অডিটরদের চাকরি ১০ম গ্রেডে উন্নীতের দাবি

অডিটরদের চাকরি ১০ম গ্রেডে উন্নীতের দাবি

কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) কার্যালয়ের আওতাধীন অডিটরদের গ্রেড বৈষম্য দূর করে ১১ থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা ও বর্তমান অর্থ সচিবসহ সিএজি কার্যালয়ে কর্মরত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন অডিটররা। 

কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) কার্যালয়ের আওতাধীন অডিটরদের গ্রেড বৈষম্য দূর করে ১১ থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা ও বর্তমান অর্থ সচিবসহ সিএজি কার্যালয়ে কর্মরত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন অডিটররা। 

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওই দাবি জানান তারা। 

অডিটরদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে আহমেদুর রহমান ডালিম বলেন, একই পদে দুই ধরনের বেতন থাকাটা কখনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এমন বিষয় কর্তৃপক্ষকেই নৈতিকভাবে এবং দায়িত্বশীল হয়ে সমাধান করা প্রয়োজন। ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করা রিট পিটিশনের রায় সিএজি ও অধীন অফিসের পদকে ১১তম গ্রেড থেকে দশম গ্রেডে উন্নত করার পক্ষে রায় দেন। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ শুধু ৬১ জন মামলার পক্ষভুক্ত রিট পিটিশনারকে ১১তম থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করার আদেশ প্রদান করে। পরে অন্যান্য অডিটররা ধারাবাহিক কনটেম্পট পিটিশন দায়ের করতে থাকে এবং আদালত সব মামলাতে অডিটর পদকে দশম গ্রেডে উন্নীত করার পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু অর্থ বিভাগের একটি দুষ্টুচক্রের কারণে আর কেউ দশম গ্রেডে উন্নীত হতে পারেনি। 

তিনি বলেন, গত ১২ আগস্ট অ্যাডিশনাল ডেপুটি কম্পট্রেলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (পার্সোনাল) অর্থ বিভাগের সচিবের কাছে বিষয়টি সুরাহা করার জন্য তাগিদ দিয়ে একটি চিঠি দেন। পরের দিন ১৩ আগস্ট অর্থ বিভাগের প্রশাসন ও সমন্বয়ে অনু বিভাগের প্রশাসন-২ অধিশাখা আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের কাছে দশম গ্রেডে উন্নীত করা যাবে কিনা, সে বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য এক চিঠিতে অনুরোধ জানান। এরপর গত ২০ আগস্ট আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৫ থেকে অর্থ সচিবের কাছে মতামতসহ একটি চিঠি পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন। ওই মতামতে সিএজি কার্যালয় ও এর অধীন দপ্তরগুলোর অন্যান্য অডিটর পদের বেতন গ্রেড ১১ থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা যেতে পারে বলে মতামত দেয়। পরে ২৫ আগস্ট অর্থ বিভাগের প্রশাসন ও সমন্বয় অনুবিভাগ থেকে ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের কাছে দেওয়া একটি চিঠিতে বলা হয়, কনটেম্প পিটিশনে অন্তর্ভুক্ত অডিটরসহ অডিটর পদকে গ্রেডে-১১ থেকে ১০-এ উন্নীতকরণের প্রস্তাবটির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে পাঠানো হলো। সর্বশেষ চলতি মাসের ৮ সেপ্টেম্বর কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয় থেকে অর্থ বিভাগের সচিবের কাছে সিএজি কার্যালয় ও এর অধীন দপ্তরগুলোর অডিটর পদের বেতন গ্রেড ১১ থেকে ১০-এ উন্নীত করার জন্য বাস্তবায়ন আদেশ জারি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় বিশেষভাবে অনুরোধ করে। কিন্তু এতো দিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা জারি হয়নি। 

তিনি আরও বলেন, আমরা নিজ অধিকার আদায়ের জন্য স্বেচ্ছায় অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে আমাদের অফিস চত্বরে একমাস ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছি এবং ডিপার্টমেন্টের সব পর্যায়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা কর্মচারীরা বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে অডিটরদের ন্যায্য অধিকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। কিন্তু আমারে এই অধিকার আদায়ের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির মঞ্চ ও প্যান্ডেল বিগত ১১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে একদল দুষ্কৃতকারী ভেঙে দেয় এবং আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিকে বিতর্কিত করার প্রয়াসে বহুমুখী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমাদের এই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ১০ম গ্রেড (উন্নীতকরণ) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষকে শান্তিপ্রিয়ভাবে আহ্বান করা হলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। ফলে এ নিয়ে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের অডিটরদের মধ্যে চরম হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষের বিরাজ করছে। ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের জন্য দেশব্যাপী ঢাকাসহ সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সব অডিটর, সুপার এবং নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ অফিসাররা গত ৮ আগস্ট থেকে সেগুনবাগিচার হিসাব ভবন চত্বরে অনির্দিষ্টকালের জন্য গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। এ অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘোষিত কর্মসূচি চলামান থাকবে।

এসময় অর্থ সচিবের পদত্যাগ দাবি করে আলিমুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসর বর্তমান অর্থ সচিব দেশের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগকে অকার্যকর করার মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত অর্থ সচিবের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করছি। বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য অর্থসচিব দায়ী এবং এর দায় তাকেই নিতে হবে। কারণ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠির ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের অডিটর পদটি ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত না করার জন্য বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা করছেন। এই অধিকার আদায়ে সারা দেশের সিএজির কাঠামোভুক্ত অডিটররা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। আমরা কোনো আন্দোলন চাই না, আন্দোলন আমাদের কাজ না। আমরা আমাদের কর্মে ফিরে যেতে চাই। আমরা আমাদের অধিকার আদালতের সিদ্ধান্তে অতি দ্রুত ‘অডিটর’ পদটি ১০ম গ্রেডে বাস্তবায়ন চাই। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছিলেন সিজিএ কার্যালয়ের অডিটর মো. মনিরুজ্জামান, মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, মো. আব্দুল আজিজ, আল আমিন,  মনজুরুল ইসলাম প্রমুখ।

ওএফএ/জেডএস

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *