সূফী-দরবেশ শব্দটির ব্যাপক প্রচলন রয়েছে সমাজে। সাধারণত সুফী-দরবেশ মনে করা হয় যারা পার্থিব সব লোভ-লালসা ছেড়ে পরকালীন জীবনের ভাবনায় মগ্ন থাকেন তাদের।
সূফী-দরবেশ শব্দটির ব্যাপক প্রচলন রয়েছে সমাজে। সাধারণত সুফী-দরবেশ মনে করা হয় যারা পার্থিব সব লোভ-লালসা ছেড়ে পরকালীন জীবনের ভাবনায় মগ্ন থাকেন তাদের।
সূফী শব্দটি সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে, এটি আরবি صفاء ধাতু থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ পবিত্রতা। যাদের অন্তর-বাহির পবিত্র তাদের সূফী বলা হয়।
কেউ কেউ বলেছেন, আহলুস সুফফাহ শব্দ থেকে সুফী শব্দের উদ্ভব। তাদের মতে, যে মুসলমানরা ইসলামের প্রথম যুগে মসজিদের বাইরে অন্যের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা গ্রহণ করতেন তারা সুফী।
সুফী শব্দটি নিয়ে অনেকে আবার বলেছেন, যে নিস্পৃহ ও জ্ঞানী মুসলমানেরা ধর্মের দর্শন সম্মত ব্যাখা দিয়ে নিজেদের জীবনকে সেভাবে পরিচালনা করেছেন তাদেরকে সুফী বলা হয়।
সুফী বিষয়ে কারো কারো মতামত হলো— সুফী শব্দটি صوف(পশম) থেকে উদগত হয়েছে। কারণ, সুফীরা সহজ সাধারণ জীবন যাপনের অংশ হিসাবে পশমী কাপড় পরিধান করতেন।
অর্থাৎ, যে ব্যক্তিরা ইসলামের প্রাথমিক যুগে পশমের জামা পরে সংসার জীবন থেকে একেবারে নির্লিপ্ত থাকার চেষ্টা করতেন, তারাই সুফী বা পশমের জামা পরিধানকারী।
বাস্তবিক অর্থেই ইসলামের প্রাথমিক যুগে পশমী পোশাক— অনাড়ম্বর, বিলাসহীনতা ও অনাসক্তির প্রতীক ছিল। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর রা. পশমী জুব্বাহ বা দীর্ঘ জামা পরিধান করতেন।
খুলাফায়ে রাশেদীন অর্থাৎ, অনুসরণীয় খলিফাদের পর ইসলামে যখন ধীরে ধীরে বিলাসিতা, আড়ম্বর ও সংসার আসক্তি বেড়ে চললো তখন একদল মানুষ আড়ম্বর ও আসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। এবং তারা নিজেদেরকে সব ধরনের লালসা ও মোহ থেকে মুক্ত রেখে অন্যদের সামনে একটি আদর্শ দাঁড় করালেন। তারাই সুফী বলে পরিচিতি লাভ করেন।
আরবি সুফী শব্দটির ফারসি প্রতিশব্দ হলো দরবেশ। তুর্কিতেও এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, যারা অহংকার ও নফসের বিভ্রম পরিত্যাগ করে আল্লাহর কাছে পৌঁছাকে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন তারাই দরবেশ বা সুফী। সমাজের এই শ্রেণীর মানুষেরা অন্যদের মাঝে ভালোবাসা বিলিয়ে থাকেন।
মানুষের মাঝে অজানাকে জানার আগ্রহ আজন্ম। অজ্ঞাত বিষয়কে খোঁজা ও অনুসন্ধানের ইচ্ছা মানুষের মাঝে সবসময় থাকে। এই অজানাকে জানার আগ্রহের সঙ্গে সুফীবাদের একটি যোগ সূত্র পাওয়া যায়। পৃথিবীতে যত সুফী, দরবেশ, সাধুর আবির্ভাব ঘটেছে তারা সবাই অজানার সন্ধানে ছুটেছেন। আজানাকে জানার চেষ্টা করেছে। তবে এই অজানার পেছনে ছোটার সঙ্গে সঙ্গে নিজের আত্মশুদ্ধি কামনা করতেন তারা। তাদের নিজেকে পরিশুদ্ধির এই ধারণা কোরআন থেকে পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—
আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫১)
যারা সূফীবাদে নিজের জীবন ধারণ করতে চান তাদেরকে চারটি বিষয় নিজের মধ্যে ধারণ করতে হয়। সেগুলো হলো—
১. অদৃষ্ট বস্তুতে বিশ্বাস বা ঈমান।২. অদৃষ্ট বস্তুর অনুসন্ধান বা তলব।৩. অদৃষ্ট বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানলাভ বা ইরফান।৪. অদৃষ্ট বস্তুতে বিলীন বা ফনা ফীললাহ।
(বঙ্গে স্বূফী-প্রভাব, ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক, ২৪)