অভিবাসীদের আশ্রয় অধিকার বাতিলে আইন করছে পোল্যান্ড

অভিবাসীদের আশ্রয় অধিকার বাতিলে আইন করছে পোল্যান্ড

একটি নতুন আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের আশ্রয় অধিকার অস্থায়ীভাবে স্থগিত করতে চায় পোল্যান্ড। নতুন আইনের খসড়া আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্কের মুখ্য কর্মকর্তা ইয়ান গ্রাভিয়েস। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল টিভিএন২৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি।

একটি নতুন আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের আশ্রয় অধিকার অস্থায়ীভাবে স্থগিত করতে চায় পোল্যান্ড। নতুন আইনের খসড়া আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্কের মুখ্য কর্মকর্তা ইয়ান গ্রাভিয়েস। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল টিভিএন২৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি।

গ্রাভিয়েস বলেন, ‘‘আইনে উল্লেখ করা হবে যদি কোনও ব্যক্তি বেলারুশের হাইব্রিড আক্রমণের অংশ হিসাবে কিংবা তাদের সহযোগিতা নিয়ে অনিয়মিতভাবে পোল্যান্ডে ঢুকে পড়ে, সেক্ষেত্রে পোলিশ সীমান্তরক্ষীরা ওই ব্যক্তির আশ্রয় আবেদন নিতে আইনিভাবে বাধ্য নয়।’’

পোলিশ সংবাদ সংস্থা পিএপি বলছে, ১২ অক্টোবর নিজ দল লিবারেল সিভিক কোয়ালিশনের (কেও) একটি দলীয় সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্ক।  সেখানে তিনি বলেন, অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমাহীন’ লড়াই চালিয়ে যেতে তার সরকার অভিবাসন ইস্যুতে নতুন কৌশল নিতে যাচ্ছে।

ওইদিন তিনি বলেন, ‘‘আমি খুব দৃঢ়ভাবে এবং গর্বের সঙ্গে বলছি, আমাদের অভিবাসন কৌশলটি হলো আমাদের ভূখণ্ডে আশ্রয় চাওয়ার অধিকার স্থগিত করা।’’

পরিকল্পটি নিয়ে সেদিন বিশদ কিছু বলেননি টুস্ক। তবে তিনি বলেছেন, ‘‘পোল্যান্ডে কে ঢুকছেন আর কে বেরিয়ে যাচ্ছেন—তার শতভাগ নিয়ন্ত্রণ আমরা রাষ্ট্রের কাছে ফিরিয়ে আনতে চাই।’’ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সম্মতি আদায়েও তার প্রচেষ্টা থাকবে বলে জানিয়েছেন টুস্ক।

কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন মুখপাত্র অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর আশ্রয় ইস্যুতে জোটের আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

রাশিয়া এবং বেলারুশ গত তিন বছর ধরে জোটের পূর্ব সীমান্তকে ‘অনেক চাপে’ রেখেছে বলে স্বীকার করেছেন ওই নারী মুখপাত্র। তিনি বলেন, তারপরও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোকে আশ্রয়ের অধিকার নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে।

বেলারুশের সঙ্গে পোল্যান্ডের সীমান্তটি ইউরোপীয় ইউনিয়ের পূর্বপ্রান্তীয় বহিঃসীমান্ত। বেলারুশ হয়ে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে পাঁচ মিটার উঁচু বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। বসানো হয়েছে ইলেকট্রনিক নজরদারি ব্যবস্থা। তারপরও ওই সীমান্ত দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই পোল্যান্ডে ঢোকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন অভিবাসীরা।

চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত অনিয়মিতভাবে পোল্যান্ডে ঢোকার ২৮ হাজার প্রচেষ্টা নথিভুক্ত করেছে পোলিশ সীমান্তরক্ষীরা। জার্মানির পূর্বদিকের এই দেশটির মোট জনসংখ্যা তিন কোটি ৭০ লাখ।

এদিকে, মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার সঙ্গে নিজের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী টুস্ক। দেশটির রাজধানী ওয়ারশে ছয় ঘণ্টা ধরে চলে বৈঠকটি। বৈঠকের এক নথিতে বলা হয়েছে, ‘‘অনিয়মিত অভিবাসীদের আগমনে দেশে যদি অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণের অধিকার সাময়িক ও আঞ্চলিকভাবে স্থগিত করা হবে।’’

মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স প্ল্যাটফর্মে সরকারপ্রধান টুস্ক লিখেছেন, সরকার একটি ‘‘কঠিন কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত’’ নিতে যাচ্ছে।

মন্ত্রিসভা বৈঠকের সময় জোট সরকারের অংশীদারদের মধ্যে বামপন্থিরা সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। পোলিশ সংবাদমাধ্যম ওনেট ডটপিএল-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডিজিটালাইজেশন মন্ত্রী ক্রিস্টফ গাভকোভস্কি বলেন, সরকারের অংশীদার হলেও বাম দলের চার জন মন্ত্রী ভিন্ন মত দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য প্রক্রিয়াগুলো কঠোর করা প্রয়োজন। কিন্তু তাই বলে আশ্রয়ের অধিকার স্থগিত করার মতো সিদ্ধান্তের পক্ষে আমরা নই।’’

শেষ পর্যন্ত পোল্যান্ড যদি আশ্রয় স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে দেশটিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যকারিতা সংক্রান্ত চুক্তির ৭২ অনুচ্ছেদের শরণাপন্ন হতে হবে। এর অর্থ হলো, সদস্য রাষ্ট্রগুলো জনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার মতো বিশেষ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম থেকে বিচ্যুত হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কতটা গুরুতর হতে হবে তা আইনি দিক থেকে স্পষ্ট নয়। ইনফোমাইগ্রেন্টস।

এসএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *