অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতে যেসব সংস্কার জরুরি

অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতে যেসব সংস্কার জরুরি

শুরুর কথা

শুরুর কথা

৫ আগস্ট ২০২৪ আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলো। এই যুগান্তকারী পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিয়েছে তরুণরা। এই পরিবর্তনে প্রবাসী বাংলাদেশি তথা আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের অবদান উল্লেখযোগ্য ও অনস্বীকার্য। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সভা-সমাবেশের আইনি নিষেধ থাকা সত্ত্বেও জুলাই বিপ্লবের সাথে সংহতি জানায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তার পরিণতিতে তাদের কারাভোগও করতে হয়েছে।

আমাদের সৌভাগ্য যে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি সেই ৫৭ জন নির্ভীক প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাধারণ ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তারা দেশে ফিরেছেন। বিমান বন্দরে অভিবাসীসহ সব যাত্রীর সেবার মান দ্রুতই উন্নত করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

আবার ছাত্রজনতার অসহযোগ আন্দোলনের এক পর্যায়ে ছাত্র নেতৃত্বের আহ্বানে বিভিন্ন দেশে শ্রমিক-পেশাজীবী বাংলাদেশিরা সাময়িকভাবে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে দেয়। ৫ আগস্টের পর থেকে আবার দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো স্থিতিশীল হয়েছে আর আমাদের কোষাগারের সঞ্চয় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবে সারা বছর এবং বছরের পর বছর এই অভিবাসীদের অবদান তাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অপরিসীম, যা সবসময় নীতিনির্ধারণী ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে যথাযথভাবে গুরুত্ব পায় না। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বে অভিবাসীর সংখ্যা ২৮ কোটি ১০ লাখ যার মধ্যে ১৬ কোটি ৯০ লাখ। আর বিশ্বে অভিবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা ৭৪ লাখ। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রবাসে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে যায় ১৩ লাখের বেশি বাংলাদেশি, যেখানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসাব মতে প্রতিবছর দেশে বেকার থাকে ৩৫ লাখ কর্মক্ষম ব্যক্তি।

কাজেই প্রতি বছর এই ১৩ লাখ নারীপুরুষ একদিকে যেমন নিজের, পরিবারের ও সমাজের সচ্ছলতা বৃদ্ধি করেন, তেমনি দেশের অর্থনীতির চাকাও সচল রাখেন। দেশে যখন তারা ফেরেন, প্রবাসে কাজ করার অভিজ্ঞতা দেশে কাজে লাগানোরও বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই ব্যাপক সম্ভাবনা ও অবদানের যথাযথ প্রতিদান বিশেষ করে অভিবাসী কর্মীরা সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে পান না। শ্রেণি বিভাজনের শিকার হয়ে স্বল্পদক্ষ, স্বল্পশিক্ষিত কায়িক শ্রমের অভিবাসী নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে জাতীয় জীবনে থেকে যান অবহেলিত।

অবশ্য বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বেশকিছু উল্লেখযোগ্য নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়িত হয়েছে—মন্ত্রণালয় সৃষ্টি, আইন প্রণয়ন, প্রশাসনিক সহায়তা, জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিকরণ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। সরকার, বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা মিলে এগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলেছে।

তবে যথেষ্ট নয়। তাই রাষ্ট্র সংস্কারের নব সম্ভাবনায় অভিবাসন খাতের সুব্যবস্থাপনা এবং অভিবাসী বিশেষ করে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতেও রাষ্ট্রীয় সংস্কার অপরিহার্য। এক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবেচনার জন্য নিম্নলিখিত ৯টি ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব করা যেতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকালে এইসব বিষয়ে সংস্কার না হলেও, পরিকল্পনা ও রোডম্যাপ থাকতে পারে।

আইন ও নীতিমালা সংস্কার

এ পর্যন্ত দুটি মূল আইন প্রণয়ন হয়েছে—২০১৩ সালে একটি যেটি সামগ্রিকভাবে শ্রম অভিবাসন ব্যবস্থাপনার জন্য, অন্যটি ২০১৮ সালে অভিবাসী কল্যাণের জন্য। এই দুটি আইন ঘিরে বিধি, নীতিমালা, পরিপত্র, কর্মপরিকল্পনা করা হয়। এছাড়া ফেরত অভিবাসীসের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সম্পৃক্তকরণের জন্য একটি খসড়া নীতিমালা চূড়ান্তকরণের অপেক্ষায় আছে। বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা বলেছেন, ক্রম পরিবর্তনশীল শ্রম বাজারের সাথে আইন ও নীতিমালা সংস্কারের প্রয়োজন আছে।

২০১৩ সালের আইনে সাব এজেন্ট/মধ্যস্বত্বভোগী সংক্রান্ত কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে, কিন্তু সেটিও বাস্তবায়নযোগ্য কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। তারপরে যেমন মূল আইন যথেষ্টভাবে নারী, তৃতীয় লিঙ্গ, প্রতিবন্ধীসহ অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়। উভয় আইনেই অভিবাসীদের অধিকার ও দায়িত্ব সুস্পষ্ট নয়। এর বাইরে ফেরত আসা কর্মীদের জন্য শুধু নীতিমালা নয়, আইন প্রণয়ন করাও গুরুত্বপূর্ণ।

বাস্তবসম্মত উন্নয়ন পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন মনিটরিং

আইন ও নীতিমালা সংস্কার/সংশোধনের সাথে সাথে উপযুক্ত পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। বিগত সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় উল্লেখ করা ছিল অভিবাসন খাতে আমূল পরিবর্তন (paradigm shift) আনা হবে, কিন্তু তা হয়নি। অভিবাসন খাতে তাই বাস্তবায়নযোগ্য কর্মপরিকল্পনা, টার্গেট ও সময় নির্ধারণ করা উচিত।

বছরের পর বছর এই অভিবাসীদের অবদান তাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অপরিসীম, যা সবসময় নীতিনির্ধারণী ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে যথাযথভাবে গুরুত্ব পায় না।

এছাড়া অভিবাসন খাতে রাজস্ব বাজেটে যথাযথ অর্থায়ন করতে হবে। যেমন বরাবর আমরা শুনে আসছি, মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়াতে কয়েক লাখ অভিবাসীদের সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোয় পর্যাপ্ত কর্মকর্তা ও সুব্যবস্থা নেই। অভিবাসীরা সেখানে চাইলেও সেবা নিতে পারেন না।

রাজস্ব বাজেটের মাধ্যমে দূতাবাসের সেবা উন্নত, বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। স্বতন্ত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এইসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়মিতভাবে মূল্যায়ন করার দরকার হবে, যেন প্রয়োজন বোধে সময় সময় পরিকল্পনা সংশোধন করা যায়।

দুর্নীতি থেকে মুক্তি

রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের মতো অভিবাসন খাতেও দুর্নীতির সংস্কৃতি গভীরভাবে প্রোথিত। কিছু কিছু ব্যবসায়ী বছরের পর বছর অভিবাসীদের শোষণ করে ধনবান ও প্রভাবশালী হয়েছেন। বাংলাদেশের শ্রম অভিবাসনের ব্যয় বিশ্বে সর্বোচ্চ, যা যৌক্তিক ব্যয়ের অনেক বেশি।

লাখ লাখ শ্রমিকের অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় সহায়তা করার বিনিময়ে এইসব ব্যবসায়ীরা হয়েছেন কোটিপতি। তাদের কেউ কেউ শ্রমবাজার কুক্ষিগত ও নিয়ন্ত্রণ করেন। কেউ কেউ নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেন।

আবার অভিবাসন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ভেতরেও আর্থিক ও নৈতিক দুর্নীতির অভিযোগ আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব অভিযোগ অভ্যন্তরীণ তদন্তে প্রমাণিত হলে দাপ্তরিক শাস্তি নির্ধারিত হয়, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি থেকেই যায়। এমনকি প্রভাবশালীদের প্রতাপের কারণে জানার পরও অনেক সময় গণমাধ্যম এসব অনিয়ম প্রকাশ করেনি বা করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রতিবেদন প্রস্তুত হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। এইসব দুর্নীতি নিবারণে সার্বিক তদন্ত হওয়া এবং সুপারিশ বাস্তবায়ন করা জরুরি।

জাতীয় পর্যায়ে মনিটরিং ও জবাবদিহিতা সৃষ্টি

রাষ্ট্রীয়ভাবে অভিবাসন খাতের পর্যালোচনার জন্য একসময় সর্বোচ্চ পর্যায়ে একটি পরিষদ এবং বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে আরেকটি পরিষদ গঠিত হয়েছিল। এই দুইটির কোনোটিই বেশ কয়েক বছর ধরে কার্যকর নেই। মাঝে করোনাকালীন সময়ে অনলাইনে এরকম সভার উদ্যোগ হয়েছে বলে জানা যায়, কিন্তু সেই সভা অনুযায়ী দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপের কথা জানা যায় না।

তবে বিভিন্ন অংশীদারদের নিয়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে অনেক সভা ও কর্মশালা হয়ে থাকে। সেখান থেকে পারস্পরিক সহযোগিতা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে কিছু নীতিনির্ধারণী দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়। কিন্তু বিশেষ করে অভিবাসীর অধিকার ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের মনিটরিং এবং জবাবদিহিতা সৃষ্টির কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। তাছাড়া উল্লেখিত দুটি পরিষদে অভিবাসীদের কার্যকর প্রতিনিধিত্ব ছিল না। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মোট বাস্তবসম্মত প্ল্যাটফর্ম ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়

প্রবাসীকালীন ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অভিবাসন খাতের মূল মন্ত্রণালয় হলেও স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, বেসামরিক চলাচল ও পর্যটন, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু, সমাজ কল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া, শিক্ষা, শ্রম মন্ত্রণালয়সমূহও অভিবাসন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত।

নিজস্ব কর্ম পরিধির যুক্তি দিয়ে এসব মন্ত্রণালয় ও তাদের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয়হীনতা দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সুপারিশ ও পদক্ষেপের পরেও এই সমন্বয়ের অভাব সুষ্ঠু অভিবাসন প্রক্রিয়ার একটি অন্তরায়। এই সমন্বয়হীনতা বা দুর্বল সমন্বয়ে লাভবান বিভিন্ন পর্যায়ের অসাধু চক্র আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় অভিবাসী। গ্রাম থেকে প্রবাস পর্যন্ত এই সমন্বয়হীনতা বিস্তৃত। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কঠোর নির্দেশ ও মনিটরিং ছাড়া এই সমন্বয়ে উন্নতি সম্ভব না। 

অভিবাসনবান্ধব প্রশিক্ষণ

বিগত বছরগুলোয় অভিবাসন খাতে প্রশিক্ষণের অবকাঠামোগত যে অগ্রগতি হয়েছে, সেই তুলনায় অভিবাসন প্রশিক্ষণের অগ্রগতি ও আধুনিকায়ন প্রায় একেবারেই হয়নি। প্রথমত বিভিন্ন সময়ে প্রস্তুতকৃত বিদেশের জন্য উপযোগী প্রশিক্ষণ পদ্ধতি, উপকরণ ও প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি-বাণিজ্যিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার সহযোগিতা ও সমন্বয় দরকার হবে। কিছু কিছু পরীক্ষামূলক উদ্যোগের সাফল্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে।

দ্বিতীয়ত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে প্রবাসে কাজে লাগার মতো কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষার সমন্বয় করতে হবে। আর তৃতীয়ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী-পুরুষ প্রবাসে কতটা তাদের লব্ধ দক্ষতা কাজে লাগাতে পারছেন, সেই তথ্য নিয়ে নিয়মিত পর্যালোচনার ব্যবস্থা করতে হবে।

সরকারি কর্মকর্তার দক্ষতা বৃদ্ধি

শুধু অভিবাসী কর্মী ও প্রশিক্ষকবৃন্দের দক্ষতা বৃদ্ধি নয়, অভিবাসন খাতে দেশে ও প্রবাসে সব কর্মকর্তার অভিবাসন বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এই প্রশিক্ষণ আমলাদের ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ছাড়াও বিশেষায়িত অভিবাসন, মানব পাচার ও অভিবাসন কূটনীতি সম্বলিত প্রশিক্ষণ হতে পারে।

বর্তমানে অভিবাসন সংক্রান্ত কার্যকর কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি নেই। যা আছে তা বেশিরভাগই সমঝোতা স্মারক। সেগুলোও পুরোনো ও অকার্যকর। আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের সহায়তায় এসব চুক্তি/স্মারক বিভিন্ন সময় পর্যালোচনা করে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো আলোচনা বা বাস্তবায়ন সামান্যই হয়েছে।

কোনো কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য জাতিসংঘভুক্ত সংস্থাসমূহের প্রশিক্ষণ তাদের পদন্নোতির সাথে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। কর্মকর্তাদের বার্ষিক মূল্যায়নে অভিবাসন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কতটা কাজে লাগানো হয়েছে, সেটিরও মূল্যায়ন করা উচিত।

সমঝোতা স্মারক থেকে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি

বর্তমানে অভিবাসন সংক্রান্ত কার্যকর কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি নেই। যা আছে তা বেশিরভাগই সমঝোতা স্মারক। সেগুলোও পুরোনো ও অকার্যকর। আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের সহায়তায় এসব চুক্তি/স্মারক বিভিন্ন সময় পর্যালোচনা করে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো আলোচনা বা বাস্তবায়ন সামান্যই হয়েছে। এক্ষেত্রে অভিবাসন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আমলা ও কর্মকর্তাবৃন্দ রিভিউ প্রতিবেদন ও বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা উচিত।

অকার্যকর দলিলসমূহ সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে আলাপ করে বাতিল করা দরকার হবে আর দ্বিপাক্ষিক চুক্তির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলা যায়, চুক্তি থাকলে উভয় দেশের জন্য চুক্তির শর্তসমূহ পালনের বাধ্যবাধকতা বৃদ্ধি পায়, সাথে সাথে পারস্পরিক জবাবদিহিতাও সুস্পষ্ট হয়।

শ্রম বাজার সংস্কার ও নিয়ন্ত্রণ

আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার বৈশ্বিক অর্থনীতি, রাজনীতি ও বাণিজ্যের সাথে সম্পর্কিত বিধায় সচল ও পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া। দেখা যাচ্ছে, বছরের পর বছর মধ্যপ্রাচ্য রয়ে গেছে বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে বৃহৎ গন্তব্যের অঞ্চল। তার মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সবচেয়ে বেশি। এশিয়াতে সর্বাধিক অভিবাসী শ্রমিক কাজ করে মালয়েশিয়াতে।

একদিকে এসব এবং আরও কয়েকটি দেশে অভিবাসনের নানা জটিলতা রয়ে গেছে, অন্যদিকে নতুন শ্রমবাজার অনেক বছরেও নিয়মিতভাবে চালু হয়নি। বিভিন্ন সময়ে সরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানে প্রবাস সফর আয়োজন করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে, কিন্তু প্রতিবেদন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রবাসে নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেননি।

অতীতের সুপারিশও বৈশ্বিক চাহিদার পরিবর্তনের সাথে সাথে অকার্যকর হয়ে গেছে। কাজেই পুরোনো-নতুন সব শ্রম বাজারের চাহিদা নিয়মিতভাবে নিরূপণের একটি প্রক্রিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া দরকার। শ্রম অভিবাসনে এগিয়ে থাকা দেশগুলো যেমন স্থায়ীভাবে শ্রম অভিবাসন বাজার গবেষণার ব্যবস্থা রেখেছে এবং সেই অনুযায়ী তাদের আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসন বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।

শেষ কথা

উপরে বর্ণিত পদক্ষেপগুলো যেমন যুগান্তকারী নতুন কিছু নয়, তেমনি এর বাইরে আর কিছু প্রয়োজন নেই তাও নয়। বলা চলে শ্রম অভিবাসন খাতে সংস্কারের জন্য এগুলোর ব্যাপারে প্রতিনিধিত্বমূলকভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন জরুরি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নাগরিকদের প্রত্যাশা ও চাহিদা অনেক। তার মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং তরুণ উপদেষ্টাদের বিভিন্ন বক্তব্যে প্রতীয়মান হয় যে অভিবাসন ক্ষেত্রে সংস্কার তাদের গুরুত্বের মধ্যে আছে।

এছাড়া অর্থনীতির যে শ্বেতপত্র প্রস্তুতির কাজ চলছে, সেখানে রেমিট্যান্স প্রসঙ্গ আসলে অবশ্যই আন্তর্জাতিক অভিবাসী প্রসঙ্গে কিছু দিক নির্দেশনা আসবে বলে আশা করা যায়।

আসিফ মুনীর ।। অভিবাসন ও শরণার্থী বিশেষজ্ঞ  

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *