‘অনুভূতিতে আঘাত লাগে’ এমন কিছু পাঠ্যবইয়ে না রাখার চেষ্টা চলছে

‘অনুভূতিতে আঘাত লাগে’ এমন কিছু পাঠ্যবইয়ে না রাখার চেষ্টা চলছে

কমিটির বিরোধিতাকারী ধর্মভিত্তিক দলগুলোর দাবি

ইসলামিক দল ও ব্যক্তিদের দাবির মুখে বাংলাদেশে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনে জন্য গঠিত সমন্বয় কমিটি বাতিল নিয়ে চলছে বিতর্ক। এই কমিটির সদস্য রাখাল রাহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, পাঠ্যপুস্তক স্বাধীনভাবেই করা উচিত। কারো চাপ বা দাবির মুখে সেটা কেমন হবে তা নির্ধারণ করা ঠিক না। 

অন্যদিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম রিয়াজুল হাসান জানিয়েছেন, পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের কাজ তারা অব্যাহত রেখেছেন, অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কনটেন্ট পরিমার্জনের চেষ্টা চলছে।

কমিটির বিরোধিতাকারী ধর্মভিত্তিক দলগুলোর দাবি৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আগের পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের দাবি ওঠে। ১৫ সেপ্টেম্বর সংশোধনের জন্য নতুন সমন্বয় কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খ ম কবিরুল ইসলামকে প্রধান করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। সদস্যরা ছিলেন— শিক্ষা গবেষক রাখাল রাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আখতার খান, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান, সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী এবং সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক এ এফ এম সারোয়ার জাহান। 

কিন্তু ওই কমিটি গঠনের পর দুইজন সদস্যের পদত্যাগ দাবি করে হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ। তারা কমিটিতি ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেম রাখারও দাবি করে। দুই জন সদস্যকে ইসলামবিদ্বেষী বলে অভিহিত করে তারা।

হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী রোববার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু পাঠ্যপুস্তকে রাখা যাবে না। অতীতে পাঠ্যপুস্তকে অনেক বিকৃত ও ইসলামবিরোধী তথ্য ছিল। আর কমিটিতে থাকবেন যারা ধর্ম বিশ্বাস করেন, ইসলামী চিন্তাবিদ, আলেম। নাস্তিকদের দিয়ে কোনো কমিটি হবে না।

অন্যদিকে জাময়াতে ইসলামী দাবি করেছে, ‘‘পাঠ্যপুস্তকে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বিকৃত ও ভ্রান্ত তথ্য থাকতে পারবে না।’’ শুক্রবার সংগঠনটির পক্ষ্য থেকে এমন বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। 

কমিটির সদস্য ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন২৮ সেপ্টেম্বর দেওয়া প্রজ্ঞাপনে কমিটি বাতিলের কারণ উল্লেখ করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু ইসলামপন্থীদের দাবির প্রেক্ষিতেই তা বাতিল হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে সমালোচনা ও বিতর্ক।

ওই কমিটির সদস্য রাখাল রাহা প্রতিক্রিয়ায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাঠ্যপুস্তক স্বাধীনভাবেই করা উচিত। কারো চাপ বা দাবির মুখে সেটা কেমন হবে তা নির্ধারণ করা ঠিক না। সঠিক শিক্ষার জন্যই করা উচিত। এটা বলতেই হবে যে, দাবি ও চাপের মুখেই আমাদের কমিটি বাতিল করা হয়েছে।’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যারা ওই কমিটিতে ছিলাম তাদের শিক্ষা নিয়ে সবারই নিজস্ব চিন্তা ও দর্শন আছে। কিন্তু যারা প্রতিবাদ করেছেন তারা একটি বিষয় জানেন না যে, পাঠ্যপুস্তক সংশোধন আমাদের কাজ ছিল না। এই কাজের জন্য এনসিটিবির একাধিক কমিটি আছে। তারা আগেই কাজ শুরু করেছেন। আমাদের কাজ ছিল তারা যে কাজ করছেন তা দেখা ও প্রয়োজনীয় মতামত দেওয়া।’’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান মনে করেন কারো দাবির প্রেক্ষিতে নয় বরং প্রয়োজনের নিরিখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সরকারের।

তিনি মনে করেন শিক্ষা কমিশন গঠন করে তার ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাঠ্যপুস্তক যুগের চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে করা উচিত। বলেন, ‘‘কোন পক্ষ কী দাবি করলো সেটা আমলে না নিয়ে যা হওয়া উচিত তাই করা দরকার।’’ 

তার মতে, কোনো একটি কবিতা বা গল্প বাদ দিয়ে নতুন গল্প-কবিতা অন্তর্ভূক্ত করলেই পাঠ্যপুস্তক সংশোধন হয় না। তার পেছনে চিন্তা ও দর্শন থাকতে হবে। ‘‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে আমাদের সংবিধানের আলোকে,’’ বলেন তিনি।

তিনি মনে করেন সমন্বয় কমিটিটি তাড়াহুড়ো করে গঠন করা হয়েছিল। শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তা করা প্রয়োজন ছিল। আবার সেটা যে দাবি ও চাপের মুখে বাতিল করা হলো সেটাও ঠিক না। ‘‘শিক্ষা নিয়ে এরকম তাড়াহুড়ো করা ঠিক নয়,’’ বলেন এই শিক্ষা বিশেষজ্ঞ। 

এনএফ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *