আছাদুজ্জামান ও তার পরিবারের সম্পদের খোঁজে ৩০ প্রতিষ্ঠানে চিঠি

আছাদুজ্জামান ও তার পরিবারের সম্পদের খোঁজে ৩০ প্রতিষ্ঠানে চিঠি

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের ১০ জনের নামে-বেনামে হাজার-হাজার কোটি টাকার সম্পদের খোঁজে ৩০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের ১০ জনের নামে-বেনামে হাজার-হাজার কোটি টাকার সম্পদের খোঁজে ৩০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

চিঠিতে মো. অছাদুজ্জামান মিয়া, তার স্ত্রী আফরোজা আমান, ছেলে আসিফ শাহাদাৎ, মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা ও আসিফ মাহদিন, শ্যালক হারিচুর রহমান, আত্মীয় শাহা ইসলাম, মো. নূরুল ইসলাম লিটন, মো. ইব্রাহীম শেখ ও তাসনীম আল হকের নামে যাবতীয় হিসাবের নথিপত্র তলব করা হয়েছে।

দুদক থেকে যেসব নথিপত্র চাওয়া হয়েছে তা হলো- তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠানের নামে এফডিআর, ঋণ, বিনিয়োগ, ডিপিএস কিংবা কোনো প্রকার লেনদেন থাকে তাহলে তার হিসাব, হিসাব খোলার ফর্ম, কে ওয়াই সি ফর্ম, টি পি. এবং হিসাব খোলার শুরু হতে অদ্যাবধি সময়ের হিসাব বিবরণী এবং জমা ও উত্তোলন সংক্রান্ত যাবতীয় ইনস্ট্রুমেন্ট যেমন- চেক, পে-অর্ডার, জমা স্লিপ, ক্লিয়ারিং ইত্যাদি।

ঋণ হিসাব সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য যেমন- জামানত এবং ঋণ পরিশোধের তথ্য এবং হিসাব বিবরণী এবং বিনিয়োগ কিংবা যেকোনো প্রকার লেনদেন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যাদিসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র।

দুদক জানায়, গত ২৭ জুন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের দাবি জানিয়ে দুদকে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। ওই আবেদনসহ আরও বেশকিছু অভিযোগ জমা হয় দুদকে। যা যাচাই-বাছাই করে গত ১৮ আগস্ট অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরই উপপরিচালক হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে একটি টিমকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ১১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভার এলাকা থেকে সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, আছাদুজ্জামান নিজ নামে, স্ত্রী আফরোজা জামান ও তিন সন্তান আসিফ শাহাদাত, আয়েশা সিদ্দিকা, আসিফ মাহাদীন এবং শ্যালক-শ্যালিকা, ভাগনেসহ আরও অনেকের নামে-বেনামে হাজার-হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন।

সাবেক এ পুলিশ কর্মকর্তা পরিবারের অঢেল সম্পদের মধ্যে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ভাঙ্গা হাইওয়ের পাশে এবং রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকাসহ আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, জোয়ার সাহারা, সাভার ও পূর্বাচলে জমি, প্লট ও বাড়ির ছড়াছড়ি।

সম্পদের মধ্যে আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে সাড়ে ৭ কাঠা, আফতাবনগরে ৬ কাঠা, পুলিশ হাউজিংয়ে ৬ দশমিক ৯ কাঠা, পূর্বাচল ১৪ নম্বর সেক্টরে ৩ কাঠা, পূর্বাচল ৮ নম্বর সেক্টরের ১০৮ নম্বর রোডে ৫ কাঠা ও সাভারে ২ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে।

এছাড়া আছাদুজ্জামানের নামে রয়েছে ৩২২ শতাংশ জমি, ৬৮ ও ২১৫ শতাংশ জমি, ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৮ শতাংশ জমি আছে। এছাড়া ফরিদপুরের গ্রামে আছে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি।

তার বড় ছেলে আসিফ শাহাদাতের বয়স ৩৫ বছর। যিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার বয়স ৩১ বছর। ২১ বছর বয়সী ছোট ছেলে আসিফ মাহাদীন আমেরিকায় পড়াশুনা করেন। এই তিন ভাই-বোন এই অল্প বয়সেই শতকোটি টাকার সম্পদ-সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।

স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে রয়েছে আবাসিক এলাকায় ১০ কাঠা জমির ওপর ছয়তলা বিশিষ্ট আলিশান বিশাল বাড়ি, যার বাজার মূল্য ৫০ কোটি টাকার বেশি। এছাড়া তার নামে রাজধানীর ১৩/এ, ইস্কাটন গার্ডেন ও ধানমন্ডির ১২/এ সড়কের ৬৯ নম্বর বাড়িতে (বি/২/৫) ফ্ল্যাট আছে।

অভিজাত ধানমন্ডি-১২/এ-তে, ইস্কাটনে আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে ফ্ল্যাট রয়েছে। পূর্বাচলে ১০ কাঠা প্লট, মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় প্লট রয়েছে তার।

আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামান পুরোদস্তুর গৃহিনী। তার নিজস্ব কোনো আয়ের সংস্থান নেই। তবে সম্পদে পিছিয়ে নেই। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় একাধিক দামি ফ্ল্যাট, প্লট, ৫০ কোটি টাকা দামের আলিশান বাড়ি এবং গাজীপুরের কালীগঞ্জে ও নারায়ণগঞ্জে কোটি-কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে তার নামে।

আফেরোজার নামে রাজধানীর ধানমন্ডির ১২/এ-তে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট আছে। আরেক দামি এলাকা ইস্কাটনেও ফ্ল্যাট আছে তার। অপর একটি আবাসিক এলাকায় ১০ কাঠা জমির ওপর ৬ তলাবিশিষ্ট বিশাল বাড়িও রয়েছে।

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার চাঁদখোলা মৌজায় আফরোজা জামানের নামে ৪১ শতাংশ জমি রয়েছে। একই মৌজায় তার নামে রয়েছে আরও ২৬ শতাংশ জমি। একই মৌজায় তার নামে ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কেনা হয় আরও ৩৯ শতাংশ জমি। এছাড়া জোয়ার সাহারা মৌজায় ৫ কাঠা জমি, একই মৌজায় আরও ১০ কাঠা জমি, একই মৌজায় আরও ৩৯ শতক জমি রয়েছে তার। এছাড়াও আফরোজা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইর-কায়েতপাড়া মৌজায় দশমিক ২৮ একর, একই মৌজায় আরও ৩২ শতক জমির মালিক।

ঢাকার বাইরে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে আফরোজা জামানের যে বিপুল পরিমাণ জমি কেবল সেগুলোর বর্তমান বাজারমূল্যই শত-শত কোটি টাকা। অথচ, তার মতো একজন গৃহিনীর পক্ষে এত জমি কেনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

এছাড়া শেপিয়ার্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেড নামের আরেকটি কোম্পানির চেয়ারম্যান আফরোজা জামান। অথচ তিনি একজন আগাগোড়া গৃহবধূ, যার কোনো নিজস্ব পেশা ছিল না। এই কোম্পানির পরিচালক আছাদুজ্জামানের বড় ছেলে আসিফ শাহাদাত।

মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার নামে রাজধানীর ৫৬/৫৭, সিদ্ধেশ্বরী রোডে রূপায়ণ স্বপ্ন নিলয় ৩ নম্বর বিল্ডিংয়ে ৪ হাজার বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট আছে। এছাড়া তার নামে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় প্লট আছে। ২০২১ সালে বিপুল পরিমাণ কালোটাকা সাদাও করেছেন তিনি, যখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৮ বছর।

ছোট ছেলে আসিফ মাহাদিনের নামে নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার ৮/এ রোডের ৬ নম্বর ট্রিপ্লেক্স বৈশিষ্ট্যের বাড়িটি তার নামে। এটির বাজারমূল্য ১০ কোটি টাকার বেশি। এছাড়া আফতাবনগরেও তার নামে ৫ কাঠা প্লট আছে।

এছাড়া আছাদুজ্জামান মিয়া গাজীপুরের শ্রীপুরে দেড় একর জমির মালিক। ভাগ্নে ইব্রাহিম শেখ ওরফে কলম ও শ্যালক নূর আলম ওরফে মিলনের নামে কেনা হলেও তারা কার্যত বেকার অর্থাৎ তাদের কোনো আয় নেই।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, আছাদুজ্জামানের শ্যালক-শ্যালিকার নামেও সম্পত্তির ছড়াছড়ি। তাদের নামেও কোটি কোটি টাকার জমি রয়েছে। শ্যালিকা ফাতেমাতুজ্জোহরার নামে ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট, খুলনায় বাড়ি এবং মোহাম্মদপুরে একাধিক জমি রয়েছে। পরিবহন ব্যবসাও রয়েছে তার।

আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর সৎ ভাই হারিচুর রহমান সোহানের নামেও পরিবহন ব্যবসা আছে। এছাড়া তিনি নিজেকে পিওর গোল্ড লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়েছেন। শ্যালকের এসব ব্যবসায় আছাদুজ্জামানই বিনিয়োগকারী বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

সোহানের নামে রাজধানীর অভিজাত বেইলি রোড, শাহজাহানপুরে ফ্ল্যাট রয়েছে। বনশ্রী ও আফতাবনগরে একাধিক প্লট রয়েছে। এর মধ্যে বনশ্রীর একটি প্লটে বাড়ির নির্মাণকাজও চলছে। আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ টাকা দিয়ে এসব সম্পদ গড়া হয়েছে।

আরএম/এমএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *