে গেছে। একে একে বলিউডের তারকারাও কলকাতার এই ঘটনার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন।

পশ্চিমবঙ্গের আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করার এই ঘটনার রেশ পুরো ভারতে ছড়িয়ে গেছে। একে একে বলিউডের তারকারাও কলকাতার এই ঘটনার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন।

এবার এ ঘটনার প্রতিবাদ করলেন বর্ষীয়ান সংগীতশিল্পী কুমার শানু। এক গানের অনুষ্ঠানের জন্য বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, তাই সরাসরি কথা বলতে পারেননি তিনি। তার হয়ে প্রতিবাদের কথা জানিয়েছেন শিল্পীর ব্যক্তিগত সহকারী দিলীপ দে।

দিলীপ দে আরও জানিয়েছেন, মার্কিন মুলুকের অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে রোজই বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতেন শিল্পী। সেই জায়গা থেকে শিল্পীসত্তার পাশাপাশি বাবা হিসাবেও তার বক্তব্য ছিল, ‘আমিও দুই মেয়ের বাবা। শুধুই কলকাতার আর জি কর হাসপাতাল নয়, সারা দেশে এই মুহূর্তে মেয়েরা যে ভাবে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন তা দেখে ভয় করছে।’

গায়কের মতে, এই প্রতিবাদ খুবই প্রয়োজন এখনই ন্যায় ছিনিয়ে আনতে হবে। তা নাহলে ফের অন্য কারও মেয়ে একই ভাবে নিগৃহীত হবেন। একই সঙ্গে সহকারীর কাছে গায়কের আফসোস, নানা অনুষ্ঠানের কারণে বেশির ভাগ সময় তাকে দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে। ফলে, চাইলেও তিনি নিজের শহর কলকাতায় পৌঁছতে পারছেন না। সেখানে বাকি খ্যাতনামাদের সঙ্গে প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিতে পারছেন না, কিন্তু মন থেকে তিনি প্রত্যেকের পাশে রয়েছেন।

এদিন খোলা চিঠিতে তিলোত্তমার মা লিখেছেন, ‘আজ শিক্ষক দিবসে আমি আমার মেয়ের হয়ে ওর সকল শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রণাম জানাই। ওর ছোটবেলা থেকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নছিল। আপনারা ছিলেন সেই স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাণ্ডারি। আমরা তার অভিভাবক হিসাবে পাশে থেকেছি, নিজেও অনেক কষ্ট করেছিল। কিন্তু আমি মনে করি, আপনাদের মত ভালো ভালো শিক্ষকদেরকে সে পাশে পেয়েছিল বলেই, মেয়ে তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন সফল করতে পেরেছিল।’

একইসঙ্গে মেয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে বলত, মা আমার টাকা-পয়সা চাই না, শুধু চাই নামের পাশে অনেকগুলো ডিগ্রি, আর আমি যেন অনেক অনেক রোগীকে সাহায্য করতে পারি। সেদিন বৃহস্পতিবার ও ঘর থেকে বেরিয়ে  হাসপাতালে অনেক রোগীকে পরিষেবা দেয় এবং অন ডিউটি অবস্থায় কিছু দুর্বৃত্তরা নিষ্ঠুরতাবে তার স্বপ্নগুলোকে গলা টিপে হত্যা করে। অধরা থাকে সেই রাতে লেখা তার এমডিতে গোল্ড মডেল পাওয়ার স্বপ্ন। তাই নারকীয় কাণ্ড ঘটানোর পরও সব তথ্য প্রমাণ লোপাট করার সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবং প্রশাসনিক তৎপরতায়।’

সব শেষে তার ভাষ্য, ‘একমাত্র কন্যার মায়ের আকুল আর্তি, সকল মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, চিকিৎসক, স্বাস্থ্য ভবনের কর্তৃপক্ষ, নার্সিং স্টাফ সবার কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনাদের কাছে যদি কোন তথ্য প্রমাণ থাকে তবে সেগুলো সামনে আনুন। কারণ ভাল মানুষের নীরবতা অপরাধীদের সাহস যোগায় বলেই আমি মনে করি। চিকিৎসক সমাজ, এবং সাধারণ মানুষ যে আন্দোলন করছে তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে এবং শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষকদের প্রণাম জানিয়ে মেয়ের সুবিচারের আশায়, তিলোত্তমার মা।’

উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট ভোরের দিকে কলকাতার শ্যামবাজার এলাকায় অবস্থিত আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের বিশ্রামকক্ষ থেকে এক নারী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার হয়। পরে ময়নাতদন্তে জানা যায়, ওই চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল।

তবে মরদেহ উদ্ধারের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছিল যে ওই চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন। কর্তৃপক্ষের এই বক্তব্যের পর প্রথমে ফুঁসে ওঠে কলকাতা, পরে গর্জে ওঠে পুরো পশ্চিমবঙ্গ।

এমআইকে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *