অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শ্বেতপত্র প্রণয়ন করবে সরকার

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শ্বেতপত্র প্রণয়ন করবে সরকার

দেশের অর্থনীতিকে সুসংহতকরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা জানাতে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে সরকার। বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শ ও অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা যাচাই-বাছাই করে এটি প্রকাশ করবে সরকার।

দেশের অর্থনীতিকে সুসংহতকরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা জানাতে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে সরকার। বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শ ও অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা যাচাই-বাছাই করে এটি প্রকাশ করবে সরকার।

বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতি তা জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, দেশের অর্থনীতিকে সুসংহতকরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে; তার মধ্যে প্রধানতম হলো—

• অর্থনীতি পুনরায় সচল করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো নিরসনে কাঠামোগত সংস্কার সাধন;• নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি; দুর্নীতি দূরীকরণ;• ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা; কর ও শুল্ক নীতির সংস্কার;• বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ইত্যাদি।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, গত প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে নিপতিত রয়েছে। বিগত সরকারের চরম অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থ-পাচার এবং অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশি- বিদেশি ঋণ গ্রহণ ইত্যাদি কার্যক্রমের কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে। অর্থ বিভাগের সূত্রে পত্রিকান্তরে প্রকাশ যে, পতনকালে শেখ হাসিনা সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের যে স্থিতি ছিল, তা বাংলাদেশের তিনটি বাজেটের মোট অর্থ বরাদ্দের সমান।

অন্যদিকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কর আদায়ের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির চেষ্টা না করে, দেশি ও বিদেশি দুই ধরনের ঋণের প্রতি বিগত সরকার ঝুঁকেছিল। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপির তুলনায় কর সংগ্রহকে ১৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও গত ছয় সাত বছরে এ অনুপাত ১১ শতাংশ থেকে উল্টো ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার এটি একটি দিক মাত্র। সামগ্রিকভাবে দুর্নীতি, অর্থ-পাচারের অবাধ সুযোগ, বাজার সিন্ডিকেট ইত্যাদির ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়ে-বিবৃতিতে বলা হয়।

‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, গত জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বেশি, তা ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বলা যেতে পারে যে, বিগত সরকারের শেষ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই মুখ থুবরে পড়ে। বিগত সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনার ফলে সৃষ্ট বাংলাদেশের অর্থনীতির নজিরবিহীন নাজুক পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সামগ্রিক চিত্র এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রারম্ভেই সরকারের হাতে থাকা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে “অর্থনীতির অবস্থার উপর একটি শ্বেতপত্রের প্রস্তুতি” শিরোনামে একটি ধারণাপত্র নথিতে সংরক্ষিত রয়েছে। ধারণাপত্রে বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার তথ্য-চিত্র সমৃদ্ধ একটি ‘শ্বেতপত্র’ প্রস্তুতের ধারণা দেওয়া হয়েছে। 

ধারণাপত্রে বলা হয়েছ, প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং এলডিসি হতে উত্তরণে করণীয় বিষয়ে প্রতিফলন থাকবে। শ্বেতপত্রটি প্রণয়নকালে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও মতবিনিময় করা হবে মর্মে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে।

প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রে প্রধানত নিম্নোক্ত বিষয়াদি নিয়ে আলোকপাতের প্রস্তাব করা হয়েছে-

১. পাবলিক ফিন্যান্স ম্যানেজমেন্ট- ডমেসটিক রিসোর্স, পাবলিক এক্সেপেনডিচার (পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট, এডিপি, সাবসিডিস অ্যান্ড ডেবট), ফিন্যান্সিং অব বাজেট ডেফিসিট।

২. ইনফ্লেশন অ্যান্ড ফুড ম্যানেজমেন্ট- প্রোডাকশন, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন।

৩. এক্সটারনাল ব্যালেন্স- এক্সপোর্ট ইমপোর্ট, রেমিট্যান্স, এফডিআই, ফরেইন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ, ফরেইন ফিন্যান্স ফ্লো অ্যান্ড ডেবট।

৪. এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ডিমান্ড, সাপ্লাই, প্রাইসিং, কোস্টস অ্যান্ড পারচেস অ্যাগ্রিমেন্টস।

৫. প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট – এক্সেস টু ক্রেডিট, ইলেক্ট্রিসিটি, কানেকটিভিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস।

৬. ইমপ্লয়মেন্ট – ইন-কান্ট্রি অ্যান্ড ওভারসেচেস, ফরমাল অ্যান্ড ইনফরমাল ওয়েজেস; ইউথ ইমপ্লয়মেন্ট।

প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রটি প্রস্তুতের জন্য দেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার সাথে পরামর্শক্রমে তিনি কমিটির প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন। কমিটির রূপরেখা নিম্নরূপ হতে পারে :

ক) কমিটির সদস্যগণ অবৈতনিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন;

খ) পরিকল্পনা কমিশন কমপ্লেক্সের যথোপযুক্ত কোন ভবনকে কমিটির দপ্তর হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে; গ) পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করতে পারে;

ঘ) সরকারের সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/ সংস্থা প্রস্তাবিত কমিটির চাহিদানুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহসহ সকল ধরণের সহযোগিতা প্রদান করবে;

ঙ) ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি’ নামে প্রস্তাবিত কমিটি আগামী ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবেন।

এমএসআই/এসএম

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *