২২ বছর ধরে বৈষম্যের শিকার, ন্যায়বিচার চান দুদক কর্মচারীরা

২২ বছর ধরে বৈষম্যের শিকার, ন্যায়বিচার চান দুদক কর্মচারীরা

সিরাজউদ্দৌলা (ছদ্মনাম) ২০০২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। ২২ বছরের বেশি সময় ধরে চাকরি করলেও এখন পর্যন্ত পদোন্নতি জোটেনি। অথচ দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তসহ সব কাজ করার সামর্থ্য রয়েছে তার। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্স। এমনকি দুদকের নেওয়া পদোন্নতি পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ তিনি। আইন ও বিধি অনুসারে সময়মতো পদোন্নতি হলে আজ তার উপসহকারী পরিচালক বা সহকারী পরিচালক হওয়ার কথা।

সিরাজউদ্দৌলা (ছদ্মনাম) ২০০২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। ২২ বছরের বেশি সময় ধরে চাকরি করলেও এখন পর্যন্ত পদোন্নতি জোটেনি। অথচ দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তসহ সব কাজ করার সামর্থ্য রয়েছে তার। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্স। এমনকি দুদকের নেওয়া পদোন্নতি পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ তিনি। আইন ও বিধি অনুসারে সময়মতো পদোন্নতি হলে আজ তার উপসহকারী পরিচালক বা সহকারী পরিচালক হওয়ার কথা।

তার ভাষায়, আজ যদি পুলিশ বিভাগে কাজ করতাম, তাহলে পুলিশের ওসি থাকার সুযোগ থাকতো। আমার ব্যাচমেট, বন্ধুবান্ধব বর্তমানে এমন পদে কর্মরত রয়েছে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আমি এখনো ‘কনস্টেবলই’ রয়ে গেলাম।

বর্তমানে দুদকে ২০ থেকে ২২ বছর ধরে কনস্টেবল পদে কাজ করছেন এমন ৫৬ জনের মতো কর্মচারী রয়েছেন। বিগত সরকারের আমলে যাদের কোনও পদোন্নতি হয়নি।

চাকরিবিধি অনুযায়ী— কনস্টেবল পদে ৮ বছর কাজ করার পর কোনো কর্মচারী উপসহকারী পরিদর্শক, পরবর্তীতে ৫ বছর কর্মরত থেকে সহকারী পরিদর্শক, আরও ৭ বছর পর উপসহকারী পরিচালক এবং পরবর্তী ৫ বছর পর সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করার কথা।

শুধু ১৭তম গ্রেডের কনস্টেবল পদধারী কর্মচারী নয়, ১৬তম গ্রেডের ডাটা এন্ট্রি ও কন্ট্রোল অপারেটর, ১৪তম গ্রেডের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং উচ্চমান সহকারী ও কোর্ট সহকারী, ১৮তম গ্রেডের ডেসপাস রাইডার, ২০তম গ্রেডের নিরাপত্তারক্ষী ও অফিস সহায়ক পদের তিন শতাধিক কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরেই পদোন্নতি সংক্রান্ত বৈষম্যে ভুগছেন। কয়েক বছর ধরে আবেদন-নিবেদন করলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ কর্মচারীদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একাধিক কর্মচারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সচিবালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়,  নির্বাচন কমিশন,  সরকারি কর্ম কমিশনসহ অন্যান্য কমিশন কিংবা সংস্থায় ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের ৫ বা ৭ বছর পর পর পরবর্তী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ১৪ থেকে ১৬ গ্রেডের কর্মচারীরাও ৫ থেকে ৬ বছর পর ১০ম গ্রেডে পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। কিন্তু অন্যান্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার মতো দুদক একটি প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এখানের কর্মচারীদের পদোন্নতির ব্যবস্থা নেই।

তাদের দাবি, দুদকে ১৭ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীদের পরবর্তী পদে পদোন্নতির জন্য ১৫ থেকে ২২ বছর সময় লেগে যায়। ১৪ থেকে ১৬ গ্রেডের কর্মচারীদের ১০ গ্রেডে যেতে অন্তত দুটি পদোন্নতির প্রয়োজন হয়, যেখানে সময় লেগে যায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর। এমনকি অনেক কর্মচারীকে কোনো পদোন্নতি ছাড়াই চাকরি জীবন শেষ করে পেনশনে চলে যেতে হয়েছে।

বিষয়টিকে অত্যন্ত অমানবিক উল্লেখ করে এর সমাধান চেয়েছেন দুদকের পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মচারীরা।

ইতোমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের স্বীকার এমন ৯ জন উপপরিচালককে পদোন্নতি দিয়ে পরিচালক করা হয়েছে। গত ৬ আগস্ট ২৪ জন সহকারী পরিচালককে পদোন্নতি দিয়ে উপপরিচালক করা হয়। কর্মকর্তা পর্যা‌য়ে পদোন্নতির সুবাতাস দেখা গেলেও কর্মচারীদের বড় অংশই বঞ্চিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুদক চেয়ারম্যান ও সচিব বরাবর কর্মচারীরা পদোন্নতি সংক্রান্ত একাধিক আবেদনও করেছেন। কিন্তু অর্গানোগ্রামে পদ খালি নেই— এমন অজুহাত দিয়ে কর্মচারীদের বছরের পর বছর পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রাখা হয়। যা স্পষ্টত বৈষম্য ও অবিচার বলে মনে করছেন দুদকের কর্মচারীরা।

দুদকের একটা অর্গানোগ্রাম বিষয়ক কমিটি রয়েছে যে কমিটি পদোন্নতি সংক্রান্ত বৈষম্য দূরীকরণসহ অর্গানোগ্রাম সংশোধনের ব্যবস্থা করে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে কর্মচারীদের করা আবেদন উক্ত কমিটির নিকট পাঠানো হলেও অদৃশ্য কারণে আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

দুদক কর্মচারীদের দাবির বিষয়ে জানতে সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (ডুসা) বর্তমান সভাপতি মো. নাজমুচ্ছায়াদাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডুসার পক্ষ থেকে আমাদের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে রয়েছি। তারা যেন ন্যায্য দাবি অনুযায়ী পদোন্নতি পান, সেই লক্ষ্যে আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু করা সম্ভব সব করার চেষ্টা করছি।

দুদকের কর্মচারীদের দাবিগুলো মধ্যে রয়েছে—

১.বাংলাদেশ সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশনের ন্যায় পাঁচ বছরের মধ্যে কর্মচারীদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে;

২. ১৪ তম ও ১৬ তম গ্রেডের পদ হতে ১০ম গ্রেডে সচিবালয়ের ন্যায় পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে;

৩. কমিশনের বিদ্যমান অর্গানোগ্রাম সংশোধন করে পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে;

৪. প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী, সাঁট লিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর (তৃতীয় শ্রেণীর পদ) পদ বিলুপ্ত করে দ্বিতীয় শ্রেণিতে অর্থাৎ দশম গ্রেডের (উপসহকারী পরিচালক/কোর্ট পরিদর্শক/প্রশাসনিক কর্মকর্তা) পদের পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

কর্মচারীদের আবেদন সূত্রে জানা যায়, অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী দুদকে ১১ থেকে ১৪তম পর্যন্ত মোট মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ৩৫৫টি। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৩০১ জন। বাকি ৫৪টি পদ শূন্য। অন্যদিকে ১০তম গ্রেডের মোট মঞ্জুরিকৃত পদ ৪০৭টি এবং বর্তমানে শূন্য রয়েছে ১৪৩টি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সব দপ্তরের এসব পদগুলোর নাম ও স্কেল পরিবর্তনের সার্বিক কাজ চলমান রয়েছে।

সংস্থার মর্যাদা অনুযায়ী— ১১ থেকে ১৪ তম গ্রেডভুক্ত পদধারী কর্মচারীরা অনেক আগেই ১০তম গ্রেড পাওয়ার অধিকারী হন, কিন্তু দুদকে এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই কর্মচারীদের দাবি ১১ থেকে ১৪তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি যোগ্য পদগুলো বিলুপ্ত করে উপসহকারী পরিচালক (গ্রেড-১০) পদে পদোন্নতির বিধান করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে দুদকের কোনো আর্থিক ক্ষতি হবে না। এতে দুদকের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আরও সুদৃঢ় হবে।

আরএম/এমজে

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *