আপনার নিয়োগের পেছনে রয়েছে রক্তে ভেজা ইতিহাস

আপনার নিয়োগের পেছনে রয়েছে রক্তে ভেজা ইতিহাস

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে উদ্দেশ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, দ্বিতীয় মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত এক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি আপনি। আপনাকে  রাষ্ট্রপতিই শুধু পছন্দ করে নিয়োগ প্রদান করেননি, আপনার নিয়োগের পেছনে রয়েছে এ দেশের শত শত নিরীহ ছাত্রের বুকের তাজা রক্তে ভেজা রাজপথের কালজয়ী অমর কাব্যের এক বীরত্ব গাথা। 

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এ ঘটনা বিরল। বিপ্লবোত্তর যে কোনো দেশে রাজপথ কিংবা রণাঙ্গন ঠিক করে দেয় সে দেশের নেতা কে হবে। আর আমাদের দেশের বীর ছাত্ররা, তাদের পাশে থাকা অভিভাবকেরা, তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাজপথ থেকে আপনাকে প্রধান বিচারপতি করার দাবি তুলেছিল। এ ভালোবাসা বিরল, এ ভালোবাসা অমূল্য, এ ভালোবাসা নিয়ে গর্ব করতেই পারি, তাই না?

আজ (সোমবার) আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা দিতে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এসব কথা বলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো গুম হওয়া মানুষের আত্মা, অসংখ্য মানুষের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার বেদনা, অগণিত মানুষের নির্যাতন-নীপিড়নের গল্প, অনেক মৃত মানুষের গায়েবি মামলায় আসামি হওয়ার অভিশাপ, অনেক পরিবারের নিঃস্ব হওয়ার হাহাকার থেকে উচ্চারিত প্রতিবাদের ভাষা থেকে প্রতিরোধে রূপ নেওয়ার অন্য অবয়ব আজকের বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশে খুন-গুম-নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার সেইসব আত্মা, সেইসব মানুষ আজ ন্যায় বিচারের প্রতীক্ষায় আছে, আপনার দিকে তাকিয়ে আছে, গোটা দেশবাসীর মতো আমিও আশা করি আপনি তাদের বিমুখ করবেন না। এই দেশকে, এই দেশের সংবিধানকে, এ দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার্থে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে আপনার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবকত্ব প্রকাশ পাক এটা আবু সাঈদ-মুগ্ধ-ফারাজসহ শত শহীদের প্রত্যাশা ছিল, তাদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্তর্নিহিত কারণ ছিলো। আশা করি আপনার নেতৃত্বে সবার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। 

বিচার বিভাগ থেকে সব দুর্নীতি দূর করার আহ্বান জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য, নিম্ন আদালতের বিচারকদের স্বকীয়তা এবং স্বাবলম্বী করণের জন্য আপনার পিতা ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের ভূমিকা গোটা জাতি জানে। বিচারকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বিখ্যাত ওয়ারেন্ট অব প্রিসেডেন্স মামলায় প্রদত্ত আপনার রায় আপনার পিতার চিন্তা চেতনাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছে বলে আমরা মনে করি। সে কারণে, গোটা জাতি প্রত্যাশা করে, বিচার বিভাগ সিন্ডিকেট মুক্ত হোক। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের ভেতর শুদ্ধি অভিযান করে সকল ধরনের দুর্নীতি নির্মূল করার প্রত্যাশা রাখছি। অনেক আইনজীবীর মতো আমিও প্রত্যাশা করি আমাদের সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগ সম্পর্কে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথরিয়া, সমতল থেকে পাহাড়-সমুদ্র পর্যন্ত এই ধারণা না পৌঁছাক যে, কোনো আদালতে গেলে কোনো আইনজীবী সুবিধা পাবে। বিগত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে কারাগার, ব্যবসা পাড়া, এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতেও একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যে, সরকারি দলের সংশ্লিষ্টতা থাকলে বিচারকদের নিকট থেকে আনুকূল্য পাওয়া যায়। এটা আর ধারণার পর্যায়ে নেই, এটি আজ বিচার বিভাগ ধ্বংসের এক নির্মম বাস্তবতা। দুর্নীতির প্রচলিত ধারণায় অর্থনৈতিক লেনদেনকে বুঝালেও, বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি ডিনামাইটের চেয়েও ধ্বংসাত্মক, এটোম বোমার চেয়েও ভয়াবহ, ক্যানসারের চেয়েও মারণঘাতী। 

আপনার পূর্বসূরিদের সেই মারনঘাতী দুর্নীতির কারণে দেশ আজ গণতন্ত্রহীন, মানুষ অধিকারহীন, গণমাধ্যমের কণ্ঠরুদ্ধ। ওই সব মারণঘাতী বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতির কারণে এই অঙ্গনে মেধাবী আইনজীবীরা অনেকেই শুরুতেই ঝরে যায়, ফুটে ওঠে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির কিছু বিবেকহীন আইনজীবী, যার ফলে ভালো আইনজীবী তৈরী হতে অসুবিধা হচ্ছে। ভালো আইনজীবী না পেলে ভালো বিচারক, ভালো বিচারাঙ্গন আমরা প্রত্যাশা করতে পারি না। বিষয়টি ভাইস-ভারসাও বটে। যেটার প্রমাণ— এখন আমাদের এখানে আশরারুল হোসেন, এম, এইচ খন্দকার, খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, টি,এইচ, খান, রফিকুল হক, মাহমুদুল ইসলাম, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম, কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলীদের মতো আইনজীবী তৈরি হয় না। এটা হতাশার, এটা শঙ্কার। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।

এমএইচডি/এনএফ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *