কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) কার্যালয় ও এর আওতাধীন সিজিএ কার্যালয়, বিভিন্ন অডিট অধিদপ্তর এবং সিজিডিএফ কার্যালয়ে কর্মরত অডিটরদের বেতন-গ্রেড বৈষম্য দূর করে ১১ থেকে ১০ গ্রেডে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টের অডিটরা।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
অডিটরদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে আলিমুর রহমান ডালিম বলেন, একই পদে দুই ধরনের বেতন থাকাটা কখনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এমন বিষয় কর্তৃপক্ষকেই নৈতিকভাবে এবং দায়িত্বশীল হয়ে সমাধান করা প্রয়োজন। ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করা রিট পিটিশনের রায় সিএজি ও অধীনস্থ অফিসের পদকে ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নত করার পক্ষে রায় দেয়। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ শুধুমাত্র ৬১ জনকে ১১তম থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করার আদেশ প্রদান করে। পরে অন্যান্য অডিটররা ধারাবাহিক পিটিশন দায়ের করতে থাকেন এবং আদালত সব মামলায় অডিটর পদকে দশম গ্রেডে উন্নীত করার পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু অর্থ বিভাগের একটি দুষ্টু চক্রের কারণে আর কেউ ১০ম গ্রেডে উন্নীত হতে পারেনি।
তিনি বলেন, গত ১২ আগস্ট অ্যাডিশনাল ডেপুটি কম্পট্রেলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (পার্সনেল) অর্থ বিভাগের সচিবের কাছে বিষয়টি সুরাহা করার জন্য তাগিদ দিয়ে একটি চিঠি দেন। পরের দিন ১৩ আগস্ট অর্থ বিভাগের প্রশাসন ও সমন্বয়ে অনু বিভাগের প্রশাসন-২ অধিশাখা আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের কাছে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা যাবে কি না সে বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য এক চিঠিতে অনুরোধ জানান। এরপর গত ২০ আগস্ট আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৫ থেকে অর্থ সচিবের কাছে মতামতসহ একটি চিঠি পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন। ওই মতামতে সিএজি কার্যালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তরগুলোর অন্যান্য অডিটর পদের বেতন গ্রেড ১১ থেকে ১০ উন্নীত করা যেতে পারে বলে মতামত প্রদান করে। পরে ২৫ আগস্ট অর্থ বিভাগের প্রশাসন ও সমন্বয় অনুবিভাগ থেকে ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের কাছে দেওয়া একটি চিঠিতে বলা হয়, কনটেম্প পিটিশনে অন্তর্ভুক্ত অডিটরসহ অডিটর পদকে গ্রেডে-১১ থেকে ১০-এ উন্নীতকরণের প্রস্তাবটির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে পাঠানো হলো। সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর কম্পট্রেলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয় থেকে অর্থ বিভাগের সচিবের কাছে সিএজি কার্যালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তরগুলোর অডিটর পদের বেতন গ্রেড ১১ থেকে ১০-এ উন্নীত করার জন্য বাস্তবায়ন আদেশ জারি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় বিশেষভাবে অনুরোধ করে। কিন্তু এতো দিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা জারি হয়নি।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমাদের এই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ১০ম গ্রেড (উন্নীতকরণ) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষকে শান্তিপ্রিয়ভাবে আহ্বান করা হলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। ফলে এ নিয়ে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের অডিটরদের মধ্যে চরম হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষের বিরাজ করছে। ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের জন্য দেশব্যাপী ঢাকাসহ সকল বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সকল অডিটর, সুপার এবং নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ অফিসাররা গত ৮ আগস্ট থেকে সেগুনবাগিচার হিসাব ভবন চত্বরে অনির্দিষ্টকালের জন্য গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। এ অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘোষিত কর্মসূচি চলমান থাকবে।
অর্থ সচিবের পদত্যাগ দাবি করে ডালিম বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসর বর্তমান অর্থ সচিব দেশের অডিট অ্যান্ড অ্যাক্যাউন্টস বিভাগকে অকার্যকর করার মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাই অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করছি। বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য অর্থ সচিব দায়ী এবং এর দায় তাকেই নিতে হবে। কারণ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠির ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের অডিটর পদটি ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত না করার জন্য বিভিন্ন তালবাহানা করছেন।
এমএইচএন/এসকেডি