৮৪ ভাগ নির্যাতিত হয় আবাসিক হলে, ৮০ ভাগই শিবির-ছাত্রদল সন্দেহে

৮৪ ভাগ নির্যাতিত হয় আবাসিক হলে, ৮০ ভাগই শিবির-ছাত্রদল সন্দেহে

গত ১৫ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা। এর মধ্যে প্রায় ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই আবাসিক হলে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর এদের মধ্যে ৮০ ভাগ শিক্ষার্থীদের ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন সন্দেহে নির্যাতন করা হয়েছে।

গত ১৫ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা। এর মধ্যে প্রায় ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই আবাসিক হলে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর এদের মধ্যে ৮০ ভাগ শিক্ষার্থীদের ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন সন্দেহে নির্যাতন করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘সোচ্চার – টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ’ এসব তথ্য জানিয়েছে।

সোমবার (৭ অক্টোবর) রাত ৮টায় বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের শাহাদাত বার্ষিকী এবং নির্যাতন বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে ওয়েবিনার ও অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১০-২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে নির্যাতিত ৫০ জন শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে তারা উল্লেখ করেছেন, প্রায় ৮৪ শতাংশ নির্যাতনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ঘটেছে, যেখানে ভুক্তভোগীদের নির্দিষ্ট কক্ষে ডেকে এনে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। ১০ শতাংশ নির্যাতন শুরু হয়েছে ক্যাম্পাসের কোনো স্থানে এবং শেষ হয়েছে আবাসিক হলের নির্দিষ্ট নির্যাতনের কক্ষে। ৬ শতাংশের ক্ষেত্রে নির্যাতন শুরু এবং শেষ হয়েছে ক্যাম্পাসেই।

সাক্ষাৎকার দেওয়া নির্যাতিত ৫০ জনের মধ্যে ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) এবং ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)।

অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-গোপালগঞ্জের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এশিয়া প্যাসিফিক ও চট্টগ্রামের আইআইইউসিও রয়েছে।

সবচেয়ে বেশি নির্যাতন হয়েছে আগস্ট মাসে

সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে গত আগস্ট মাসে। সোচ্চারের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ১৫ই আগস্টকে কেন্দ্র করে অতি রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে আগস্ট মাসে নির্যাতনের ঘটনা বেশি হয়ে থাকতে পারে। আর এসব নির্যাতিতদের মধ্যে ৮০ শতাংশ সাধারণ ছাত্র যাদেরকে শিবির বা ছাত্রদল সন্দেহে বা অন্যান্য কারণে নির্যাতন করা হয়েছে। অন্যান্যদের মধ্যে ১৪ শতাংশ ছাত্রশিবিরের কর্মী, দুই শতাংশ ছাত্রদল, দুই শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরের সাধারণ জনতা এবং এছাড়া দুই শতাংশ ছাত্রলীগ কর্মী দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নির্যাতিত হয়েছেন। তবে এই ৫০ জন নির্যাতিতদের সবাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন।

গবেষণায় নির্যাতনের ২২টি কারণ বের করেছে সোচ্চার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে ব্যর্থতা, রাতের গেস্টরুমের বাধ্যতামূলক মিটিংয়ে অনুপস্থিত থাকা, সিনিয়র নেতাদের যথেষ্ট সম্মান ও সমীহ প্রদর্শনে ব্যর্থ হওয়া, ইসলামিক পেজ বা বিরোধী দল বা মতের পেজে লাইক দেওয়া, ফেসবুকে ইসলামিক পোস্ট দেওয়া বা ওয়াজ শেয়ার করা, প্রধানমন্ত্রী, তার পিতা, পরিবার বা ভারত বিরোধী পোস্ট দেওয়ার কারণে, সামাজিক মাধ্যমে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করা, হিজাব ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা নিয়ে সমালোচনা করা, ব্যক্তিগত বিরোধ ইত্যাদি।

শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধে ১০ সুপারিশ

সোচ্চারের রিপোর্টটিতে ক্যাম্পাস নির্যাতনের মাত্রা ও ধরণ, নির্যাতনের কারণ, নির্যাতন-পরবর্তী ভিক্টিমদের ভোগান্তি এবং নির্যাতনের বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে ১০ দফা সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হচ্ছে —

সরকারি কমিশন গঠন করে তদন্ত করা,  বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি ও প্রাতিষ্ঠানিক শাস্তি নিশ্চিত করা, ভিক্টিম সাপোর্ট সেল গঠন, বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট বিধান প্রণয়ন করা, প্রথম বর্ষের ছাত্রদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বলয়, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির জন্য বিধিমালা তৈরি করা, ছাত্ররাজনীতির সংস্কার ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা, হলগুলোকে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করা, ‘ইনক্লুসিভ ক্যাম্পাস’ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, আবাসন সংকটের সমাধান করা এবং ৭ অক্টোবর ক্যাম্পাস নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালন করা।

ওয়েবিনারে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকিব, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চোধুরী, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সভাপতি অধ্যাপক ড. সি আর আবরার, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার সংগঠন এইচআরএসএসের প্রধান উপদেষ্টা নূর খান লিটন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শেহরিন আমিন ভূঁইয়া, মানবাধিকার আইনজীবী ও সোচ্চারের লিগ্যাল ডিরেক্টর ব্যারিস্টার শাইখ মাহদি।

আরএইচটি/এমজে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *