হজরত আইয়ুব আ. ছিলেন রোমের বাসিন্দা। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে তাঁর মা ছিলেন হজরত লূত আ.-এর মেয়ে। ঐতিহাসিক ও তাফসিরকারকদের মতে, আইয়ুব আ. ছিলেন তৎকালীন সময়ের সম্ভ্রান্ত, ধনী ও সম্পদশালী ব্যক্তিদের একজন। গৃহপালিত চতুষ্পদ প্রাণী, দাস-দাসী, বিস্তৃর্ণ এলাকার জমির মালিকানা তার হস্তগত ছিল। ধনাঢ্য নবী আইয়ুব আ.-এর অনেক সন্তান-সন্তুতি ছিল।
হজরত আইয়ুব আ. ছিলেন রোমের বাসিন্দা। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে তাঁর মা ছিলেন হজরত লূত আ.-এর মেয়ে। ঐতিহাসিক ও তাফসিরকারকদের মতে, আইয়ুব আ. ছিলেন তৎকালীন সময়ের সম্ভ্রান্ত, ধনী ও সম্পদশালী ব্যক্তিদের একজন। গৃহপালিত চতুষ্পদ প্রাণী, দাস-দাসী, বিস্তৃর্ণ এলাকার জমির মালিকানা তার হস্তগত ছিল। ধনাঢ্য নবী আইয়ুব আ.-এর অনেক সন্তান-সন্তুতি ছিল।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর সন্তান-সন্তুতি, ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে পরীক্ষায় ফেলেন। তিনি এক ধরনের শারীরিক রোগে আক্রান্ত হন।
এই রোগের সময় তাঁর শরীরের ওপরে বিভিন্ন কীট-পতঙ্গ চলাফেরা করতো। রোগের কারণে তার শরীর থেকে মাংস খসে পড়ে এমনকি তাঁর শরীরে হাড় ও শিরা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তাঁর স্ত্রী তার শরীরের নিচে ছাই বিছিয়ে রাখতেন।
পুরো শরীর আক্রান্ত হওয়ার পর শুধু জিহ্বা ও হৃৎপিণ্ড অক্ষত ছিল। এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহ তায়ালার জিকির করতেন। এমন কঠিন পরিস্থিতেও আল্লাহর প্রশংসা করতেন।
তাঁর রোগ দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। রোগ থেকে মুক্তির কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। রোগ বৃদ্ধির ফলে বন্ধু-বান্ধব, আপনজন সবাই তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এক সময় তাঁকে শহরের বাইরে এক আবর্জনাময় জায়গায় ফেলে রেখে আসে আপনজনেরা। এরপর একে একে সবাই তাঁর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি হারিয়ে তিনি আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করেন এবং এই মহান বিপদেও ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা দেখান। রাত-দিন, সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর জিকিরে লিপ্ত থাকতেন।
সবাই তাঁকে ছেড়ে গেলে শুধু তাঁর স্ত্রী খোঁজ খবর রাখতেন ও সেবায় নিয়োজিত থাকতেন। তাঁর পেশাব-পায়খানার কাজে সাহায্য ও অন্যান্য সেবা করতেন তিনি। স্বামীর সেবা করতে করতে তিনিও দুর্বল হয়ে যান। অর্থের দৈন্য দেখা দেয়। তখন তিনি মানুষের বাড়িতে কাজ করে স্বামী খাবার, ওষুধ পত্রের ব্যবস্থা করতেন।
আইয়ুব আ.-এর এই রোগের সময়কাল নিয়ে ঐহিতাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কারো মতে তিনি ১৮ বছর আক্রান্ত ছিলেন, কারো মতে তিন বছর। আবার কারো মতে ৭ মাস।
রোগ বাড়তে থাকলে তিনি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন। তাঁর দোয়ার ভাষ্য কোরআনে এভাবে এসেছে —
‘আর স্মরণ করো আইয়ুবকে, যখন সে তার রবকে ডেকেছিল, (বলেছিল) আমি তো দুঃখ-কষ্টে পড়েছি (দুঃখ-কষ্ট আমাকে স্পর্শ করেছে), আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু!’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৩)
দোয়ার ধরন অত্যন্ত নমনীয় ও মার্জিত; যথাযথ আদব ও শিষ্টাচারপূর্ণ। নেই অভিযোগ, নেই অনুযোগ। ‘কষ্ট আমাকে স্পর্শ করেছে’—কঠিন বিপদেও মধুময় আবেদন। আবেদনের ভেতর ভাব আছে, মর্মস্পর্শী আবেগ আছে, আছে কষ্টের কথাও। তবু কোনো আবদার নেই, চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু এ কথা বলে থেমে যাচ্ছেন : ‘আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’
আল্লাহর বিরুদ্ধে কোনো নালিশ নেই, কোনো জিনিসের দাবি নেই। তাতেই খুশি হয়ে মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। তাঁর দোয়া কবুল করে আল্লাহ বলেন, ‘আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম। আর তার যত দুঃখ-কষ্ট ছিল তা দূর করে দিলাম এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে দিয়ে দিলাম। তাদের সঙ্গে তাদের মতো আরো দিলাম আমার পক্ষ থেকে রহমত এবং ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ।’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৪)
কিভাবে দূর হলো অসুখ—সে বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘(আমি তাকে বললাম,) তুমি তোমার পা দিয়ে (ভূমিতে) আঘাত করো। (ফলে পানি নির্গত হলো এবং দেখা গেল যে) এটি গোসলের জন্য ঠাণ্ডা পানি ও (পানের জন্য উত্তম) পানীয়।’ (সূরা সাদ, আয়াত : ৪২)
অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে তাঁর পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করতে আদেশ করলেন, যাতে একটি ঝরনা নির্গত হল। সেই ঝরনার পানি পান করার ফলে আভ্যন্তরিক রোগ এবং গোসল করার ফলে বাহ্যিক রোগ দূরীভূত হল।
রোগ-শোক এবং স্বজনরা তাঁকে রেখে চলে যাওয়ার বিপদে ধৈর্য ধারণ এবং আল্লাহর পরীক্ষা হাসিমুখে বরণ করে নেওয়ার কারণ ‘সবরকারী’ ও ‘চমৎকার বান্দা’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর ধৈর্যের পরম পরাকাষ্ঠার গুণ দেখে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি (আল্লাহ) তাকে ধৈর্যশীল হিসেবে পেয়েছি।’ (সুরা : সাদ, আয়াত : ৪৪)