অর্থের অভাবে অস্ত্রোপচার করাতে পারছেন না গুলিবিদ্ধ খায়ের

অর্থের অভাবে অস্ত্রোপচার করাতে পারছেন না গুলিবিদ্ধ খায়ের

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন বিকেলে চট্টগ্রামে আনন্দ মিছিল চলাকালে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন ভোলার দরিদ্র পরিবারের সন্তান আবুল খায়ের (২৭)। ধারদেনা করে তার শরীরে চারটি অস্ত্রোপচার করা হলেও বর্তমানে অর্থ সংকটে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বাকি দুটি অস্ত্রোপচার।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন বিকেলে চট্টগ্রামে আনন্দ মিছিল চলাকালে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন ভোলার দরিদ্র পরিবারের সন্তান আবুল খায়ের (২৭)। ধারদেনা করে তার শরীরে চারটি অস্ত্রোপচার করা হলেও বর্তমানে অর্থ সংকটে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বাকি দুটি অস্ত্রোপচার। এমন অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছে তার পরিবার। 

গুলিবিদ্ধ আবুল খায়ের ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কেরামত আলী হাওলাদার ও হালিমা বেগম দম্পতির বড় ছেলে। একদিকে সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির আয় বন্ধ, অন্যদিকে তার চিকিৎসা খরচ। এখন দিশাহারা তার দরিদ্র পরিবার। অর্থ সংকটে আগামী দিনে কীভাবে তার বাকি দুটি অস্ত্রোপচার করাবেন সেটিও জানেন না পরিবারের সদস্যরা। 

সরেজমিনে গুলিবিদ্ধ খায়েরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে তাদের বসতঘর। ঘরটি বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় খায়েরসহ পুরো পরিবারের ঠাঁই হয়েছে বোনের স্বামীর ছোট্ট একটি সেমি পাকা ঘরে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে একটি সুপারশপে এরিয়া সুপারভাইজার পদে চাকরি করতেন আবুল খায়ের। গত ৫ আগস্ট বিকেলে নিজ কর্মস্থল চট্টগ্রামের গোলপাহাড় এলাকা থেকে কাজ শেষে খুলশীতে যাচ্ছিলেন। ওয়াসা মোড়ের কোতোয়ালি থানার সামনে এলে পুলিশ ও ছাত্র-জনতার ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন তিনি। এ সময়  চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়ে কোতোয়ালি থানার সামনে পেটে দুটি, কাঁধে একটি ও বাম পায়ের রানে একটিসহ মোট ৪টি গুলি তার শরীরের বিভিন্ন অংশে লাগে। মুহূর্তেই তিনি লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। কিছুক্ষণ পর ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান। এরপর তার পরিবার ছাড়া আর কেউ খোঁজও নেননি বলে অভিযোগ গুলিবিদ্ধ খায়েরের।

জানতে চাইলে আবুল খায়ের গত ৫ আগস্ট বিকেল ৪টার সেই বীভৎস ঘটনার উদাহরণ হিসেবে তার ব্যবহৃত অ্যান্ড্রোয়েড মোবাইল ফোনটি বের করে দেখান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই আমার মোবাইল। মোবাইলটা প্যান্টের পকেটে ছিল,গুলিতে আমার পকেটে থাকা মোবাইলটা ছিদ্র হইয়া গেছে। এই মোবাইলটার জন্য আমার রানে আঘাত করা গুলিটা পুরোপুরিভাবে রানে ঢুকতে পারেনি।  

সেদিন চট্টগ্রামের গোলপাহাড় এলাকা থেকে কাজ শেষে খুলশীতে যাচ্ছিলাম। পথে ওয়াসা মোড় এলাকায় কোতোয়ালি থানার সামনে এলে ছাত্র-জনতা ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যাই। এ সময় আমার পেটে দুইটা, কাঁধে একটা ও বাম পায়ের রানে লাগে একটা গুলি। মুহূর্তেই পুরো শরীর অবশ হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ছাত্ররা আমাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করে। পরে খবর পেয়ে আত্মীয়-স্বজন আসে। 

আবুল খায়ের বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলে উন্নত চিকিৎসা না পেয়ে অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে আমাকে নিয়ে চট্টগ্রামের এশিয়ান মেডিকেলে ভর্তি করান, এরপর ঢাকার সিএমএইচ এবং সর্বশেষ ভর্তি করান ঢাকা মেডিকেলে। মোট ৪টি অপারেশন করাতে হয়েছে। পরে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। 

তিনি আরও জানান, আমার চিকিৎসায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে অল্প কিছু টাকা আমাদের ৩ ভাইয়ের জমানো। বাকি টাকাগুলো ধারদেনা করে জোগাড় করা। এখনো ফুসফুসে একটি ও কোলেস্টেরল ব্যাক রিমুভের একটি অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু আমার পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে অপারেশন ও প্রতিদিনের ওষুধও খেতে পারছি না ঠিকমতো।

এদিকে গুলিবিদ্ধ খায়ের ও তার ছোট ভাইয়ের ইচ্ছে ছিল ঘূর্ণিঝড় রেমালে ভেঙে রেখে যাওয়া চার চালের টিনের ঘরটি মেরামত করবেন। কিন্তু কে জানতো দুই ভাইয়ের অল্প কিছু জমানো টাকা দিয়ে ঘর মেরামত না করে চিকিৎসায় ব্যয় হবে।

আবুল খায়েরের বড় ভাই মো. সাদ্দাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আশা ছিল আমরা বড় দুই ভাই মিলে কামাই কইররা (রোজগার) ঘূর্ণিঝড় রেমালে ভেঙে যাওয়া বসতঘরটি মেরামত করব। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হয়নি। নিজেদের ঘর মেরামতের টাকা ভাইয়ের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়েছে। এছাড়া মানুষের থেকে ধারদেনা করেও তার চিকিৎসা চালিয়েছি। সামনের দিনে তার চিকিৎসা চালানোর মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। এখনো দুটি অপারেশন করাতে হবে।

গুলিবিদ্ধ আবুল খায়েরের মা হালিমা বেগম বলেন, আমার ৪ ছেলে ৩ মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে সবার বড় খায়ের। তার আয়ের টাকায় চলতো আমাদের সংসার। এখন আমাদের সংসার ও খায়েরের চিকিৎসা কিছুই চলে না। অনেক কষ্টে দিন কাটাই। আবার পাওনাদারও তাদের টাকার জন্য চাপ দেয়। খায়েরের বাকি দুইটি অপারেশন ও চিকিৎসা চালাতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। তাহলে সে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। 

জানতে চাইলে ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোলায় অর্থের জন্য কারো চিকিৎসা চলে না- এমন কেউ যদি থাকে তাহলে অবশ্যই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য করব। ইতোমধ্যে ভোলার ৪৬ শহীদ পরিবারের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

আরএআর

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *