সেই পঁচাত্তর পরবর্তী পরিস্থিতিই ফিরে এসেছে আওয়ামী লীগে

সেই পঁচাত্তর পরবর্তী পরিস্থিতিই ফিরে এসেছে আওয়ামী লীগে

ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর চরম সংকটে পড়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতা হারানোর পর দলটির নেতাদের অনেকেই আত্মগোপন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে ভারতে কিংবা অন্য দেশে চলে গেছেন। এছাড়া অনেকে আটক হয়ে কারাগারে আছেন। এর আগেও ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এমন বেকায়দায় পড়েছিল দলটি।

ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর চরম সংকটে পড়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতা হারানোর পর দলটির নেতাদের অনেকেই আত্মগোপন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে ভারতে কিংবা অন্য দেশে চলে গেছেন। এছাড়া অনেকে আটক হয়ে কারাগারে আছেন। এর আগেও ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এমন বেকায়দায় পড়েছিল দলটি।

বিশ্লেষকরা বলছেন ‘পতন ও সংকটের ধরন ভিন্ন’ হলেও এবারের সংকট দলটিকে পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের মতো ‘ছন্নছাড়া’ অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।

১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্টের পরের পরিস্থিতি

পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে যখন আক্রমণ হয়, তখন কোনো ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই পুরো বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে হত্যাকারীরা।

শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় তখন বেঁচে গিয়েছিলেন।

এ ঘটনায় কার্যত তছনছ হয়ে পড়েছিল আওয়ামী লীগ। এর জের ধরে পরে তখন সারাদেশে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে দলটি।

তখন সে বাড়ির নিচতলায় একটি কক্ষে কর্মরত ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী এ এফ এম মুহিতুল ইসলাম। মুহিতুল ইসলাম ২০১৬ সালে মারা যান। ১৯৯৬ সালে তিনি শেখ মুজিব হত্যা মামলার বাদী হয়েছিলেন।

২০১০ সালে এক সাক্ষাৎকারে মুহিতুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘একজন রাষ্ট্রপতির বাড়িতে যে ধরনের নিরাপত্তা থাকা দরকার সেটি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে ছিল না। তাছাড়া রাষ্ট্রপতির বাড়িতে আক্রমণের পরেও কোনো তরফ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা আসেনি।’

হত্যাকাণ্ডের পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত সেনাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তৎকালীন আওয়ামী লীগেরই একজন সিনিয়র নেতা এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্য খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন।

এরপর আওয়ামী লীগের যারা মোশতাক সরকারকে সমর্থন করেননি তারা অনেকে আত্মগোপনে যান। অনেক নেতা পরবর্তীতে আটক হয়ে দীর্ঘসময় ধরে কারাভোগ করেন। অনেকে ভারতে চলে যান।

পরবর্তী আব্দুল কাদের সিদ্দিকীসহ কেউ কেউ আবার প্রতিরোধ তৈরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

সে বছর ১৫ই অগাস্টের আগে শেখ মুজিবুর রহমান কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিলেন।

পরে ১৯৭৬ সালে রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধনের সুযোগ পেলে তখন আবার আওয়ামী লীগ নামেই দলটি নিবন্ধিত হয়ে রাজনীতি শুরু করেছিল।

রাজনৈতিক লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ নামে দলটি আবার ফিরে আসলো ১৯৭৬ সালে। তবে শেখ মুজিব ছাড়া দ্বিতীয় কোনো নেতা তৈরি না হওয়ায় তার হত্যাকাণ্ডের পর দলের মধ্যে দলাদলি শুরু হয়। এক পর্যায়ে দল কয়েক ভাগে ভাগ হলো। এরপর ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (মালেক) ৩৯টি এবং আওয়ামী লীগ (মিজান) দুটি আসন লাভ করে। আওয়ামী লীগের একটি অংশ আবার বাকশালকেও সক্রিয় করে।

তিনি বলেন, এর আগেই দেওয়ান ফরিদ গাজী এবং আব্দুল মালেক উকিলের নেতৃত্বে দুটি অংশ হয়ে যায় আওয়ামী লীগের। এর বাইরে দল থেকে বেরিয়ে আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ এবং এমএজি ওসমানি আলাদা দল গঠন করেছিলেন।

‘শেখ মুজিব রক্ষীবাহিনী এবং অন্য বাহিনীর ওপর নির্ভর করে দেশ শাসন করেছিলেন। দলের সব ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়েছিলেন। ফলে দল হয়েছিলো মুজিব নির্ভর। এ কারণে ১৫ই অগাস্টের পর দলকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ১৫ অগাস্ট পরবর্তী সরকার পরবর্তীকালে এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত হবার সুযোগ দিয়েছিল।

এরপর দল টেকানোর জন্য দলের বিবদমান নেতারাই ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি করে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন। এরপর থেকে এ পর্যন্ত শেখ হাসিনাই দলের সভাপতি পদে আছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ

Visit Source Page

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *